সাতক্ষীরায় হলুদের বাম্ফার ফলন: সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষ করে লাভের মুখ দেখছে চাষীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরাতে হলুদের বাম্ফার ফলন হয়েছে। জেলা চাহিদা মিটিয়ে হলুদ ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ব্যবসায়িরা হলুদ কিনতে সাতক্ষীরার হাট-বাজারে । ফলে দিন দিন এ জেলাতে হলুদের কদর বাড়ছে।জেলার বেশিরভাগ হাট-বাজারে এখন হলুদ বেচা-কেনা হচ্ছে। বর্তমানে হলুদ থেকে গুড়া উৎপান করতে জেলাতে কয়েক হাজার শ্রমিক এ পেষায় আতœকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দিন দিন সমলার কদর বাড়ায় মসলা জাতীয় পণ্য হলুদ চাষে সাতক্ষীরার কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম বেশি পাওয়াতে কৃষকরা হলুদ চাষে আগ্রহী। এবার জেলাতে হলুদের ফলনও ভাল হয়েছে। ভাল ফলন ও দাম বেশি পাওয়াতে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। এক সময় দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলাতে হলুদ কিনতে আসত। কিন্তু জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও হলুদের দাম কমে যাওয়াতে হলুদ চাষীরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়। ফলে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয় হলুদ চাষে। টানা দুই যুগের মত চরম মন্দা যায় হলুদ চাষে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও হলুদের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে এবছর সাতক্ষীরা জেলাতে হলুদের আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় হলুদ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়ে ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন। উৎপাদন হয়েছে তার চেয়ে বেশি।
এবছরা জেলাতে হলুদের আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় মোট ৫৭৮ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদের লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১২০, কলারোয়ায় ৯০, তালায় ২৮৬, দেবহাটায় ১৫, কালীগঞ্জে ১০০, আশাশুনিতে ১৫ ও শ্যামনগরে ৪৩ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলায় হলুদ আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হয়েছে। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৮৬ হেক্টর জমিতে মসলাজাতীয় পণ্যটির আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৯৬০ টন হলুদ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮০০, কলারোয়ায় ১ হাজার ৩৫০, তালায় ৪ হাজার ২৯০, দেবহাটায় ১৫০, কালীগঞ্জে ১ হাজার ৫০০, আশাশুনিতে ১৫০ ও শ্যামনগরে ৬৪৫ টন হলুদ উৎপাদন হয়েছে বলে জেলা খামারবাড়ি সূত্র জানায়।
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় হলুদ আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেলেও কয়েক বছর ধরে এর উৎপাদন কমে আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আবাদি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে জেলার তালা উপজেলার খলিষখালী গ্রামের আব্দুল গফুর শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হলুদ আবাদ করে আসছেন। তবে কয়েক বছর ধরে পণ্যটির আবাদ কমিয়ে ফেলেছে। জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর উৎপাদন হয় না। ফলে হলুদ আবাদ করে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে কৃষকদের। এ কারণেই তিনিসহ বেশির ভাগ কৃষক হলুদ আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবছর চাষীরা হলুদ চাষে আগ্রহ দেখায়।হলুদ চাষীরা আশার কথা শোনালো । কয়েক জন চাষী জানান,সমন্বিত চাষের মাধ্যমে একই জমিতে হলুদের সাথে কয়েক ধরণে সবজির চাষ করা যায়। ফলে তদারকি সহ হলুদ চাষে খরচ অনেক কম।
সরজমিনে দেখা যায়, চাষীরা হলুদের সাথে একই জমিতে ঝাল গাছ, বেগুন চাষ, মেটে আলু ,ওলের চাকি চাষ করছে। দেখা যায়, হলুদের সাথে সাথে একই সাথে এ সকল ফসল অতিদ্রুত ফলানো যায়। এতে ঐ কৃষকের নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এ বছর শুকনো হলুদের দাম বেশি থাকায় হলুদ বিক্রিতে মোটামুটি গতবারের থেকে বাজার পাবেন বলে আশা করছেন চাষীরা।
জেলার বেশির ভাগ ক্ষেত থেকে হলুদ তোলা শেষ হয়েছে। প্রান্তীক চাষীরা ইত্যোমধ্যে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে উৎপাদিত হলুদ বিক্রি করে দিয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে চলছে হলুদ থেকে গুড়া বের করার কাজ। ইত্যোমধ্যে গৃহিণীরা তাদের চাহিদানুযায়ী হলুদের গুড়া সংগ্রহ করে রখেছে বলে কয়েকজন গৃহিণীর সাথে কথা বলে জানা যায়।
তবে জেলার বিভিন্ন বাজারে হলুদের গুড়ার দাম নিয়ে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। খুচরা বাজারে দুইশত টাকা কেজি প্রতি হলুদের গুড়া বিক্রি হচ্ছে অন্যদিকে পাইকারী বাজারে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে তা বিক্রি হচ্ছে। বাজার বেঁধে এর আরো তারতম্য আরো বেশি।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, হলুদ বেশ লাভজনক ফসল। সাতক্ষীরায় প্রতি হেক্টরে ১৫-১৬ টন পর্যন্ত হলুদ উৎপাদন হয়। কিন্তু উপকূলীয় জেলা হওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে এখানকার আবাদি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ দুই কারণে জেলার কৃষকরা হলুদ আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবে আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের হলুদ আবাদের ক্ষেত্রে সবসময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। যার ফলে এবছর আবাদ বাড়ছে।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।