রিয়াজুল ইসলাম: নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রামে নতুন জামা-কাপড় কেনার জন্য বাবার কাছ থেকে চাহিদামত টাকা না পেয়ে অভিমানে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে মামুন সরকার (২৩) নামে এক বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র আতœহত্যা করেছে। নিহত মামুন উপজেলার বড় পিঙ্গুইন গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে এবং ঢাকার বেসরকারী ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাঈদ জানান, শুক্রবার (১১ মে) মামাতো ভাইয়ের সুন্নাতে খাৎনার অনুষ্ঠান ছিল। সে অনুষ্ঠানে যাবার জন্য মামুন নতুন জামা-কাপড় কিনতে বৃহস্পতিবার বিকালে মামুন বাবার কাছে টাকা চায়। কিন্তু চাহিদামত টাকা না পেয়ে অভিমানে রাত আটটার দিকে সে সবার অগোচরে নিজ শোবার ঘরের তীরের সঙ্গে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস নেয়। কিছুক্ষণ পরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে স্বজনেরা জানালার ফাঁক দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তাকে নামিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের লাশ দাফন করা হয়েছে।
মোটরসাইকেল না দেয়ায় প্রকাশ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা
জয়পুরহাটে ফজলে রাব্বী (২০) নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বীর পরিবারের অভিযোগ, মোটরসাইকেল দিতে রাজি না হওয়ায় রাব্বীকে ওই এলাকার রেজা নামে এক যুবক ও তার সহযোগী হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় রেজা ও তার সহযোগীকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জয়পুরহাট শহরের বিহারীপাড়া (সওদাগর) সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু সড়কে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফজলে রাব্বী জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রোয়ার গ্রামের মালয়েশিয়াপ্রবাসী সেলিম রেজার ছেলে। সে জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছেলে ফজলে রাব্বী যাতে সুন্দর ও ভালো পরিবেশে থেকে লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হতে পারে- এ জন্য জয়পুরহাট শহরের জামালগঞ্জ সড়কের বিহারীপাড়া মহল্লায় বাসা ভাড়া নেয় তার পরিবার। মা লিপি আরাকে নিয়ে ওই ভাড়ার বাসায় থেকে জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজে লেখাপড়া করত রাব্বী। ভালো করে লেখাপড়া করার জন্য বাবা তার ছেলের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতেন। তাই ছেলের সখ পূরণ করতে তাকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ওই সখের মোটরসাইকেলটিই তার কাল হয়ে গেল।
জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজের ছাত্র রাব্বী এবার মঙ্গলবাড়ি কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার তার পরীক্ষা শেষ হয়।
ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতে রাত ১১টার নৈশকোচে তার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী রাব্বী প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঢাকাগামী নৈশকোচের টিকিটও কেনা হয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই একই মহল্লার যুবক রেজা তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে বিহারীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কে নিয়ে যায়।
সেখানে যাওয়ার পর রেজা রাব্বীর কাছ থেকে তার মোটরসাইকেলটি চায়। কিন্তু রাব্বী রাতে ঢাকা চলে যাবে বলে রেজাকে মোটরসাইকেল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও ঝগড়া হয়।
এর একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রেজা ও তার অপর সহযোগী পাশের একটি ওষুধের দোকান থেকে হকিস্টিক এনে রাব্বীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে রাব্বীর মৃত্যু হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মমিনুল হক জানান, ময়নাতদন্তের জন্য রাব্বীর লাশ রাতেই জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার নিহত ফজলে রাব্বীর মা লিপি আরা বাদী হয়ে রেজাসহ ২ জনকে আসামি করে জয়পুরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
শনিবার মালয়েশিয়া থেকে বাবা সেলিম রেজা বাংলাদেশে ফিরে আসার পর রাব্বীর লাশ দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।