রোববার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাস ভবনের ভেতর তছনছ এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। বাস ভবনের শোয়ার ঘর থেকে বাথরুম, রান্নাঘরসহ সবখানে তারা ভাঙচুর চালায়। সে সময় তারা বাস ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাস ভবনের সামনে থাকা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। বিপুলসংখ্যক পুলিশ নীলক্ষেতের দিক দিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
সে সময় কলাভবন ও মল চত্বর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
তখনও বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হয়নি। দোতলায় দুটি কক্ষে বাতি জ্বলছে। সে বাতির আলো ফিনকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভাঙা কাচের জানালা দিয়ে যতটুকু আলো বাইরে আসছে, তা আসবাব পোড়ানো আগুনের শিখায় ফিকে হয়ে আসছে বটে।
বাইরে লেলিহান আগুন। সোফা আর কাঠ পোড়ানো আগুনের শিখা আকাশপানে। ভেতরে তাণ্ডব। বাড়ির পেছনে ততক্ষণে দুটি প্রাইভেটকারও পুড়ে ছাই। যেন এক টুকরো নরকের রূপ। কে বলবে, রাত ১২ টার আগেও সব সাজানো, গোছানো ছিল! অথচ রাত ১টা বাজার আগেই সব শেষ।
সবাব আর গাড়ি পোড়ানো আগুনের তেজ তখন কমে এসেছে। দগদগ করছে আগুনের কুণ্ড। ততক্ষণে বিদ্যুতের লাইনও বিচ্ছিন্ন হলো। ঘোর আঁধার। পুরানো গাছগুলো আঁধারকে আরও ঘনীভূত করেছে। আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদ উঁকি দিয়ে আবারও মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাড়িতে তখন শুধু ধংসলীলার চিহ্ন। বিষাদের রেখা সবার ললাটে। এভাবে কেউ ধংস চালাতে পারে, এটিই যেন সবার প্রশ্ন! নীচতলা থেকে উপরতলা। এক চিলতে জায়গাও বাকি নেই যেখানে হিংসের থাবা পড়েনি। চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশেও এমন তাণ্ডব হয় না। গেস্ট রুম থেকে বেডরুম। রান্না ঘর থেকে বাথরুম। সর্বত্রই ভাঙ্গার খেলা। ফ্রিজ, টেলিভিশন, চেয়ার, টেবিল, আলমারি থেকে শুরু করে ছোট্ট একটি খেলনাও বাদ যায়নি।
প্রথমে নীরব দর্শক ছিলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। পরে সপরিবারে বাড়ির কোনো এক আঙ্গিনায় লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। ধংসের পর আর ঘরে ঢুকতে পারেননি তিনি। বাইরে একটি চেয়ারে প্রায় নির্বাক হয়ে বসে আছেন শেষ রাতেও।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অনেক আন্দোলন দেখেছি। কিন্তু এমন তাণ্ডব দেখিনি। হত্যার পরিকল্পনাই ছিল হয়ত। নইলে বেডরুমে ঘুমন্ত মানুষগুলোর ওপরে এভাবে হামলা হতে পারে না। ওরা কিছুই আর অবশিষ্ট রাখেনি। ঘরে পা রাখারও উপায় নেই। সর্বোচ্চ ক্ষতিই করে ছিল। অথচ কোটা সংস্কার সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ার। আমরা এখানে কিই-বা করতে পারি। তিনি বলেন, এই ঘটনার দুঃখ জানানোর ভাষা নেই। কারা করেছে, কি উদ্দেশ্যে করলো সরকার অবিলম্বে তার ব্যবস্থা নিক।
ভিসি ভবনেই প্রায় ৩৪ বছর ধরে পিয়নের চাকরি করছেন ইলিয়াস। মুহূর্তের তাণ্ডবে তিনি বাকরুদ্ধ। কথা সরছিল না। ধীর কণ্ঠে বলেন, দশ মিনিটেই শেষ করে দিয়ে গেল। কত মূল্যবান জিনিস। ভাঙল উল্লাস করে করে। এমন হামলার ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। বাইরের লোকও এসেছিল।