ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদকে স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের মদদে তার চাচাতো ভাই ইউপি চেয়ারম্যান বিলাল আহমদ ও তার সহযোগীরা খুন করে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত ফারুকের স্ত্রী রেহেনা বেগম।
শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। খুনিদের গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করতে তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রেহেনা থানা পুলিশের মামলা না নেওয়া ও স্থানীয় বিরোধের কারণে তার স্বামীকে যে খুন করা হয় সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নিহত ফারুকের ভাতিজা মেডিকেল কলেজ ছাত্র বায়জিদ আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২২ জুন দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা নৃংশসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে তার স্বামীকে হত্যা করে বিলের পানিতে লাশ গুম করে রাখে। ফারুক ব্যবসার পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী একজন মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
নিখোঁজ হওয়ার পর পাতলাচুরা বিলের পাড়ে তার পরনের জামা কাপড় পাওয়া যায়। ২৩ জুন লাশের অনুসন্ধান করে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল লাশের সন্ধান করে ব্যর্থ হয়। পরদিন ২৪ জুন পাতলাচুরা বিলে তার লাশ পাওয়া যায় । লাশের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও গলাকাটা ছিল। লাশ গুম করতে লাশের গলায় ইট বেঁধে পানিতে ফেলে রাখে খুনীরা।
লিখি বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও পৃষ্টপোষকতায় স্থানীয় পর্যায়ে অন্যায় ও নানা অপকর্মের রাজত্ব কায়েম করেছেন তারই চাচাতো ভাই উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিলাল আহমদ। বিলালের সাথে নানা কারণে র্দীঘদিন ধরে তার স্বামীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিলালের নানা অন্যায় ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করায় সে আমার স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত ছিল। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থাকলেও বিলালের অন্যায় কাজে কোনোদিন প্রশ্রয় দেননি।’
তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় তিনি ২৫ জুন সন্ধ্যায় ইউপি চেয়ারম্যান বিলাল আহমদ ও তার ১০/১২ জন সহযোগীকে আসামি করে ছাতক থানায় এজাহার দেন। পুলিশ তা গ্রহণ করে কপিও দেয়। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মামলা রেকর্ড না করে এজাহারের রিসিভ কপিতে ঘষামাজা করে ফেরত দেয় পুলিশ।
এমনকি একই তারিখ দেখিয়ে অন্যজনকে বাদি বানিয়ে থানায় অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করানো হয়। যার জিআর নং-১৮০/১৮। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে ২৭ জুন সুনামগঞ্জ আমল গ্রহনকারী জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ২৮ জুন আদালত তার দায়ের করা মামলাটি পুলিশের দায়ের করা মামলার সাথে সংযুক্ত করে পদক্ষেপ নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন এবং আগামী ৮ জুলাইর মধ্যে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করারও নির্দেশ দেন। আদালত তার নির্দেশে থানা পুলিশের দায়ের করা মামলাটি যে আইনত হয়নি তাও উল্লেখ করেন।
ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাতকে আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম মজুমদারের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী রেহেনা বেগম।
এজাহারে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের চাচাতো ভাই বিল্লাল আহমদকে আসামী করায় থানা পুলিশ মামলা গ্রহন করেনি। অবশেষে নিহত ফারুকের স্ত্রী বাদি হয়ে আদালতে এ মামলা দায়ের করেন । আদালত থানায় মামলাটি এফআইরভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে হত্যা মামলা গ্রহন না করায় ছাতক থানার ওসিকে ৪কার্য দিবসের মধ্যে কারন দর্শানোর আদেশ দেন।
উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের পুরান মৈশাপুর গ্রামের মৃত মাষ্টার আব্দুস সাত্তারের পুত্র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া গত শুক্রবার নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। শনিবার সকালে গ্রাম সংলগ্ন পাতলাচুড়া বিলের কচুরিপনায় পড়ে থাকা তার ব্যবহৃত জুতা ও লুঙ্গি এবং রোববার দুপুরে এ বিল থেকেই তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ফারুক মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী রেহেনা বেগম বাদী হয়ে উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও থানা পুলিশ এ এজাহার গ্রহন করেনি।
মামলার বাদী নিহত ফারুক মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগমের অভিযোগ, মামলার এজাহার পরিবর্তন করতে বলেন থানার ওসি। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের নাম বাদ দিয়ে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন। আসামীর নাম বাদ না দেয়ার ৫ দিনেও আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে নিহত ফারুকের স্ত্রী আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ছাতক থানার এসআই অরূপ সাগর বাদী হয়ে একই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে থানায় মঙ্গলবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নিহতের ভাই আকিক মিয়া জানান, ঘটনার পরদিন থেকেই থানায় এজাহার নিয়ে একাধিকবার যাওয়া হয়েছে। মামলার আসামীদের রক্ষা করতে থানার ওসি সে সময় থেকেই বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে নিহতের পরিবারের অজান্তেই থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। এটি ওসির একটি সাজানো নাটক।
ছাতক থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, ফারুক মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় এসআই অরূপ সাগর বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী রেহেনা বেগম যে এজাহার থানায় দিয়েছিলেন তা পরিবর্তন করে দায়ের করার কথা বলা হলে তিনি এজাহার পরিবর্তন করে আর থানায় আসেননি বলে তিনি জানান।
অপরদিকে আ’লীগ নেতা ফারুক মিয়া হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, শোকর্যলি, ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ছাতক উউপজেলা আ’লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বুধবার বিকালে পৌরশহরের ট্রাফিক পয়েন্টে আ’লীগের উপজেলা আহবায়ক আবরু মিয়া তালুকদারের সভাপতিত্বে ও জেলা পরিষদ সদস্য আজমল হোসেন সজলের পরিচালনায় অনুষ্টিত এ প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরি।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুনামগ্ঞ্জ জেলা আ’লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরি,অনুষ্টিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, জয়নাল আবেদীন দলা মিয়া, নোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান খালিক রাজা, ছাতক সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যন ছালিক মিয়া,দোয়ারা উপজেলা আ’লীগের যুগ্ন আহবায়ক শামিমুল ইসলাম,জাউয়া আ’লীগের ইউপি সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার,দোলার বাজার ইউপি আ’লীগ সভাপতি আশিক মিয়া, প্রমুখ।
সমাবেশের পূর্বে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কালো ব্যজ পড়ে খন্ড-খন্ড মিছিল সহকারে লোকজন জড়ো হতে থাকে। এসময় ছাতক শহর মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে। মিছিলকারিরা ফারুকের হত্যাকারিদের গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।