ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: কলকাতায় আটক আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) তিন সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধার করা ডায়েরিতে বাংলাদেশি এক ব্লগারের নাম পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবিটির পরবর্তী টার্গেট হিসেবে তার নামটি হয়তো লিখা হয়েছিল। ভারতীয় সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান ওই ব্লগার। তিনি আরও জানান, কলকাতায় আটক জঙ্গিদের ডায়েরিতে নাম থাকায় তার নিরাপত্তা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে তাকে সিকিউরিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্যও ডাকা হয়েছিল। ডিএমপিতে ওই ব্লগারকে ডাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও ঠিক কী কারণে তার নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে, তা পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বেশ কয়েকজন ব্লগারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনটি।
গত মঙ্গলবার কলকাতা থেকে দুই বাংলাদেশিসহ তিন জনকে আটক করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। আটককৃতরা হলো—সুনামগঞ্জের সামসেদ মিঞা, খুলনার রিয়াজুল ইসলাম (২৫) ও ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার মনতোষ দে। আটককৃতদের বুধবার (২২ নভেম্বর) ব্যাংকশাল আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে এসটিএফ৷ বিচারক রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে সম্প্রতি কোনও ধরনের হুমকি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এবিটি’র সদস্যদের ডায়েরিতে থাকা ব্লগার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লেখালেখি ও পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডের কারণে নিয়মিতই হুমকি ও আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সিকিউরিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য ডাকা হয়েছিল।’
কলকাতায় এবিটি সদস্যদের আটকের পর মঙ্গলবার এসটিএফ-এর ডেপুটি কমিশনার মুরলিধর শর্মা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে দুই/তিন জন জঙ্গি পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। গত তিন দিন আগে আমরা এই তিন জন আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত হই। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কলকাতা রেল স্টেশন থেকে এই তিন জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য।’ তিনি আরও বলেন, আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে ২টি আদার কার্ড, এটিএম কার্ড, চারটি মোবাইল, ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, এবিটি ও আল-কায়েদার লিফটলেট জব্দ করা হয়েছে।’
অস্ত্র কেনার জন্য তারা বের হয়েছিল বলে জানায় এসটিএফ। ভারতীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের কাছ থেকে লিফটলেট ছাড়াও ডায়েরি ও কিছু নথি পাওয়া গেছে। ডায়েরিতের বাংলাদেশি একজন ব্লগারের নাম ও নথিতে কলকাতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান ওই বাংলাদেশি ব্লগার। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত কলকাতায় জঙ্গিরা সপ্তাহখানেক আগে ধরা পড়েছে। পরবর্তী সময়ে দুই দেশের পুলিশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে প্রেসকে জানিয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে কিছু জানার আগে ডিএমপি থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে আমার সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলতে ডেকেছিলেন। সেটা ছিল আরও সপ্তাহখানেক আগে। আর আজ ভারতীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমার নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যের সঙ্গে থাকা ডায়েরিতে রয়েছে।’
প্রায় হুমকির মধ্যে তিনি রয়েছেন উল্লেখ করে এই ব্লগার বলেন, ‘প্রায় জঙ্গিগোষ্ঠীর হুমকিতে থাকি। অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর আমার বাবা এসে আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেন। তার ধারণা, তিনি থাকলে আমাকে কেউ মারবে না।’
জঙ্গিদের ডায়েরিতে নাম থাকা ব্লগারকে তার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা। তবে ঠিক কী কারণে তার নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে, তা পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়নি। তবে, ভারতে আটক এবিটি সদস্যদের বিষয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে জানান ডিএমপির কর্মকর্তারা।তারা জানান, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।বাংলা ট্রিবিউন