ডেইলি সিয়াসাত : ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুড়গাঁও জেলায় খোলা স্থানে জুমার নামাজ আদায় হয় এমন ১২৫টি স্থানের মধ্যে মাত্র ৩৭টি স্থানে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। বাকি ৮৮টি স্থানে জুমার নামাজ আদায়ে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা করা হয়। জুমার নামাজ আদায় হয় এমন১২৫টি এলাকা চিহ্নিত করার পর গত বৃহস্পতিবার এসব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জুমার নামাজ তত্ত্বাবধানে ৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনগুলোর হুমকির মুখে ৩৭টি স্থানে পুলিশি পাহাড়ায় গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করা হয়েছে। মুসলিমদের খোলা স্থানে জুমার নামাজ আদায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপে গত কয়েক সপ্তাহ যাবত আন্দোলন করে আসছিল স্থানীয় হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনগুলো। এ নিয়ে হিন্দু মুসলিমদের মাঝে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। গত দু’ সপ্তাহ যাবত পুলিশি নিরাপত্তায় জুমার নামাজ আদায় করে মুসলিমরা। খোলা স্থানে জুমার নামাজ আদায়ের সময় হিন্দু চরমপন্থীদের উস্কানিমূলক ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ছয় যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সপ্তায় অনেক এলাকায় হিন্দু চরমপন্থীদের বাধার মুখে খোলা স্থানে নামাজ আদায় করতে পারেনি মুসলিমরা। এ নিয়ে সহিংসতা প্রতিরোধে সোচ্ছার ছিলেন মানবাধিকার কর্মীরাও। মুসলিমরা যাতে কোনোভাবেই এ উস্কানির ফাঁদে পা না দেয় বারবার সতর্ক করেছেন তারা। মানবাধিকার কর্মী রাখি সেহগাল মুসলমানদের সতর্ক করে আসছিলেন, বাজরং দলের কর্মীরা নামাজের সূত্র ধরে পরিস্থিতি নাজুক করার চেষ্টা করছে। মুসলমানরা যেন সতর্ক থাকে। গত সপ্তায় ওইসব স্থানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মীরা পূজা করার ঘোষণা দিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা দূরে সরতে বাধ্য হন।
এছাড়াও খোলা স্থানে মুসলিমদের নামাজ আদায়ে হরিয়ানা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার একটি বক্তব্যও বিতর্কের নব সূচনা করেছিল। তিনি বলেন, ‘খোলা জায়গায়, রাস্তাঘাটে যত্রতত্র নামাজ পাঠের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু মসজিদ বা ঈদগার ঘরে বসেই নমাজ পড়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা সরকারের দায়িত্ব।’ খাট্টার এও বলেন, জায়গার অভাব থাকলে যে কেউ ঘরে বসেই নমাজ পড়তে পারেন। এরপর বিতর্কের সূত্রপাত হতেই তিনি বলেন ‘আমি কোনও কিছু (নামজ পাঠ) বন্ধ করতে বলিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তব্য।’ এছাড়া আরও বিতর্ক জন্ম দেন মন্ত্রিসভার সদস্য অনিল ভিজ। ভিজ বলেন, ‘মাঝেমধ্যে চাইলে কেউ নামাজ পড়তেই পারেন। সেই নমাজ পাঠের ধর্মীয় স্বাধীনতা তো আছেই। কিন্তু যে কেউ প্রকাশ্যে যে কোনও জায়গা দখল করে নমাজ পড়তে পারেন না। সরকার এটা চলতে দিতে পারে না।’ অভিযোগ উঠে, গত সপ্তাহে গুড়গাঁওয়ে অন্তত ৬টি জায়গায় শুক্রবারের নামাজ আদায়ের সময় বাধা দেওয়া হয়েছে। নামাজ আদায় বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে।
নামাজ পাঠে বাধা দেওয়ার সেই ঘটনাগুলো ঘটেছে ওয়াজিরাবাদ, অতুল কাটারিয়া চক, সাইবার পার্ক, বাখতাওয়ার চক ও সাউথ সিটিতে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ওই জায়গাগুলিতে শুক্রবারের নামাজ আদায়ে বাধা দিতে দেখা গিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, হিন্দু ক্রান্তি দল, গোরক্ষক দল ও শিবসেনার কর্মী, সমর্থকদের।