ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যুক্তিতর্ক চলছে। বিচারাধীন এই মামলার রায় ঘোষণার আগেই সাজার তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। আর এতথ্য ফাঁসের অভিযোগ সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হেয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে উপজেলা ও পৌরসভা শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই তথ্য ফাঁস করেন।
তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অপেক্ষা করুন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে অন্যায়ভাবে জেলে নিয়ে যে নির্যাতন করেছেন, তাকেও তার ফল ভোগ করতে হবে।
তার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকই এ্রর প্রতিবাদ সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। বিএনপিও রাঙ্গার এই বক্তব্যকে আদালত অবমাননার শামিল বলে আক্ষা দিয়েছেন। তারা বলছেন- একটি বিচারাধীন মামলার রায় রাঙ্গা আগেই বলে প্রতিমন্ত্রী যদি বলে দেন খালেদা জিয়ার জেল হবে তাহলে কি ধরনের বিচার হচ্ছে তা বুঝা যায়।
রাঙ্গার এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে.(অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এই ধরনের বক্তব্য আইনবর্হিভূত। এটা বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিচার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অবিশ্বাস সন্দেহ রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার বক্তব্যের পর তা আরো পরিস্কার হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, আমাদের ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে আবারো একটি নীলনকশার নির্বাচন মঞ্চস্ত করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেবে না। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার চেষ্টা হলে জনগণ তা প্রতিহত করবে।
এদিকে রাঙ্গার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি তার ফেসবুক পেজ-এ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন- ১৫ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আদালাতের রায় কি হবে সেটি কি ঠিক হয়ে গেছে? এটা কি এরমধ্যেই জেনে গেছেন জাতীয় পার্টির মন্ত্রী? বিচারাধীন বিষয়ে তিনি এধরনের কথা বলেন কিভাবে!
আসিফ নজরুলের এই স্ট্যাটাসের পর অনেকেই সেখানে রাঙ্গার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার পরবর্তী শুনানি ২৩,২৪ ও ২৫ জানুয়ারি। এর আগে ১১ জানুয়ারি ৯ম দিনের মতো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। পরবর্তী সময় যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
এরপর ২০, ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩ , ৪, ১০, ১১ ও ১৬ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় প্রথম মামলাটি করা হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০জানুয়ারী,২০১৮শনিবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি