ওয়ারী থানার ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘ক্রসফায়ারে’ রাকিব হত্যা সাজানো নাটক

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রির্পৌট: ঢাকার কাপ্তানবাজারে ‘ক্রসফায়ারে’ রাকিব হাওলাদারকে (১৫) হত্যার অভিযোগে ওয়ারী থানার ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। রাস্তা থেকে ধরে থানায় নিয়ে নির্যাতনে হত্যার পর রাকিব হাওলাদার ক্রসফায়ারে মারা গেছে বলে নাটক সাজানো এবং থানা থেকে বাসায় লোক পাঠিয়ে তার পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগে বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ২০১৩ সালের ১৫ (১,২,৩ ও ৪) ধারায় মামলা করেছেন ওয়ারী থানাধীন ১৬, মহাজনপুর লেন, বনগ্রামের বাসিন্দা নিহতের মা রীতা আক্তার (৩৩)।

সকালে মামলাটি দায়েরের পর বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম, এসআই জ্যোতি ও সোর্স মোশাররফসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। পাঁচজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বাদীর আইনজীবী এমদাদুল হক লাল আদালতে শুনানিকালে বলেন, নিরপরাধ ছেলেকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে থানায় নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর আসামিরা ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়েছেন। প্রধান আসামি থানার ওসি নিহতের নানাকে অর্থাৎ বাদীর বাবাকে ফোন করে জানায়, তার নাতি ক্রসফায়ারে মারা গেছে। পরে বাদী ও আত্মীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিহতের ওপর বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান। আরও বলেন, দাগী অপরাধীদের ক্রসফায়ারে দেয়া হলে আমরা দেখি ও জানি। কিন্তু নিরপরাধ কোমলমতি কিশোর যার নামে থানায় কোনো জিডি কিংবা মামলা নেই তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হল। বিষয়টি এমন নয়তো যে কোনো এক পক্ষের ক্ষোভ মেটাতে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা ক্রসফায়ারের নামে নিজেরাই খুনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের ভূমিকা তাহলে কী। বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে অবশ্যই প্রকৃত ঘটনা ও রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আদালতের আদেশ প্রার্থনা করেন। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিহত রাকিব বাসা হতে বের হয়ে কাপ্তানবাজার পোল্ট্রি মোড়ে পান আনতে যান। কোনো মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই ওয়ারী থানায় ধরে নিয়ে যায়।

বাদী সংবাদ পেয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে থানায় পৌঁছে এসআই জ্যোতির কাছে ছেলের আটকের কারণ জানতে চান। জবাবে এখন কিছুই বলতে পারব না বলে জানায়। বলেন, প্রাপ্ত তথ্য যাচাই চলছে, তুমি এখন চলে যাও। বাদী এ সময় ওসি রফিকুল ইসলামের কক্ষ থেকে তার ছেলের চিৎকার শুনতে পায়। ওই সময় আসামি জ্যোতি ছেলেকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে থানা থেকে বের করে দেন। রাত আড়াইটায় বাদী ফের থানায় যান। এ সময় ওসিও রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পান। তখন তিনি দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমের মধ্যে ঢোকেন। দেখেন তার ছেলের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা, হাতে হাতকড়া পরানো, পরনে প্যান্ট নাই, গায়ের জামাকাপড় ছেঁড়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখমের চিহ্ন। ওই সময়ও আসামি রফিকুল ও সেলিম রাকিবকে অনবরত লাথি মারছিল। সন্তানের ওই অবস্থা দেখে আর্তনাদ শুরু করলে আসামিরা বাদিনীকে থানা থেকে বের করে দেন। পরদিন সকাল ৯টায় থানায় গেলে আসামিরা বাদিনীকেও গ্রেফতারের ভয় দেখায়। থানা থেকেও বের করে দেয়। এরপরও রাত ৯টা পর্যন্ত বাদী ও তার আÍীয়স্বজন থানার বাইরে অবস্থান করে। ছেলের খবর না পেয়ে চলে আসেন। গত ৬ এপ্রিল বাদী আবার থানায় যান। সন্তানের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় ফিরে আসেন। এ অবস্থায় সকাল ১১টার দিকে ওসি রফিকুল ইসলাম রাকিবের নানা আবদুল লতিফকে ফোনে জানায়, ক্রসফায়ারে সে মারা গেছেন। এরপর বাদী ও তার আÍীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরা ছেলের ডান হাত ভাঙা, মাথা ফাটা, পেটে আঘাতের চিহ্ন, পা দুটি জোড়ায় জোড়ায় থেঁতলানো ও ভাঙা দেখতে পায়। এরপরও থানা থেকে বিভিন্ন লোক বাদীর বাসায় এসে এ বিষয়ে কোনো মামলা করলে উল্টো মিথ্যা মামলা জড়ানোর হুমকি দেয়। তাই নিরুপায় হয়ে বাদী আদালতে এসে মামলা করলেন।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।