ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: নিউইয়র্ক: জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের অভূতপূর্ব রেজ্যুলেশন পাসের খরবটিকে ব্যাপক ফলাও করে প্রচার করেছে ইউরোপীয় গণমাধ্যম।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘জেরুজালেম ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘ সংস্থার বিতর্ক এবং ভোট সকলের নজর কেড়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটির শিরোনামে বলা হয়, ‘জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি জাতিসংঘের ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’
পত্রিকাটি বলেছে যে, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটদানের মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি তিক্ত তিরস্কার দিয়েছে’।
এতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রস্তাবটির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকরভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি অবিলম্বে প্রত্যাহার কর।’
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) বলেছে, ‘তুরস্ক ও ইয়েমেনের পাঠানো প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি সত্য, কিন্তু এতে জেরুজালেমের অবস্থা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে গভীর দুঃখ প্রকাশ হয়েছে।’
টেলিগ্রাফ পত্রিকার শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও জেরুজালেম নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’
এটি বলেছে, ‘বেশিরভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বনকে উড়িয়ে দিয়েছে এবং ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দিত ডকুমেন্টে শেষ মুহূর্তে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোটভুক্ত সদস্য দেশগুলোর নাম অর্ন্তভূক্তি ওয়াশিংটনের গভীর ক্ষতে লবনের প্রলেপ দেয়া হয়েছে।’
দ্য ইভেনিং স্টান্ডার্ড ভোটের ফলাফলকে ‘ট্রাম্পের জন্য মারাত্মক আঘাত’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
দ্য ইভেনিং স্টান্ডার্ডের খবরে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে ট্রাম্পকে একটি মারাত্মক আঘাত প্রদান করেছে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শহরটি নিয়ে তার সিদ্ধান্ত বাতিল করে।’
এতে বলা হয়, ‘প্রস্তাবটির ওপর সমর্থনকারী দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও প্রস্তাবটির পক্ষে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে।’
স্কাই নিউজের শিরোনামটি ছিল, ‘ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করার জন্য জাতিসংঘের ভোটে যোগদিল যুক্তরাজ্য।’
এছাড়াও সংবাদমাধ্যমটি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিবৃতিও ব্যাপক ফলাও করে প্রচার করেছে।
সুইজারল্যান্ড
জুরিখ ভিত্তিক দৈনিক সংবাদপত্র ‘ব্লিক’ এর খবরে বলা হয়, জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনের পর যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা।
হাঙ্গেরি
হাঙ্গেরির শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ‘ম্যাগার নেমজেট’ এর শিরোনাম ছিল, ‘ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ট্রাম্পকে বিশ্ব অনুমতি দেয়নি।’
খবরে আরো বলা হয়, ইংল্যান্ড ও জাপানের মত ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একাকি করে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
হাঙ্গেরির ভোটদান থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে বলা হয়, ইসরাইল ও ট্রাম্পকে হাঙ্গেরি রাগান্বিত করতে চায় নি।
ফ্রান্স
এএফপি নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, প্রস্তাব সমর্থনকারী দেশের জন্য আর্থিক সহায়তা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।’
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে জেরুজালেম ইস্যুতে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭২ দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘বাতিল ও প্রত্যাখ্যান’ করে একটি রেজ্যুলেশন পাস হয়।
জাতিসংঘের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এ ঘটনার মাধ্যমে জেরুজালেম ইস্যুতে কোনঠাসা হয়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। আগের দিনের যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও চাপকে অগ্রাহ্য করে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ভোট দেয় ১২৮ টি দেশ। মাত্র নয়টি দেশ ছিল ইসরাইলের পক্ষে। ৩৫টি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে।
এর আগে গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জেরুজালেম প্রশ্নে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে মিশর। নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
এই ভোটাভুটির আগেই সাধারণ পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিক্কি হ্যালি ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিলে সেই দেশগুলোকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন’ গত মঙ্গলবার। তিনি বলেছিলেন, সাধারণ পরিষদে ‘আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া দেশগুলোর’ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এই মার্কিন দূত হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ভোটাভুটিকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এই ভোটাভুটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভোট দেবে—আমার ওপর নির্দেশ আছে যাতে ওই দেশগুলোর নাম সংগ্রহ করে তাঁর (ট্রাম্প) কাছে একটা প্রতিবেদন দিই। আমরা জেরুজালেম প্রশ্নে প্রত্যেকটা ভোটের হিসাব রাখব।’
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে। ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ, যে এই স্বীকৃতি দিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায় আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।