যশোরের মণিরামপুরে দুটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড পড়তে বাধ্য করার অভিযোগ

তরিকুল ইসলাম তারেক, যশোর: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ইত্যা ও পলাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, ওই দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ‘জননী পাবলিকেশন্স’ নামের একটি গাইড কোম্পানির সঙ্গে মোটা টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে বাধ্য করছেন। শতভাগ শিক্ষার্থী গাইড কিনেছে কিনা তা যাচাই করতে ইতিমধ্যে‘ ত্রৈমাসিক পরীক্ষা’ নামের একটি পরীক্ষাও নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। আর তাও নেওয়া হয়েছে ওই কোম্পানির সরবরাহ করা প্রশ্নে। যদিও বছরের দুটি পরীক্ষার বাইরে কোনো পরীক্ষা নেওয়ার বিধান নেই স্কুলগুলোতে। আর কোনো গাইড কোম্পানির সরবরাহ করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়াটাতো আরো গুরুতর।
বছরে দুটি পরীক্ষা নেওয়ার বিধান চালু হয়েছে বেশ ক’বছর হলো। একটি বছরের মাঝামাঝি, অন্যটা বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হয়। এর বাইরে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে পরীক্ষা নিয়েও থাকে, তা হতে হবে বিনামূল্যে এবং শ্রেণিশিক্ষকের করা প্রশ্নে। কোনো গাইড থেকে শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন না কোনোমতেই।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এই বিধান মানছেন না মণিরামপুরের ইত্যা হাইস্কুল ও পলাশী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানরা। তারা ‘জননী পাবলিকেশন্স’ নামের একটি গাইড কোম্পানির কাছ থেকে বছরের শুরুতেই মোটা টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে গাইড কিনতে চাপও দেওয়া হয়েছে। শেষে সব শিক্ষার্থী গাইড কিনেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ত্রৈমাসিক পরীক্ষার আয়োজনও করে প্রতিষ্ঠান দুটি। এই ক্ষেত্রে তারা পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে ফিস নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রথমে পরীক্ষা দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু তাদের নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে বাচ্চাদের গাইড বই কিনতে ও পরীক্ষার ফিস দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন অভিভাবকরা।
প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধানরা টাকার বিনিময়ে জননী পাবলিকেশন্সের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকারও করেছেন অকপটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জননী পাবলিকেশনের সরবরাহ করা প্রশ্নে উপজেলার ইত্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ত্রৈমাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা-২০১৮ নামের একটি পরীক্ষা শুরু হয় এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে। এতে অংশ নেয় ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী। পরীক্ষায় প্রবেশ মূল্য নেওয়া হয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী প্রতি ২০০ টাকা। ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দিনে ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর প্রশ্নপত্রের ওপর ত্রৈমাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা-২০১৮ লেখা থাকলেও বিদ্যালয়ের নাম লেখা নেই। শিক্ষার্থীরা বলছে, জননী গাইড থেকেই প্রশ্নগুলো করা হয়েছে।
একইভাবে পলাশী বহুমুখী হাইস্কুলের প্রায় ৬০০ পরীক্ষার্থী জননী পাবলিকেশন্সের প্রশ্নপত্রে ত্রৈমাসিক পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইত্যা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে,‘ বছরের শুরু থেকেই জননী কোম্পানির লোকজন বারবার আমাদের স্কুলে এসে তাদের বই কেনার জন্য বলতো। স্যারেরা গাইড থেকে পড়া দেয়। যাদের গাইড নেই, তারা পড়া পারে না। তখন স্যারেরা মারধর করে।’
এবিষয়ে ইত্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার সরকার বলেন, ‘নিয়ম নেই জানি; তারপরও মেধা যাচাইয়ের জন্য আমি পরীক্ষা নিয়েছি। ফিস বেশি ধরলেও সবাই পরীক্ষা দেয়নি। যারা দিয়েছে, তারা পঞ্চাশ টাকা করে ফিস দিয়েছে।’
জননী গাইডের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়াটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
পলাশী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারাতো আমাদের লোক। এসব বিষয় নিয়ে ভেজাল করেন কেনো? স্কুলে আসেন, কথা হবে।’
জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ #

Check Also

আশাশুনির কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ধ্বস।।আতঙ্কিত এলাকাবাসী

আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিতএস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের মাসিক রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।