নিয়োগে কোটা থাকছে না পর্যালোচনা সাপেক্ষে বাস্তবায়ন হোক

সম্পাদকীয়: সরকারি নিয়োগে কোনো ধরনের কোটা থাকছে না বলে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ ঘোষণা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু নারী, প্রতিবন্ধীসহ কেউই কোটা চায় না, সেহেতু কোটা পদ্ধতি থাকছে না।

অন্যদিকে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ দেয়ার পথও খোলা রেখেছেন তিনি। তবে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

জানা যায়, ৫৬ শতাংশ কোটার বিপরীতে ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে অন্তরায় ও বৈষম্য দাবি করে এর সংস্কারের আন্দোলন করে আসছিল ছাত্ররা।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান থাকলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কোটা প্রথা রয়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। ফলে দেশে শিক্ষার হার বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোটাপদ্ধতির সংস্কার সময়ের দাবি ছিল।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে তুলে আনার জন্য কোটার প্রয়োজন রয়েছে, এটি স্বীকার করেই বলতে হয়, পর্যায়ক্রমে কোটা কমিয়ে আনার বহু সুপারিশ এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি কখনও। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারে সাধারণ ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তবে সংস্কার নয়, একেবারে বাতিলের ঘোষণাই দিয়েছেন তিনি। যদিও ছাত্রদের দাবি ছিল এটি কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। আমরা মনে করি, সরাসরি বাতিল না করে কিছু সময় পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া মানুষদের তুলে আনার জন্য সীমিত পর্যায়ে কোটা রাখা দরকার। এর আগে ঢাবির উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি এবং বিশিষ্টজনরাও ছাত্রদের দাবি মেনে কোটা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এর আগে ছাত্ররা কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও সুনির্দিষ্ট সময়সীমার দাবি করে আসছিলেন। এখন তাদের উচিত হবে ক্লাসে ফিরে যাওয়া এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির জন্য সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। কোটা পদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলন ছিল অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। এমনকি ৮ এপ্রিল আকস্মিক পুলিশের মারমুখী হওয়া, হলে হলে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পেটানো, রক্তাক্ত নির্যাতনের পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বসে ছাত্ররা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেন। কিন্তু দুজন মন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্য ছাত্রদের আবারও আন্দোলনে ফিরিয়ে আনে। অতীতেও মন্ত্রী-নেতাদের ‘অনর্থক’ বক্তব্যের কারণে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।

দমন-পীড়ন করে ও পাল্টা উসকানি দিয়ে যৌক্তিক কোনো দাবি দমিয়ে রাখা যায় না তা যেমন সত্য, তেমনি উপাচার্যের বাসভবনে হামলা-ভাংচুরের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাসহ যে কোনো সহিংসতাই অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে গভীর রাতে ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করে যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থায় সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তবে মনে রাখা দরকার, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সমালোচনা কাম্য নয়, তেমনি অধিকারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বস্তুত, উগ্র অবস্থান কখনও ভালো ফল বয়ে আনে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে দাবিকারীরা যেমন কঠোর ছিল, তেমনি সরকারপ্রধানও একেবারে বাতিলের ঘোষণা দিয়েেেছন; কিন্তু বাস্তবতা বলে একটি মধ্যপন্থার অবস্থান বেশি যৌক্তিক। সংবিধান মোতাবেক বৈষম্য দূর করা, মানসম্মত সিভিল সার্ভিস গঠন, সুযোগের সমতা সৃষ্টি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক একটি স্থিতিশীল অবস্থা বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।