বীজের সংকট ॥ চাষাবাদ ব্যাহত হবার আশঙ্কা

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা সহ দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় এবারের বোরো মওসুমে দুই লাখ হেক্টর জমির আবাদের জন্য চাহিদার তুলনায় ৮৫ শতাংশ সরকারি বীজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গেল মওসুমে কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় কৃষক বোরো আবাদে ঝুঁকে পড়লেও বিএডিসি বীজের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। একই সাথে সরকারি বীজের মূল্য গেল বারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল। এসব জেলায় ৬ লাখ কৃষক পরিবার বোরো আবাদের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সূত্র জানায়, গেল মওসুমে এ অঞ্চলের বোরো চাষিরা কাঙ্খিত মূল্য পায়। বস্তা প্রতি চারশ’ টাকা লাভ হয়। সেই সঙ্গে গো-খাদ্য ও মাছের খাবারের চাহিদা পূরণ হয়। মৎস্য খামার পরিবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের ভূমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে প্রতি বছর। বাগদা ও গলদা চিংড়ির লোকসান মেটাতে বিকল্প হিসেবে বোরো চাষ করছে কৃষক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারে খুলনায় ৫২ হাজার, সাতক্ষীরায় ৭৪ হাজার, বাগেরহাটে ৫৩ হাজার এবং নড়াইলে ৪২ হাজার হেক্টর বোরো আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বীজ তলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ফুলতলার গুদাম থেকে ট্রাক বোঝাই হয়ে বীজ গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে।
বিএডিসি (বীজ)-এর উপ-পরিচালক মো. লিয়াকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দু’হাজার একশ’ ২৭ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নানাজাতের মধ্যে রয়েছে বিরি-১৬, ২৬, ৩২, বিআর-২৯, ৪৭, বিনা-১০, ১৪ ইত্যাদি। মূল্য সম্পর্কে তিনি জানান, গত বারের তুলনায় মূল্য বেড়েছে। বিরি-১৬, ২৬, ২৮, ২৯ প্রতি কেজি ৩৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ভিত্তি ৪৫ টাকার পরিবর্তে ৫৫ টাকা, সুগন্ধি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৬৫ টাকা ও ভিত্তি সুগন্ধি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলার ৩৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে বীজ বিক্রি চলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চলের সহকারী পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সিলেটে বন্যার কারণে বিএডিসি’র উৎপাদিত বীজের সিংহভাগ সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া কোনো না কোনো কারণে সরকারি বীজের ঘাটতি থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করবে। বাকী চাহিদা পূরণ হবে বিভিন্ন কোম্পানির হাই্িব্রড জাত ও কৃষকের ঘরে সংরক্ষিত বীজ দিয়ে। ব্লাস্টের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবীর জানান, গেল মওসুমে ধান বেশি পাওয়ায় এবার তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে জেলায় বোরোর আবাদ হবে। গেলবার ৫২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ডুমুরিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, দিঘলিয়া ও পাইকগাছায় আবাদী জমির পরিমাণ বেশি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আতিকুন নাহার জানান, ২০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের জন্য ৬৭ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ করা হয়েছে। গেল বছর হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক ধান উৎপাদন হওয়ায় লাভের আশায় কৃষকরা এবার আবাদে ঝুঁকেছে। এখানে বিরি-২৮, ৫৮ ও ৬৭ জাতের চাহিদা বেশি।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৯ জন ডিলারের জন্য ৩৮ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ উপজেলার কপিলমুনি, হরিঢালী, রাড়ুলি, গদাইপুর ও চাঁদখালী ইউনিয়নে ২৮শ’ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এ উপজেলার মালোত গ্রামের চাষি মোশাররফ হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে এ মওসুমে আবাদ করবেন তিনি। তার আগ্রহ বিআর-২৮ জাতের উপর। পার্শ্ববর্তী বারুইডাঙ্গা, প্রতাপকাটি, শ্রীমানপুর, ভৈরবঘাটা ও কাজী মুসা গ্রামের চাষিরা এখনো সরকারি বীজ পাইনি।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা

শাহ জাহান আলী মিটন , সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরা   জেলা  জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সাতক্ষীরা জেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।