ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা ও দুই স্কুলছাত্র আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রেমিক কামরুল ইসলাম জাফরিকে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে আরও একাধিক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। নিজ পরিবারের আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাই খতিয়ে দেখছে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার রাত ২টা পর্যন্ত রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তার আগে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কামরুল ইসলাম জাফরিকে অনুমান রাত সাড়ে ৮টায় একই আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে কামরুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল মামুন। আদালতের বিচারক তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাকে আদালত থেকে কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়।
আদালতে রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেন, তার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। তাকে অবজ্ঞা-অসম্মান করত। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল খুবই অশান্তিপূর্ণ। কেউ পরস্পরকে বিশ্বাস করতেন না। তাকে অবিশ্বাস করার জন্য তিনিও স্বামীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেননি। তাকে প্রায় মারধর করার কারণে বাড়িতে স্বজনদের নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছিল।
তিনি জানান, এসব কারণে এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সে তার এসব কষ্টের কথা প্রেমিক তার সহকর্মী স্কুলশিক্ষক কামরুল ইসলাম জাফরিকে জানাত। তার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার কারণে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে পরস্পরের প্রতি নিজেরাই প্রেমাসক্ত হয়ে পড়েন। সে কারণে পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে প্রেমিকসহ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
দীর্ঘ প্রায় ১২ পাতার ওই জবানবন্দিতে দিপা আরও পারিবারিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন আদালতে, যা মামলার তদন্তে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
ওই সূত্র আরও জানায়, পরকীয়ায় আসক্ত দিপা ও কামরুল তাদের দুই ছাত্রকে লাশ গুমের জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত করা ও লাশ মাটিচাপা দেয়ার কাজে ব্যবহার করেছিল। এ জন্য তাদের ৩০০ টাকা দিয়েছিল। তাদের উপবৃত্তির টাকা ও পরীক্ষার ফলাফল ভালো করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কামরুল।
এ বিষয়ে আদালতে স্পষ্ট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই ছাত্র সবুজ ইসলাম (১৭) ও রোকনুজ্জামান (১৭)। আদালত তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কিশোর বয়স বিবেচনা করে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে এবং অপর আসামি দিপাকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রংপুর পুলিশের এএসপি (সার্কেল-১) সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত আছে কি না এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।