মোস্তফা কামাল, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): শ্যামনগর উপজেলার হায়বাতপুর গ্রামেরএফ.টি ফরিদা পারভীন কৃষি ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীর মডেল। বসত ভিটায় ৪৫ প্রকার সবজি চাষ ও মাছ চাষ করছেন ফরিদা পারভীন। ইতিহাস বলে খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর অবদান বেশী। নারীরা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন ফলজ, বনজ, শাক, সবজি বীজ ও জ্বালানী সংগ্রহ করে পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখে। এফ,টি ফরিদা পারভীন মৌসুম ভিত্তিক জৈব পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার শাক, সবজি বীজ সংরক্ষন, সম্প্রসারন ও পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তায় দিনের পর দিন ভূমিকা রেখে চলেছেন। ২ বিঘা জমিতে স্বামী কবিরাজ জাহাঙ্গীর আলম সহায়তায় নিজ জমিতে উৎপাদন করছেন ৪৫ প্রকার শাক। সবজি চাষ করে মাসিক ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করেন ফরিদা। তার ভিটার এক পাশে মিষ্টি পানির পুকুর ও জলাশয়ে দেশীয় কৈ, শৈল, শিং, মাগুর, টেংরা, টাকি, তোড়া, চেলা, পুঁটি, মায়া জাতীয় ৪০ প্রকার মাছ রয়েছে। জলাশয়ের উপরে মাচায় হরেক প্রজাতির করেলা, লাউ, শিম, কুশি, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি এবং খামারের সাইড দিয়ে আছে আম, কুল, আমড়া, বেল, লেবু, নারিকেল, কাঁঠাল, তেঁতুল, বেদানা ৪০ প্রকার ফল।আলু জাতীয় আছে চুবড়ি আলু, খোটা আলু, চাষি আলু, মিষ্টি আলু, শাক আলু, হরিনপালা, ছোবড়া আলু, ইত্যাদি ৯ প্রকার।শবরী কলা, পানরাজ ঠটে, চাঁপাশবরী, কাঁচ কলা ইত্যাদি ১০ প্রকারঝাল আছে। কামরাঙ্গা, বুলেট, জিয়াঝাল, বিলাতিঝাল, সাদাঝাল ৭ প্রকার।দারু চিনি, তেজপাতা, হলুদ, আদা এলাজ ও ধনে। ২৮ প্রকার যেমন- আদাবরুন, থানকুনি, বেতোশাক, কালকচু, ঘুমশাক, হেলেঞ্চা, উটুনি, তেলাকুচি, কাঁটানটে, কাঁথাশাক, কলমি ইত্যাদি শাক। বাগানের কিছু কিছু জায়গায় রঙ্গিল ফুল লাগানো আছে ফসলের ক্ষতিকর পোকা মাকড় দমন করার জন্য। পোকা দমনের জন্য মাঝে মাঝে ফেরামন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। ফার্মার টিচার(এফ.টি) ফরিদা পারভীন ৩৩ শতক জমি লিজ নিয়ে সেখানে ৮৬ প্রকার স্থানীয় জাতের ধান চাষ করছেন। পাইনাট, তিলেক কুচি, হামাই, চিনিকানি, দারশাইল, ইঞ্চি, কালোজিরা,নারকোল মুছি, সাহেবকচি, লালগেতী, ময়নামতি, ঁেখজুরছড়ি ইত্যাদি ধান ফরিদা পারভীন গড়ে তুলেছেন কৃষি নারী সংগঠন।খামারের উৎপাদিত বীজ ২০০৩ সাল থেকে হত দরিদ্র কৃষক কৃষানীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ ও প্রশিক্ষণ। সাজানো গুছানো খামারটি বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করেন এমপি এস,এম,জগলুল হায়দার,সাবেক এমপি এইচ,এম,গোলাম রেজা,শ্যামনগর সদর চেয়ারম্যান এ্যাডঃজহুরুল হায়দার (পি.পি) প্রমূখ। সরকারি কর্মকর্তা সাবেক সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামারবাড়ী, সাতক্ষীরা মোঃ সোলায়মান আলী,গণেশ চন্দ্র,মোঃ আব্দুল মান্নান অতিরিক্ত পরিচালক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর যশোর অঞ্চল যশোর, সাবেক ইউএনও দৌলতুজ্জামান খাঁন, সাবেক ইউএনও হাবিবুর রহমান, সাবেক ইউএনও, আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম, সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন মিয়া, সাবেক সামাজিক বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান,কৃষি অফিসার মোঃ আলি হোসেন বাগানটি পরিদর্শন করেন। সাংবাদিক বৃন্দ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা বাগানটি দেখে মুগ্ধ হন। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা ফরিদা পারভীনের কর্মককান্ড দেখতে আসে। ফরিদা পারভীন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন। শ্যামনগরে কৃষি ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীন মডেল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।
১৪জানুয়ারী,২০১৮রবিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি