ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ঢাকা: ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ, এডিশনাল আইজি সোহেলী ফেরদৌস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সেই সাথে সারা দেশে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতয়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় ৩ প্লাটুন, কুমিল্লায় ৩ প্লাটুন, নারায়নগঞ্জে ৩ প্লাটুন, নোয়াখালীতে ১ প্লাটুন, লক্ষীপুরে ১ প্লাটুন, চাঁদপুরে ১ প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই ভাবে সারা দেশের সাথে রায়কে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার, গোয়েন্দা তৎপরতা, নজরদারি ও তল্লাশি জোরদার করে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে সমগ্র রাজধানী।
এর মধ্যে ঢাকায় প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। চলছে তল্লাশি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ভবনগুলোসহ ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া কমলাপুর রেল স্টেশনের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছে অসংখ্য পুলিশ। স্টেশনে প্রবেশ মুখ ও ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে বুধবার সকালে শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, সদরঘাট এবং কমলাপুর ঘুরে দেখা যায়, এসব স্থানগুলোতে বৃদ্ধি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা। তাদের দেখা যায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে, তল্লাশি চালাতে। সন্দেহজনক হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে ব্যাগ ও দেহ।
এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নগরীতে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার পাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মহানগরীতে প্রবেশ করা প্রতিটি পরিবহনে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে।
এই বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইয়াসিন ফারুক জানান, পুলিশ ও আনসারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতা কেউ যেন ঘটাতে না পারে সেজন্য সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আজ থেকে এপিবিএনও (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) যুক্ত হয়েছে।
সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নিরাপত্তার বিষয়ে কোতয়ালি থানার সিনিয়র এসি বদরুল হোসেন বলেন, আমরা সজাগ আছি। কোনো ধরনের অপতৎপরতা সফল হতে দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে সবসময়ই চেকপোস্ট থাকে, তল্লাশিও চলে। নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনে কখনো কখনো কড়াকড়ি কিংবা বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হয়। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই করছি। এখানে নগরবাসীর ভয়ের কিছু নেই। তবে, সবাইকে এক্ষেত্রে সহোযোগিতার আহবান জানবো।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, রায়কে ঘিরে যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কাউকেই করতে দেয়া হবে না। চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহলও জোরদার করেছে র্যাব। সারা শহরে সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি।
এবিষয়ে এডিশনাল আইজি সোহেলী ফেরদৌস বলেন, রাজধানী ঘিরে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বুধবার থেকে আগামী তিনদিন পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সব রক্ষাকারী বাহিনী। বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই তিনদিনকে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় নিয়েছে রাষ্ট্রের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। তাদের সঙ্গে সক্রিয় থাকবে গোয়েন্দারাও। মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশমুখে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।