আজ বৃহস্পতিবার মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ২২

স্টাফ রিপোর্টার : আজ বৃহস্পতিবার মহান স্বাধীনতার মাস মার্চের ২২ তারিখ। উনিশ শ’ একাত্তরের এই দিনে সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরী আবার মিছিলের নগরীতে পরিণত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আলোচনা হয়নি। সারা দেশের মানুষ বেশ উদ্বেগাকুল অবস্থায় ছিলো। কারণ তখন এমন কথা রটেছিলো যে, রাত আটটায় যদি ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিবের দাবি মেনে না নেন তাহলে ভোর রাত থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবার রাস্তায় নামবে। কারফিউ দেবে ও ব্যাপকভিত্তিক গ্রেফতার চালাবে এবং সামরিক আইনকে আরো কঠোর করবে। ইয়াহিয়া খান হয়তো নির্বাচনের ফলাফলও বাতিল ঘোষণা করতে পারেন। এদিনে দুপুরেও ইয়াহিয়া খান এবং তার সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভূট্টো ও তার উপদেষ্টাদের সাথে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন। তারা একত্রে মধ্যাহ্নভোজেও মিলিত হন।
এদিনের আরো একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে প্রাক্তন বাঙ্গালী সামরিক অফিসার ও জওয়ানদের সমাবেশ। মেজর জেনারেল (অব.) এম আই মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশটি পরিচালনা করেন কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। সমাবেশে দেশের আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত সকলে শপথ গ্রহণ করেন এবং যারা এই সমাবেশে আসতে পারেননি এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল বাঙ্গালী অফিসার ও জওয়ানদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। চার দফা ব্যর্থ আলোচনার পর এদিন ঢাকায় প্রেসিডেন্ট হাউজে সর্বপ্রথম শেখ মুজিব, ইয়াহিয়া ও ভূট্টোর মধ্যকার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পঁচাত্তর মিনিটব্যাপী যখন আলোচনা চলছিলো মাঝ সময়ে প্রেসিডেন্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী সাঈদ প্রেসিডেন্ট হাউজের বাইরে অপেক্ষমান দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেন। আলোচনা শেষে শেখ মুজিব দৃঢ়চিত্তে বিষণœ বদনে প্রেসিডেন্ট হাউজের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সাথে আমার নির্ধারিত বৈঠক ছিলো। সে অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে যাই। সেখানে ভূট্টো সাহ্বে উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রেসিডেন্টকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি। চারটি শর্ত পূরণ ও উত্থাপিত দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে পারি না। অধিবেশন স্থগিতের পর সারা রাজধানীতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রেসিডেন্টের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বলা হয়-উভয় অঞ্চলের নেতাদের সাথে আলোচনাক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার পরিসর সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদী জনতার মিছিল যখন শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে শেষ হয় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইয়াহিয়ার সাথে তার বৈঠক সন্তোষজনক ও অগ্রগতি হয়নি। চারটি শর্ত পূরণ না হলে তিনি জাতীয় পরিষদে অংশগ্রহণ করবেন না। এদিকে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান এ সবুর আজ ঢাকার পথে রওয়ানা হয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের সাথে প্রেসিডেন্ট প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন।

Please follow and like us:

Check Also

বিজয় দিবসে বিএনপির দিনব্যাপী কর্মসূচি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।