বিএনপিকে বিভক্ত করার জন্য চাপ?

দুর্নীতির অভিযোগে নিম্ন আদালতে দণ্ডিত বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অবশেষে হাইকোর্ট চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেছে। তবে আরেকটি মামলায় তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখানোর কারণে তিনি মুক্ত হতে পারেননি। আগ্রাসী কর্মসূচি গ্রহণের জন্য বিএনপিকে আওয়ামী লীগ ঠেলে দিতে চাইলেও খালেদা জিয়া কারাভোগ কালে তেমন কিছু না করার ব্যাপারেই বিএনপি তার বেশির ভাগ শক্তি ব্যয় করেছে।

মারদাঙ্গা কর্মসূচি গ্রহণ না করার প্রাথমিক পুরস্কার বিএনপি পেয়েছে খালেদা জিয়ার জামিন লাভের মাধ্যমে। তবে তাকে পুরোপুরি বের করে আনা এখন আরো বড় খেলা। তার আইনজীবীরা আশা করেছিলেন, তিনি বড়জোর এক সপ্তাহ কারাগারে থাকবেন। কিন্তু এখন এক মাসের বেশি হয়ে গেলেও শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে সরকার দাবি করেছে, জামিন মঞ্জুর প্রমাণ করছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন। তবে বিএনপি বলছে, এখনো কারাগারে খালেদা জিয়ার থাকাটাই সরকারের সত্যিকারের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিচ্ছে।

‘রাজনৈতিক মামলা?’

অভিযোগগুলো কী কী তা বিবেচ্য বিষয় নয়। মামলাটি ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আসলে যখন কোনো দলীয় প্রধান কোনো মামলায় সম্পৃক্ত থাকে, তখন সেটির রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হওয়াটা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী’ হিসেবে একে একদিকে অপরাধমূলক ও অন্যদিকে অনৈতিক কাজ হিসেবে অভিহিত করে খালেদা জিয়াকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এর প্রভাব পড়েছে সামান্যই।

কারণ বাংলাদেশের মতো সমাজে সব রাজনৈতিক নেতাকেই অপরাধের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা হয়। এমনকি পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের মিত্র ‘দুর্নীতিবাজ ও নারীলোলুপ’ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। ফলে ভাবমূর্তি নস্যাতের বিষয়টি হচ্ছে না, সেটি বিএনপি বা তাদের ভোটারদের কোনোভাবে বিব্রত করছে না। এখন আওয়ামী লীগ ও জামিন ও কারাদণ্ডের যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিষ্কার হয়ে গেছে, অন্যান্য উপায়ের পাশাপাশি বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য আওয়ামী লীগ আইনও ব্যবহার করবে।

তাৎপর্যপূর্ণ কিছু উস্কানির মুখেও বিএনপি সংযত আচরণ করে যাচ্ছে। তাদের আশু লক্ষ্য ছিল কোনোভাবেই যেন খালেদা জিয়ার আটকাদেশ দীর্ঘায়িত করার কোনো অজুহাত পাওয়া না যায়। সেই আশু লক্ষ্য তারা হাসিল করেছে। তবে কারাগারে অব্যাহতভাবে থাকাটাও এই কৌশলের মতোই সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর হতে পারে। আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবেই আইনগত-প্রক্রিয়ায় কাজ করবে না। খালেদা জিয়ার কারাগারে অবস্থান, জামিন মঞ্জুর-প্রক্রিয়ায় বিলম্বের প্রভাব ২০১৮ সালের নির্বাচনে পড়বে। আওয়ামী লীগের কাছে এটি খুবই মূল্যবান বিষয়। ফলে বিএনপি ও খালেদা জিয়া একটি বিষয় আরো দেখতে পারে, অন্তত নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর পর্যন্ত। এরপর যা-ই হোক না কেন, নতুন কিছু ঘটতে পারে।

বিএনপির সংযম কত দিন স্থায়ী হবে?

শান্তিপূর্ণ বিএনপি ও উস্কানিদাতা আওয়ামী লীগের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে থাকা মিডিয়া অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে। এটি গোপন নয় যে দলটির বিপুলসংখ্যক উগ্র কর্মী রয়েছে এবং তারা খালেদা জিয়ার ছেলে এবং বর্তমান পার্টিপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারী তারেক জিয়ার অনুগত। এই অংশটিই ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কটের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল। আর পরে তা বিএনপির জন্য বেশ দুর্দশার কারণ হয়েছিল। কৌশগত কারণে দলীয় প্রধানের অনুরোধে তারা নীরব রয়েছে। কিন্তু তারা সবসময়ের জন্য নীরব থাকবে না বা থাকতে পারবে না। সম্প্রতি পুলিশের হেফাজতে বিএনপির এক তরুণ নেতার মৃত্যু দলের কট্টরপন্থীদের সাহসী করে তুলবে।

এই হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বিএনপির কর্মীদের মধ্যে দুটি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা হবে। একটি হলো, ক্ষমতাসীন দলটি নরম হাতে কাজ করছে না এবং যারা তুলনামূলক নমনীয় সমাবেশ করতে চায়, তাদেরও তুলে নিয়ে চরম জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হতে পারে। অপরটি হলো, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল হওয়ার একটি সীমা-পরিসীমা আছে। কারণ কর্মীরা ইতোমধ্যেই মারা যাচ্ছে, একজন সিনিয়র নেতাও মারা গেছেন।

বিএনপিকে বিভক্ত করার জন্য চাপ?

ফলে আরো আগ্রাসী হওয়ার জন্য অহিংস বিএনপি নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। অবশ্য তারা এও জানে, এ ধরনের পন্থায় ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার সামর্থ্য তাদের নেই। ফলে দলের মধ্যে সহিংস বিক্ষোভের পক্ষে ও বিপক্ষ গ্রুপের মধ্যে লড়াই বাড়তে পারে। অবশ্য খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার পর, যদি কখনো হতে পারেন, ‘শান্তিবাদী কৌশলের’ রচয়িতা হিসেবে হয়তো চাপ কমাতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তাকে যদি আবার কারাগারে যেতে হয় কিংবা বের হতে না পারেন, তবে সহিংস কর্মসূচির পক্ষে চাপ বাড়বে।

আওয়ামী লীগ একে স্বাগত জানাবে। তাদের কাছে বিভক্ত বা দুর্বল বিএনপিই অনেক কাঙ্ক্ষিত। আওয়ামী লীগ বারবার বলতে চাইছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। অথচ এই বক্তব্য বিএনপি অব্যাহতভাবে নাকচ করে দিয়ে বলছে, আওয়ামী লীগ চায় যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়, কিন্তু তা করতে বাধ্য করতে পারছে না। ২০১৪ সালের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, সেবার বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে আওয়ামী লীগকে ওয়াক ওভার দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনটি এখন রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য নির্বাচনে যোগ দিতে চায়।

ফলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বিএনপির চেয়ে অর্ধেক বিএনপি কিংবা অনুবর্তী বিএনপি নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত। ফলে বাকিদের থেকে খালেদা জিয়াকে আলাদা রাখতে অনেক শক্তিই সম্ভবত খরচ করা হবে। আর তা করার জন্য একটি কৌশল হতে পারে এই যে খালেদা জিয়াকে সেখানেই রাখা কিংবা যত বেশি সম্ভব কারাগারে যাতায়াতের মধ্যে রাখা।

ফলে বিএনপি যখন চরম অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখে পড়ছে, সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার দৃশ্যত আরো বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার জন্য খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছে।southasianmonitor.

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।