ক্রাইমবার্তা রিপোট: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে দলের হাইকমান্ড আরিফুল হক চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনীত করায় দলে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাঁচজনই ছিলেন আরিফের বিপক্ষে। তাদের মধ্যে চারজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও কোনো অবস্থাতেই বিরত থাকবেন না সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর শুক্রবার রাত পর্যন্ত কয়েকটি ঘরোয়া মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। নয়া দিগন্তকে সেলিম বলেন, আমি আবারো বলছি সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি ভুল করেছে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপির এই ভুল সিদ্ধান্তের জবাব দেবেন।
তিনি বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ সারা বিশ্বে আমার হাতে গড়া সৈনিকেরা রয়েছে। বিএনপির মনোনীত যে প্রার্থী সে পলাতক ছিল। দল থেকে বিভিন্ন সময় সে পালিয়ে গেছে। আমি ১৯৭৮ থেকে এ দলের ভেতরে কাজ করছি। আমার নেতাকর্মী যারা প্রকাশ্যে হোক, প্রত্য-পরোভাবে হোক, আমার সাথে থাকবে। আমার যে পরিণতি হবে, আমার সাথে সে পরিণতি ভোগ করতে তারা রাজি আছে।
বৃহস্পতিবার জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দলীয় মনোনয়ন আমাকে দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে দলের সব স্তরের নেতাকর্র্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম বিদ্রোহী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলে এতে নির্বাচনে বিএনপির তিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দলের বাইরে কেউ নির্বাচন করবে না। শেষ পর্যন্ত সেলিম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জামায়াতের অনড় অবস্থান
মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী ঘোষণার জন্য দলের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালানোর পরও বিএনপি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। সরকারের দমন-পীড়ন ও জেল-জুলুমের পরও সিলেটে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ ভালো। জোটের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও জুবায়েরের পক্ষে মাঠে সক্রিয় নেতাকর্মীরা। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নয়া দিগন্তকে জানান, তিনি কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। নগর জামায়াতের এক নেতা জানান, এখনো আমরা আশাবাদী শেষ পর্যন্ত জুবায়েরকে জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, জামায়াত সারা দেশের সব সিটির মধ্যে একমাত্র সিলেটেই জোটের মনোনয়ন চেয়েছিল। জুবায়ের নির্বাচনের মাঠে আছেন এবং শেষ পর্যন্ত থাকবেনÑ এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ক্ষোভ প্রশমনে নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিলে জোটের ঐক্যে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, মূলত আন্দোলন, সংগ্রাম ও জাতীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্যই জোট গঠন করা হয়।
মুসল্লিদের সাথে কামরানের কুশল বিনিময়
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান শুক্রবার টিলাগড়ে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। কামরান মুসল্লিদের বলেন, ‘আমি আপনাদের সেবা করতে চাই। নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ দিন আমি আপনাদের সেবা করেছি। অতীতে আপনারা আমাকে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। এই সহযোগিতা আগামীতে চাই।’ পুণ্যভূমি সিলেটকে দেশের মডেল সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে জানান।
মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী টিলাগড় এলাকায়। স্থানীয় মসজিদে তিনি নামাজ আদায় করে বের হয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন।