রাশেদের মায়ের আর্তি প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলেকে ভিক্ষা দিন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের সন্তানকে ভিক্ষা চাইলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদের মা সালেহা বেগম। ছেলের চাকরি চান না, তার সব মামলা ও রিমান্ড প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি জানান তিনি। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্রাব) এক সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন দাবি জানান।

সালেহা বেগম বলেন, ভাগ্যক্রমে মঙ্গলবার মিন্টো রোডে আমার ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। পুলিশ আমার বাবুডারে অনেক মারছে। ও বাঁচতে চায়। রাশেদ কোনো অন্যায় করেনি। মানুষের বাসায় কাজ কইরা অনেক কষ্টে বাবুডারে বড় করছি। আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে পাইবেন না। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার বাবুডারে মুক্তি দেন। ও (রাশেদ) তো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না।

‘মা আমাকে যেন আর না মারে, আমাকে আর রিমান্ডে যেন না নেয়, তুমি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রার্থনা করে আমার মুক্তি চাও’- রাশেদ তার মাকে এমন কথা বলেছে উল্লেখ করে সালেহা বেগম বলেন, আমার বাবুডারে আমি একটু ধরতে চাইলে পুলিশ দেয়নি, বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের বাসায় কাজ কইরা তিন সন্তানকে বড় করছি। আমার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। পরের বাসায় আর কাজ করতে পারি না। স্বপ্ন দেখছিলাম, ছেলেটা অনেক বড় চাকরি কইরা আমাদের পরিবার চালাবে অথচ আমার বাবুডারে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করতাছে। আমার ছেলেরে মুক্তি দেন, সে আর আন্দোলন করবে না, শুধু পড়ালেখা করবে।’ এমন প্রতিজ্ঞা করে তিনি প্রধামন্ত্রীর কাছে ছেলের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, রাশেদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমাদের এতদিন কোনো তথ্য দেয়নি। প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে থানা আর মিন্টো রোড, ডিবি অফিসে গিয়ে বসে থেকেছি। বুধবার ভাগ্যক্রমে রাশেদের সঙ্গে দেখা হয়। তাকে ভীষণ মারধর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর মুক্তির দাবি জানাই।

তিনি বলেন, রাশেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। সে একজন সাধারণ মেধাবী ছাত্র। একটি ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। অথচ এ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাশেদের সব মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তির দাবি জানান তিনি।

কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানকে ১ জুলাই মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাড়ি ঝিনাইদহে। বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাশেদের দুই বোন। একজন তার বড়, অন্যজন ছোট। দ্বিতীয় দফায় রাশেদ রিমান্ডে রয়েছেন।

রাশেদকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যরা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুরের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিসির বাসা ভাংচুর ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ফেসবুক লাইভে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে গ্রেফতার মো. রাশেদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জুলাই ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।

Check Also

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কম্বল বিতরণ

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে অসহায় ও দুস্থ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কর্কশিট ও ২০০ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।