স্টাফ রিপোর্টার : ‘আমার কাছে তথ্য আছে-আওয়ামী লীগই জিতবে’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগেও তিনি একইরকম জরীপ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, আমার কাছে তথ্য আছে-আওয়ামী লীগই জিতবে। তাহলে এবারেও তার বক্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আরেকটা নীল নকশার নির্বাচনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেছেন-তিনি মেশিন দিয়ে জরিপ চালিয়েছেন। তিনি জনগণের মধ্যে জরিপ চালাননি। তথ্য প্রযু্িক্ত উপদেষ্টা যে মেশিনের কথা বলছেন সেটি ‘আওয়ামী মেশিন’। সেই মেশিনের জরিপে জনগণের প্রকৃত মনোভাব ফুটে ওঠেনা, মেশিনে শুধু আওয়ামী মনোভাবই ফুটে ওঠে। তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার সেই মেশিন বাকশালী যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে তার সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল তার পরিপন্থী। এমনকি সংবিধানেরও পরিপন্থী। এই শৃঙ্খলাবিধি সংবিধানের ২২ অুনচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ২২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, বিচার বিভাগ হবে একটি স্বাধীন অঙ্গ এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথকীকরণ করা হবে। সেজন্য আইনও পাস করা হয়েছে। আজকে এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বলেন, জারি করা বিধিমালায় বলা হয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ‘নিয়োগকারী’ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি এবং আইন মন্ত্রণালয়কে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবেও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিধির ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিঘিœত হবে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিচারিক আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরকারি গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য নির্বাহী বিভাগ তাদেরকে নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এর ফলে সরকারের হুকুমেই নি¤œ আদালতের বিচারকদের চলতে হবে। বিচারকরা সবসময় আতঙ্কে থাকবে। চাকরি রক্ষার্থে নির্বাহী বিভাগের সকল অন্যায় আবদার শুনতে ও পালন করতে হবে। সুবিচার-ন্যায়বিচার কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবে।
জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে উনি যা বলেছেন, সেটি একটি ‘টপ ডেমোক্রেটিক কান্ট্রিতে’ বসবাসকারী ব্যক্তির ওপর সেদেশের সংস্কৃতির যে প্রতিফলন ঘটে, সেটি না হয়ে বরং টুঙ্গিপাড়ার সংস্কৃতির প্রতিফলনই ফুটে ওঠেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তথ্য ও প্রযুুক্তি উপদেষ্টার তথ্যটা হলো-ষড়যন্ত্র ও ভয়ংকর নীল নকশা। তার শিষ্টাচারহীন এধরনের বক্তব্যের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী চরিত্র দান করে ক্ষমতা-বিলাসে বিভোর থাকা ক্ষমতাসীন নেতাদের অশুভ ইচ্ছার বারবার বাস্তবায়ন হবে না। এবারে জোর করে কিছু করতে গেলে জনগণ সেটির উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
রিজভী বলেন, দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলার হিড়িক শুরু করেছে ভোটারবিহীন সরকার। বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ২০টিরও বেশি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্পষ্টভাষী ও বাকস্বাধীনতার পক্ষের আপোষহীন কলমসৈনিক মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন করা যেন আওয়ামী সরকারের আনন্দের বিষয়। মাহমুদুর রহমানকে কোনভাবেই বিপর্যস্ত করতে না পেরে সরকার তাঁর ওপর চালাচ্ছে নির্দয় আক্রমণ। সারাদেশের সরকারি দলের চ্যালা চামুন্ডাদের দিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করানো হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই এধরনের মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলেিগর কমিটির গঠনের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, ছাত্রলীগ ‘স্কুল পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা’ করবে এই ঘোষণার পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছে। দু’দিন আগে মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছে শাবাব ও মাহী নামে দুই স্কুল শিক্ষার্থী। এদের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। ক্ষমতাসীনরা দেশব্যাপী সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য স্কুল পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সুশিক্ষা, জ্ঞান, সুরুচি, গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধ এবং পরমতসহিঞ্চুতা বিরোধী একটি রাজনৈতিক শক্তি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সুস্থ জীবনযাপনে যাতে উদ্বুদ্ধ হতে না পারে সেজন্যই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে এখন মাধ্যমিক পর্যায়েও ছাত্রলীগের কমিটির নামে দলীয় সন্ত্রাসী দল তৈরি করছে। এটি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার মাধ্যমে গোটা জাতিকে পঙ্গু করার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমি এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নামে দেশব্যাপী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গঠনের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
Check Also
ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নদীসহ ৪ জন কারাগারে
নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শামসুন্নাহার হল শাখার সাবেক …