৩৮ ইঞ্চির লালচান মোল্লার দিন লিপি সংগ্রাম করেই চলছে সন্তানদের লেখাপড়া- সংসার

জি,এম মিঠন, নওগাঁ :
দুই ছেলে ও স্বামীকে রেখে অন্যত্র চলে গিয়ে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন স্ত্রী ফিরোজা বেগম। মাত্র ৩৮ ইঞ্চি লম্বা মানুষটিকে নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহ থাকলেও তার জীবন, সংসার, সন্তান নিয়ে কারও কোন আগ্রহ নেই। তাকে নিয়ে শুধুই আছে হাসি-তামশা। এই বেটে মানুষটির দিন যাপন নিয়ে কথা বলে জানা গেছে তাঁর বেঁচে থাকার নানান সংগ্রামের কথা। কখনো কেঁদে কখনো নিজের শরীর কে নিয়ে কথা বলে প্রকাশ করেছেন সভ্য সমাজের বিপরীতের নানান বিষয়। এলাকার লোকজনের কাছে বনমানুষ হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সহায় সম্বলহীন পয়তাল্লিশ বছরের লাল চান মোল্লা। মানুষের কাছে হাতপেতে চেয়ে নিয়া সেই টাকায় চলছে সংসারের খরচ ও তার দুই সন্তানের লেখাপড়া। লালচান মোল্লার স্বপ্ন তার দুই সন্তান লেখাপড়া শিখে সরকারী চাকুরি করার মাধ্যমে দেশের সেবায় নিয়েজিত হবে। ইতোমধ্যেই তার কলেজ পড়–য়া বড় ছেলের চাকুরীর জন্য এমপি, মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিতে শুরু করেছেন লাল চান।
লালচান মোল্লা নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশো ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মৃত তারা মোল্লার ছেলে। তারা মোল্লার ৫ মেয়ে ২ ছেলে মোট ৭ সন্তানের মধ্যে ৬ জন স্বাভাবিক হলেও শুধু লালচান মোল্লার উচ্চতা (বেটে) মাত্র ৩৮ ইঞ্চি। তার শরীরিক গঠনের কারনে তিনি বনমানুষ হিসেবে পরিচিত। মাত্র দুই শতক জমির উপর একটি মাটির ভাংগা ঘড় ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই তার।
নওগাঁর নওহাটামোড় (চৌমাশিয়া) বাসষ্টান্ডে বাসের যাত্রীদের কাছে থেকে হাত পেতে ভিক্ষার টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকায় অনেক কষ্টের মধ্যেদিয়ে সংসার ও দুই ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন লালচান মোল্লা।
লালচান মোল্লা কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমি বেটে (ছোট) মানুষ হওয়ায় গেরস্তের বাড়িতে কাজে যেতে পারিনা, আমি কাজ করতে পারব না জেনে গেরস্তরাও আমাকে কাজে নেয়না। সার্কাসের মানুষেরা আমাকে সার্কাসে জোকার বানাতে চাইলেও আমি জোকার হয়ে মানুষকে হাসাতে চাইনি এজন্য সার্কাসে আমার চাকুরি হয়নি। ২০/২১ বছর আগে আমি এলাকার ফিরোজা নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করি। কিছুদিন পর নওগাঁ শহরের একটি চাইনিজ হোটেলে গার্ডের চাকুরী হয়। দাম্পত্য জীবনে দুটি ছেলে সন্তান হয়। এক পর্যায়ে দুই ছেলে ও আমাকে ছেড়ে আমার স্ত্রী ফিরোজা বেগম অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করে সংসার পাতেন। আমি আমার শিশু সন্তান দুটিকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। আমি মনস্থির করি যেভাবেই হোক আমার সন্তানদের আমি লেখাপড়া শিখিয়ে সরকারী চাকুরি করার মাধ্যমে দেশের সেবায় নিয়েজিত করাব।
এরপরই আমি নওহাটামোড় বাসষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের যাত্রীদের কাছে হাত পেতে পওয়া ভিক্ষের টাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছি। এমনকি যারা বেটে মানুষ বলে আমাকে কাজে নেয়নি এমন অনেকেই আমার সন্তানদের দিনমুজুরের কাজে নিতে চাইলেও আমি সন্তানদের কাজে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছি।
আমার বড় ছেলে, ফিরোজ হোসেন (১৮) মান্দা মোমিন শাহানা সরকারী ডিগ্রি কলেজের এইচ এসসি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছোট ছেলে ফরহাদ হোসেন (৯) চকস¤্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
কথা বলার এক পর্যায়ে লালচান মোল্লা কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন আমি আমার স্বপ্ন পূরুন করতে পারব কিনা জানিনা, তবে স্বপ্ন পূরুনের জন্য ছেলেদের লেখাপড়া শিখাচ্ছি এবং ইতোমধ্যে আমার বড় ছেলে ফিরোজ হোসেনের চাকুরীর জন্য আমি এলাকার এমপি বাংলাদেশ সরকারের মাননিয় পাটও বস্ত্র মন্ত্রী ইমাজ উদ্দীন প্রমানিককের কাছে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছি তিনি আমার ছেলের পুলিশে চাকুরীর জন্য সুপারিশ ও করেছেন।
তাছাড়া আমি আমার ছেলের চাকুরীর জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে আমার ছেলের জন্য একটি চাকুরী ভিক্ষা চেয়েছি। আমার বিশ্বাস আমার ছেলে একদিন সরকারী চাকুরী পাইবেই। দেশের কোন না কোন দয়াবান কর্মকর্তা আমার ভিক্ষার টাকায় লেখাপড়া করা ছেলেকে চাকুরী করার সুযোগ করে দিবেন।
সহায় সম্বলহীন ৩৮ ইঞ্চির মানুষ মানুষ লালচান মোল্লার সংগ্রামের সহযোদ্ধা হবেন এমন মানুষ একদিন তাঁর পাশে এস দাঁড়াবেন সেই অপক্ষোর প্রহর গুনছেন তিনি।

১জানুয়ারী,২০১৮সোমবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেনজীর আহমেদের সম্পদের তথ্য চাইল দুদক

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।