ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা: মিথ্যুক, ভণ্ড, প্রতারকরা বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। এই ফ্রন্ট মানুষের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবে।শুক্রবার বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।মানবতার চূড়ান্ত অবমাননা চলছে মন্তব্য করে মান্না বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। সরকারের মন্ত্রী-এমপি আর নেতাদের নেতৃত্বে চলছে ব্যাংক লুট। আর রাজপথের বিরোধী দল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তারা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের দাবির পক্ষে মাঠে নামছে না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই।
মানবতার মা প্রহসন করছেন: মান্না
ঢাকা: মানবতার মা নিজের মানবতার সাথে প্রহসন করছেন উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্রিটেনেও মানুষ গুম হয়। সেসব দেশে সরকারের বিরুদ্ধে, দেশের আইনশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠে না। অথচ আমাদের দেশে গুম হওয়া স্বজনদের পরিবার সরাসরি রাষ্ট্র বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান দাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সন্ধান দাবি করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগই নেয় না বলে মন্তব্য করে মান্না বলেন, অভিযোগ নিলেও সেগুলোর তদন্ত কাজ এগোয়নি। গণমাধ্যমে এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও পুলিশ পাত্তা দেয় না।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক সি আর আবরার, নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন, বড় বোন আখি, ছোটবোন সানজিদা ইসলাম তুলি, নিখোঁজ পারভেজ হোসেনের মেয়ে রিদিসহ আরও অনেকে।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সন্তানহারা মায়েদের ৪ বছর অতিবাহিত, অপেক্ষার শেষ কোথায়? মায়ের ডাক- সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেন স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় মান্না তার বক্তব্যে বলেন, আমি নিজেই গুমের শিকার হয়েছিলাম। গুম নিয়ে বহু কথা বলার পরেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের কোনো সন্ধান দেওয়া হচ্ছে না। এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ছয় মাসে ৫২ জন গুম হয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৮৭ জন।
মানবতার মা নিজের মানবতার সাথে প্রহসন করছেন উল্লেখ করে মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্রিটেনেও মানুষ গুম হয়। সেসব দেশে সরকারের বিরুদ্ধে, দেশের আইনশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠে না। অথচ আমাদের দেশে গুম হওয়া স্বজনদের পরিবার সরাসরি রাষ্ট্র বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
মান্না বলেন, আমার ভয় হয়, কোনদিন আবার কোন এক মন্ত্রী বলে ফেলেন যে গুম, অপহরণ, ধর্ষণ আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। দেশ যেন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। মানবতার মাতা যেন কানের ভেতর তুলা দিয়েছেন। তার কানে তাই কোন কথা ঢোকে না। মারা গেলে মানুষের জানাজা করা যায়, দোয়া করা যায়, কিন্তু যারা বছরের পর বছর নিখোঁজ রয়েছে, গুম হয়েছে তারা তো কিছুই করতে পারছে না। তাদের সান্ত্বনা পাবারও কোনো উপায় নেই।
আলোচনা সভায় উপস্থিত গুম হওয়া ৩৫ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানান।
এ সময় তাদের কান্না আর আহাজারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, দেশে একের পর এক গুম, খুন, বিচারহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। বিচার বিভাগের নিষ্ক্রিয়তাও এর জন্য দায়ী।
প্রাবন্ধিক ফরহাদ মাজহারের কথা উল্লেখ জাফরুল্লা চৌধুরী বলেন, আমি ফরহাদ মজহারের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছি। পুলিশ, র্যাব সক্রিয় না থাকলে হয়তো তার মৃতদেহ পাওয়া যেত। অনুগ্রহ করে আপনারা এসব অমানবিক কাজ বন্ধ করুন। এসব বন্ধ না হলে মুক্তিযুদ্ধ অর্থহীন হয়ে যাবে।
——০————
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাংলাদেশে যেন আর কোনদিন সামরিক সরকার, অস্বাভাবিক সরকার, রাজাকারের সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে এ জন্য গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি-মহল-ব্যাক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামাত ধর্মের নামে জনগণের মধ্যে ভাগাভাগি, রক্তারক্তি, খুনাখুনি, অশান্তির যে রাজনীতি করছে তা শুধু বর্জন না, সমূলে উৎপাটন করতে হবে’।
ছাত্র-শ্রমিক সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে নগরীর শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে শহীদ শাজাহান সিরাজের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় যুব জোট, জাতীয় শ্রমিক জোট, জাতীয় নারী জোটের নেতৃবৃন্দ শহীদ শাজাহান সিরাজের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শহীদ শাজাহান সিরাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিক-গরীবের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমাজতন্ত্রকে সংবিধানের পাতা থেকে জীবনের পাতায় প্রতিফলনের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে’।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমন করে শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, যথা সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জাতীয় রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যেই শ্রমিক-গরীবের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামও এগিয়ে নিতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, শওকত রায়হান, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, শাজাহান সিরাজ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী খান, জাতীয় নারী জোটের সৈয়দা শামীমা সুলতানা হ্যাপী, ঢাকা মহানগর পূর্ব জাসদের সধারণ সম্পাদক এ কে এম শাহ আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি ইদ্রিস ব্যাপারী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব শামীম প্রমুখ। বাসস