বি.এইচ.মাহিনী (অভয়নগর) : যতদূর চোখ যায় শুধু সোনা আর সোনা। কিন্তু এ সোনা যে কৃষকের জন্য শুধুই মরিচিকা ও আলেয়ার আলো তা কে জানতো! বোরো ধানের ফসল ভরা মাঠ যেন দৃশ্যত: স্বর্নালী সোপান। কিন্তু তা বাস্তবে অভয়নগর তথা ভৈরব উত্তর জনপদের কৃষকদের জন্য শুধুই হতাশার। যশোরের অভয়নগরের কৃষকরা বোরো চাষের শুরুতে যে সোনালি স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ কারেন্ট পোকার আক্রমনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। কারেন্ট পোকার আক্রমনে যখন কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গেছে, ঠিক তখন ব্লক সুপারভাইজার জানালেন এটি এক প্রকার ব্লাস্ট রোগ। এর আক্রমন প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রতিষেধক ঔষধের প্রেসক্রিপশনও দেয়া হয়েছে। কৃষক ও ব্লক সুপারভাজারের এমন দ্বিমূখী বক্তব্যকে সাধারণ মানুষ গোজামিলের আশ্রয় বলে মনে করছেন।
অভয়নগর উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নওয়াপাড়ার বোরো আবাদ হয়েছে হাইব্রিড ৬,১০০ হেক্টর এবং উফসী ৮,২২০ হেক্টর মিলে মোট ১৪,৩২০ হেক্টর জমিতে। গতবছর আবাদ হয়েছিল ১৩,৭০০ হেক্টর জমিতে। গতবারের তুলনায় এবার বেশি আবাদ হয়েছে ৬২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন সম্ভবনাও ছিল প্রত্যাশিত বা কোথাও কোথাও প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই ধানের ক্ষেতগুলোতে কারেন্ট পোকার আক্রমন সে প্রত্যাশার গুড়ে বালি দিয়েছে বলে জানা গেছে বোরো চাষীদের কাছ থেকে।
সরেজমিনে অভয়নগরের ভৈরব উত্তর জনপদের শ্রীধরপুর, বাঘুটিয়া, শুভরাড়া ও দক্ষিণ নড়াইলের বিছালী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এর সচিত্র চিত্র। কারেন্ট পোকার আক্রমনে বোরো ধান গাছের শীষের উপরিভাগে কিছু ধান ভালো থাকলেও নিচের দিকের অবস্থা খুবই খারাপ। ধানের শীষের শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগই দানাহীন। যার ফলে প্রতিবিঘা জমিতে প্রত্যাশার ৭০-৮০ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকের চোখের স্বপ্ন আজ ফোটা ফোটা পানিতে পরিণত হয়ে ঝরে পড়ছে কারেন্ট পোকার আক্রমনে। কিছু চাষী এর প্রতিকারের চেষ্টা করলেও তা বিশেষ কাজে দেয়নি। ধানের শীষগুলো দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ধানে ভরা কিন্তু কাছে গেলে প্রকৃত রূপ দেখা যাচ্ছে। কিছু ধান কেটে মাড়াই করার পর দেখা গেছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। শ্রীধরপুর ইউনিয়নের এক চাষী প্রতিবেদককে বলেন, তার ১৭ কাঠা জমিতে মাত্র ৮ মণ ধান হয়েছে।
এদিকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সিংগাড়ী গ্রামের বিল কালমেঘের বোরোধান চাষী আব্দুল মান্নান শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, আমার ঘেরের দেড় বিঘা জমিতে প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে কিন্তু এবার কারেন্ট পোকার আক্রমনের ফলে ধান পেয়েছি মাত্র ২২ মণ। প্রাপ্ত ধান বিক্রয় করা টাকা উৎপাদন খরচের তুলনায় একেবারে নগণ্য।
এ ব্যাপারে ব্লক-সুপারভাইজার শেখ আঃ মান্নানের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মূলত এটি একটি ব্লাস্ট রোগ। আমরা এর প্রতিকারের জন্য প্রতিষেধক নাম সম্বলিত প্রচারপত্র ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ (প্রেসক্রিপশন) চাষীদের মাঝে দিয়েছি। আশা করছি তেমন অসুবিধা হবে না।
তবে সরেজমিনে ব্লক সুপারভাইজারের দেয়া এ তথ্যের সাথে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি বিঘা জমিতে প্রত্যাশিত উৎপাদনের চেয়ে এত কম ফলন হয়েছে যে, কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা উৎপাদন খরচের অর্ধেক বলে জানিয়েছেন ভৈরব উত্তরের বোরো চাষীরা।