পুলিশি আতঙ্ক বেড়েছে কমেছে বাকস্বাধীনতা ট্রাম্প শাসনের এক বছর : বিক্ষোভকারীদের ২০০ ডলার জরিমানা ৪৮ ঘণ্টা আগেই জানাতে হবে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনের প্রায় এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন সংবিধানে অন্যান্য স্বাধীনতার মধ্যে মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও ট্রাম্পের অধীনে তা ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে। ট্রাম্পবিরোধীদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মামলা। বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো হচ্ছে পুলিশি নির্যাতন। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলছে সাঁড়াশি অভিযান ও হয়রানি। ফলে জনগণের মধ্যে বাড়ছে পুলিশি আতঙ্ক।

ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ড খর্ব করতে কয়েক ডজন আইন প্রণয়ন করেছে রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) মতে, গত এক বছরে প্রায় ২০টি রাজ্যে এসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, ওকলাহোমা ও টেনেসিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যে এমন বেশ কিছু বিল আইন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। নর্থ ডাকোটায় বিক্ষোভকে অপরাধ হিসেবে গণ্য এবং দাঙ্গার জন্য জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মুখোশ পরে বিক্ষোভও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওকলাহোমায় বিক্ষোভ করলে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ এমন আইন পাস করা হয়েছে। টেনেসিতে এখন থেকে বিক্ষোভকারীকে ২০০ ডলার জরিমানা করা হবে।

সরকারি ভূমি ও হাইওয়েতে বিক্ষোভ বন্ধ বা সীমিত করতে কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে সাউথ ডাকোটা। এদিকে চলতি মাসেই ডারহাম কাউন্টি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যেটা পাস হলে যে কোনো বিক্ষোভের অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার প্রয়োজন হবে। গত বছর ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের দিন তার বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। এসব বিক্ষোভকারীকে কঠোরহস্তে দমন করে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন পুলিশ। ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ২০ জানুয়ারির ওই উদ্বোধনী দিনেই পুলিশ ২৩০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। পরের দিন আরও অনেককেই গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ছাড়াও এদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণ। গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়। অনেককেই ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। ট্রাম্পের অভিষেকের দিনে যারা আটক হয়েছিলেন তাদের একজন পেনসিলভানিয়ার অধিবাসী অলিভার হ্যারিস অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বাকস্বাধীনতার সংকোচনের কথা বলে তিনি বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে দমনপীড়ন। মার্কিন সরকারের টার্গেটের অন্যতম বামপন্থী নাগরিক অধিকার সংগঠন বিএএমএনের ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মী ইবেত ফেলারসা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী, বর্ণবাদবিরোধী এবং ট্রাম্পবিরোধী অন্য বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় বৃদ্ধি করেছে। ফেলারসা বলেন, ‘সমালোচনাকে একই সঙ্গে ঘৃণা ও ভয় করেন ট্রাম্প। কারণ গণ-আন্দোলনের শক্তিকে ভয় পান তিনি। বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানই প্রমাণ করে ট্রাম্পের প্রশাসন দুর্বল ও ভঙ্গুর।’ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প।

ক্ষমতায় আসার পর বিতর্কিত এ নীতির বাস্তবায়ন করছেন তিনি। যেভাবে এবং যে মাত্রায় তিনি এটা করছেন তা প্রমাণ করে, তিনি তার প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। অভিবাসন পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই এমন অভিবাসীদের আটক করা হচ্ছে। অধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্পের এ নীতির অধীনে দেশের প্রত্যেক অভিবাসীকেই অবৈধভাবে টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান ক্রমেই ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে একসঙ্গে ১৭টি অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় বহু অভিবাসীকে। এমনকি যেসব গ্রাম্য এলাকা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে সেসব এলাকায়ও অভিযান চালানো হচ্ছে। কারও বন্ধুকে কারও স্কুলের সহপাঠীকে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

১৭জানুয়ারী,২০১৮বুধবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/আলজাজিরা/আসাবি

Check Also

শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেওয়া চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ঢাকার দেওয়া কূটনৈতিক পত্র গ্রহণ করেছে দিল্লি। এ তথ্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।