শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা দেখে মানুষ স্তম্ভিত : রিজভী ‘খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসার শিকার’

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মহামান্য হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর সর্বোচ্চ আদলত কর্তৃক জামিন স্থগিত করার ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে সরকার নির্দেশিত। যা নজিরবিহীন। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিঘাংসার শিকার।

এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা দেখে দেশের মানুষ হতবাক ও স্তম্ভিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, গতকালও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারিদের ওপর ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। এসময় ছাত্রীদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তা নারীদের ওপর ’৭১-এর হানাদার বাহিনীর নির্মতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আসলে ছাত্রলীগের নামের সাথে ছাত্র নামটি জুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ গোটা ছাত্রসমাজকেই অপমাণিত করেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, সাজানো মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লায় দায়ের করা মিথ্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন- যা নজিরবিহীন ঘটনা। ন্যায়বিচার পাওয়ার মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলো সর্বোচ্চ আদালত এবং জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার। আদালতের উচ্চ পর্যায়ে ভুক্তভোগী মানুষ প্রতিকার পায়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। অবৈধ সরকার নি¤œ আদালতকে সম্পূর্ণভাবে কব্জায় নিয়ে এখন সর্বোচ্চ আদালতকেও হাতের মুঠোয় নিয়েছে কী না সেটি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। হাইকোর্ট জামিন দিলে সে জামিন স্থগিত করা হয় এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় আছেন বলেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ১/১১’র সরকারের দায়ের করা ১৫টি মামলা ক্ষমতার জোরে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘটনাতে কি বিচারের বাণী খুশীতে আনন্দ উল্লাস শুরু করেছিল? রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ আদালতকে সরকারের মুখপাত্রে পরিণত করার বন্দোবস্ত করছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তিন দিন আগে থেকে শুরু হয়ে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারিদের ওপর সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ধারাবাহিক বর্বর পৈশাচিক হামলায় সারাদেশের মানুষ ক্ষোভে ধিক্কার জানাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। ছাত্রীদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তা নারীদের ওপর ’৭১ এর হানাদার বাহিনীর নির্মতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়া আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর কিভাবে পায়ে পিষে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে, তা দেখে দেশের মানুষ স্তম্ভিত ও হতভম্ব। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে গত তিন দিন ধরে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তান্ডব চলছে। গতকাল সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা রড, হাতুড়ী, বাঁশের লাঠি দিয়ে যেভাবে সাপ মারার মতো যেভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তাতে আওয়ামী লীগের সেই লগি-বৈঠার তান্ডবের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নামের সাথে ছাত্র নামটি জুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ গোটা ছাত্র সমাজকেই অপমাণিত করেছে। ভোগ, লালসা, দাপট, খুন, জখমের চেতনায় বর্তমান ছাত্রলীগকে গড়ে তোলা হয়েছে। নৈরাজ্যের বিভিষিকায় দেশ নিমজ্জিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই রক্তে রঞ্জিত। ছাত্রীদের ওপর লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের হিড়িক এক আতঙ্কজনক মাত্রা লাভ করেছে। কোটা আন্দোলনের ছাত্রনেতা রাশেদ কোন অপরাধের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড খাটছে? ধারালো অস্ত্রে মারাত্মকভাবে আহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রনেতা নুরু যাতে চিকিৎসা না পায়, সেজন্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হানা দেয়। চিকিৎসা না দিয়ে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও তাকে বের করে দেয়া হয়। সে গতকালও সাংবাদিকদের সামনে বাঁচার আকুতি জানিয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধরাশায়ী না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনরত ছাত্রনেতা ফারুকের ওপর উপর্যুপরী আঘাত করা হয়। সাহায্যের জন্য একজন মহিলা দ্রুত তার দিকে ছুটে গেলেও তারপরেও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কোনো দয়া দেখায়নি। আহত ছাত্র-ছাত্রীরা চেয়ে থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিয়ে বলেছে-‘আপনাদের কী কিছু বলার নেই? আমরা কোন গণতন্ত্রে বাস করছি, যেখানে আমাদের মত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা নেই। আমাদের প্রতিবাদ কোনো অবৈধ কর্মকান্ড নয়। আমরা কী কোন অপরাধ করেছি? তাহলে কী করে এই গুন্ডারা প্রকাশ্য দিবালোকে আন্দোলকারীদের অপহরণ করার হুমকি দিচ্ছে এবং ছাত্রীদেরকে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে? রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র তারিকুল ইসলাম তারেককে হাতুড়ি, রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সে এখন মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। এভাবে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলনকারিদের ওপর চলছে পুলিশের প্রোটেকশনে ছাত্রলীগের নারকীয় আক্রমণ।

রিজভী বলেন, ঠিক এমনিভাবেই ২০১৪-১৫ সালে এই অবৈধ সরকার পুলিশ-র‌্যাবকে দিয়ে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে গুম আর বিচারবহির্ভূত হত্যার হিড়িক শুরু করেছিল। ছাত্রদলের একজন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ হাঁটুতে শর্টগান ঠেকিয়ে গুলি করে নি-ক্যাপ উড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের নিক্ষিপ্ত গুলিতে কত নেতাকর্মীর যে চোখ অন্ধ হয়ে গেছে তা দেখলে চোখে পানি আসে। শেখ হাসিনা ও তার র‌্যাব-পুলিশের হাত কত নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত তা বলে শেষ করা যাবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে প্রায় দুমাস আগে জাতীয় সংসদে সম্পূর্ণরূপে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আসলে সেদিনই আমরা বলেছিলাম- এই ঘোষণা একটি নাটক ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রতারণা। এখন সেটি অক্ষরে অক্ষরে দৃশ্যমান হচ্ছে। আসলে সেদিন প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে প্রতারণার কৌশল নিয়েছিলেন। আন্দোলনকারিদের প্রতি সরকারের আচরণে এটা আবারো প্রমাণিত হলো যে, শেখ হাসিনা যাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘুঘু চরিয়ে দিতে মোটেই দ্বিধা করেন না। এ ছাড়া গতকাল যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার রিমান্ড ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব আগামী বৃহস্পতিবার ও সোমবার দেশব্যাপী প্রতীকী কর্মসূচি ঘোষণ করেছেন। ঢাকায় নয়াপল্টনস্থ দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ৩টায় বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবরে অবহিতপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার বিএনপির উদ্যোগে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য আমরা ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ এবং মহানগর নাট্যমঞ্চে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। যেকোনো একটিতে আমাদের প্রতীকী অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।