ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক প্রার্থী দেবে ২০ দলীয় জোট। গত রাতে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। জোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠক রাত ৯টায় শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হয়।
জানা গেছে, বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল উত্তর সিটি নির্বাচন। এতে জোটগতভাবে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে এক নেতা জানান, উত্তর সিটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ েেত্র জামায়াতে ইসলামীর প থেকে বলা হয়েছে, ‘শিডিউল প্রকাশের আগে অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারে। তবে জোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই জোটের শরিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামী থাকবে।’
বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে আলোচনা হয়। জোট নেতারা বলেছেন, বিএনপি প্রধানকে মাইনাস করে কোনো নির্বাচন হবে না। সে নির্বাচনে কেউ অংশ নেবে না।
বৈঠকে চলতি মাসে একটি আইনজীবী সমাবেশ ও আরেকটি আলেম-ওলামা সমাবেশ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানী আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডেমোক্র্যাটিক লীগ (ডিএল) সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
জোটের শরিক লেবার পার্টির মধ্যে নেতৃত্বের বিভক্তির কারণে তাদের কোনো প অর্থাৎ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও হামদুল্লাহ আল মেহেদির পকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর ২০ দলীয় জোটের সাথে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়।
ঢাকা উত্তর মেয়র উপনির্বাচনের তফসিল আজ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত হওয়া উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনের তফসিল আজ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তফসিল ঘোষণা করা হবে। খসড়া তফসিল অনুয়ায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৮ বা ২১ জানুয়ারি। মনোনয়ন বাছাই ২৪ থেকে ২৫ জানুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ ২৬ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ভোট গ্রহণের জন্য একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে ইসি। এ ছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ডিসিসি নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ২৭ হাজার ৮১৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে দায়িত্বে থাকবেন ২৩ হাজার ৮৬৪ জন। দক্ষিণের ১৮ ওয়ার্ডে থাকবেন ৩ হাজার ৯৫৩ জন। দুই সিটির নির্বাচনে প্রায় ৩৬ হাজার ৭৬৮ সদস্য আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৩১ হাজার ১২৩ জন থাকবেন ঢাকা উত্তরে। দক্ষিণে থাকবেন প্রায় ৫ হাজার ১৫৩ জন। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন ২২ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। গুরুত্বপৃর্ণ কেন্দ্রে থাকবেন ২৪ জন করে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির উপনির্বাচনের তফসিলে মনোনয়নপত্র জমার জন্য দু’টি তারিখ পছন্দ ইসির। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ১৮ জানুয়ারি বা ২১ জানুয়ারি হতে পারে। মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে ভোট যেহেতু একই দিনে তাই মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখও এক সাথে রাখা হচ্ছে।
গত ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর ১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সে ক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ উপনির্বাচন করতে হচ্ছে ইসিকে। মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করার গেজেট হাতে পাওয়ার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে ইসি সচিবালয়।
সর্বশেষ চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। ভোটার ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ১০৭, এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪০, মহিলা ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৭। ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩৪৯, ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৫১৬। ঢাকা দক্ষিণে ১৮ ওয়ার্ডে ভোটার ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪২১, এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৮১, মহিলা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪২১ জন। ভোটকেন্দ্র ২৩৩, ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৪০টি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির বাড্ডা ইউনিয়ন থেকে যুক্ত হয়েছে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটারা ইউনিয়নে ৩৯ ও ৪০ ওয়ার্ড, সাঁতারকূল ইউনিয়নের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, বেরাইদ ইউনিয়নে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, ডুমনি ইউনিয়নে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরখান ইউনিয়নে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, দক্ষিণখান ইউনিয়নে ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং হরিরামপুর ইউনিয়নে ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড। অন্য দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়ন থেকে ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড।
এ দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত হওয়া উত্তর-দক্ষিণের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন পরিচালনার জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দ ৯ কোটি টাকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা।
০৯জানুয়ারী,২০১৮মঙ্গলবার:::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি