সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার নলতায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঘর পোড়ানোর মামলা দিয়েছে প্রতিপক্ষ। শুক্রবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটার বসন্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ যথাযথ তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে এ মামলা নেওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।জমির জবরদখলে রাখতে না পেরে হুমকি দিয়েই এক সাংবাদিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঘর পোড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে। বসন্তপুর গ্রামের মুনসুর আলী গাজী জানান, মা চমকলতার নামে এস এ খতিয়ান ১১৭ এ ১১১,১১২ ও ১১৩ দাগের ৫৮ শতক জমির মধ্যে ২৯ শতক জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করায় খাস হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অব্যবহৃত জমির মধ্যে ছয় শতক জমিতে ঘরবাড়ি বেঁধে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমান সেটেলমেন্ট তা রেকর্ড রয়েছে। ওই ২৯ শতক খাস জমির মধ্যে বোন আমেনার জমি রয়েছে। আমেনার কাছ থেকে মৌখিকভাবে জমি নিয়েছেন দাবি করে তার (মুনসুর) রেকডীয় ৮৯সহ সাতটি দাগের তিনশতক জমি দু’ বছর আগে দখল করে সেখানে গায়ের জোরে ঘর নির্মাণ করে আমির আলী গাজীর ছেলে আলীপুর নাথপাড়ার বিডিআর হত্যা মামলার আসামী ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ি আলিমুজ্জামান লিন্টু। এ জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি বাদী হয়ে বোন আমেনা খাতুন, ইমান আলী ও আলিমুজ্জামান লিল্টুর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দেবহাটা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন। মামলার খবর পেয়ে আলিমুজ্জামান লিন্টু পরিবারের সদস্যকে খুন করা, বাড়িতে অবৈধ মালামাল রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া, গোয়ালে ও পুকুরে বিষ দিয়ে গরু ও মাছ মেরে ফেলা হুমকি ধামকি দিলে তার ছেলে হান্নান গাজী বাদী হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৩ মার্চ মামলা(পিটিশন-১৮৬/১৮নং) দায়ের করেন। পরদিন থানায় উভয়পক্ষকে নিয়ে বসাবসির কথা থাকলেও তা হয়নি। ১২ মার্চ লিন্টু তার(মুনসুর) জমির সীমানা প্রাচীর তুলে দিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়। ১৫ মার্চ স্থানীয়ভাবে ইউপি সদস্য আলীপুর নাথপাড়ার বিডিআর হত্যা মামলার আসামী আরমান হোসেনের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসাবসি হয়। সেখানে লিন্টু তার জবর-দখলকৃত জায়গা ছড়ে দেওয়ার শর্তে ২৫ হাজার টাকা পাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পহেলা এপ্রিল টাকা লেনদেন ও না দাবি সংক্রান্ত চুক্তিপত্র লেখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আদালতের নির্দেশে গত ২০ মার্চ তহশীলদার ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত ও মাপজরিপ করে লিন্টু তার(মুনসুর) রেকডীয় জমিতে বসবাস করছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জমি নিয়ে মামলা থাকায় ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথামত বসাবসিতে রাজি না হওয়ায় নিজেদের হীন স্বার্থ চারতার্থ করতে ইউপি সদস্য আরমান হোসেনের সহযোগিতায় লিন্টু নিজের বসত ঘরের সঙ্গে ছাগল রাখার জন্য নির্মিত একচালায় নিজে আগুন দিয়ে পরিকল্পিত মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন যথাযথ তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে এ মামলা রেকর্ড করেছেন। মামলায় তার জামাতা বসন্তপুর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের আব্দুল হাকিম, ১০ কিলোমিটার দূরে কালিগঞ্জের নলতার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, একই এলাকার মান্দার কারিকর, ২০ কিলোমিটার দূরে ভোমরার ফিরোজ হোসেন, একই স্থানে বসবাসকারি ও বেনাপোল বন্দরে কর্মরত ছেলে কবীর হোসেনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। রাত সাড়ে তিনটায় আগুন লাগলে এসব লোক সেখানে ছিল সেটা পুলিশ, বাদী ও সাক্ষীরা জানলো কিভাবে !
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ মুনসুর গাজী, তার ছেলে ও জামাতাদের জব্দ করতে বিডিআর হত্যা মামলার দু’ আসামী এক সময় মাদক মামলায় জেল হাজতে থাকা আরমান ও লিন্টু যোগসাজস করে এ আগুন লাগানোর নাটক করেছে।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আরমান হোসেন জানান, তিনি আগুন লাগার ব্যাপারে কিছু জানতেন না।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।