নয়া পল্টনে ব্যাপক জনসমাগম:

ক্রাইমবার্তারিপোট   ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনও নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করতে হলে এক নম্বর শর্ত– খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সমস্ত দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেভাবে বুকে চেপে আছে, তার থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার ৮ বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত জোটকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্যান্য সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

দীর্ঘদিন পর রাজপথে সমাবেশ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর রাজধানীতে কোনও সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। গত ৬ মাসে দলের পক্ষ থেকে রাজধানীতে ৭ থেকে ৮ বার সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পুলিশের অনুমতি না থাকায় একবারও সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। এতে রাজধানীতে বড় ধরনের কোনও আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। এজন্য সরকারের অনেক মন্ত্রী ও এমপি বিএনপিকে তিরস্কার করে বলেছেন- বিএনপির আন্দোলন করার কোনও মুরোদ নেই। এখন সরকার দলের নেতারা কি বলবেন? আজকের সমাবেশের লোকসমাগম প্রমাণ করে বিএনপির এখন নেতাকর্মী ও জনসমর্থন দুটোই রয়েছে। এছাড়া সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।’

শুক্রবার ( ২০ জুলাই) বেলা তিনটায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, ‘এ সমাবেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তাদের আস্থা নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন পর সমাবেশ করতে পেরে আমরা খুশি।’

নয়া পল্টনে সবাবেশ মঞ্চে বিএনপি নেতারা 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান শামীম বলেন, ‘সরকার দীর্ঘদিন সভা- সমাবেশ করতে না দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। দীর্ঘদিন পর সমাবেশ করতে পেরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। সরকার যে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে, আর এটা যে দেশের জনগণ বিশ্বাস করে তার প্রমাণ সমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় সেটাও নেতাকর্মীরা বুঝতে পেরেছে।’

ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন রাজধানীর গ্রিনরোড় থেকে এসেছেন বিএনপির সমাবেশ দেখতে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বিএনপির সমর্থক। এতদিন সরকার যে বলেছে বিএনপির সমাবেশ করার লোক নাই, নেতাকর্মী নেই। আজকের সমাবেশের পর সরকারের লোকেরা কী বলবেন? তারা এখানে এসে দেখে যাক বিএনপির নেতাকর্মী আছে কি নাই।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, ‘এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে মনে হচ্ছে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র আস্তে আস্তে মুক্তি পাচ্ছে। আজকের সমাবেশ আগামী দিনের আন্দোলনের প্রাথমিক মহড়া বলতে পারেন। ’

 

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এবং তার সাথে সরকারের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার ঢাকায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে।

সমাবেশ উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই প্রথম সমাবেশ করতে পারছে বিএনপি। এর আগে চার বার সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢকা মহানগর পুলিশ বলছে, ২৩টি শর্ত সাপেক্ষে বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে বিএনপিকে ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ’ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এর আগে আজকের সমাবেশের জন্য গতকাল মৌখিক অনুমতি পায় বিএনপি। এ কথা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হবে। আমরা পুলিশের মৌখিক অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি লিখিত অনুমতিও পেয়ে যাবো। রিজভী সমাবেশের ব্যাপারে বলেন, সব প্রস্তুতি আমরা আগে থেকে নিয়ে রেখেছি। সব অঙ্গসংগঠনেরও অনুরূপ প্রস্তুতি আছে।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন। তবে তারা ডিএমপি কমিশনারের সাক্ষাৎ পাননি। আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সোয়া ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কমিশনারের সাক্ষাৎ মেলেনি। তিনি বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পরে আমাদের সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি মৌখিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ১৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে চিকিৎসা ও মুক্তি না দেয়া এবং তার সাথে অমানবিক আচরণ করার প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ জুলাই) ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা সদরে বিােভ সমাবেশ হবে। ঢাকায় বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আহ্বান করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিলে সেদিনই তিনি কারাবন্দী হন। তার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর বিএনপি বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর বাইরে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘ, কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার ঘটনাটিও অবহিত করা হয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

যেসব শর্তে অনুমতি
১. এই অনুমতি স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

২. বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

৩. স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করতে রাস্তা ব্যবহার করে কিংবা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা যাবে না।

৪. নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) রাখতে হবে।

৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ কর্মসূচির ভেতরে ও বাইরে উন্নত রেজুলেশনের সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ গেইটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশ কর্মসূচিতে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেক করতে হবে।

৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভেহিকল স্ক্যানার/সার্চ মিররের মাধ্যমে কর্মসূচিস্থলে আসা সব যানবাহনে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মসূচিস্থলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৯. অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে বা সড়কের পাশে ‘প্রজেকশন’ স্থাপন করা যাবে না।

১১. অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।

১২. আজান, নামাজ বা অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১৩. অনুমোদিত সমাবেশ কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কাজে মঞ্চ ব্যবহার করা যাবে না।

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি, জনস্বার্থ, সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী এবং জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না।

১৫. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

১৬. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

১৭. সমাবেশ কর্মসূচি শুরুর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা আগে লোকজন কর্মসূচিস্থলে আসতে পারবে।

১৮. বিকাল ৫টার মধ্যে কর্মসূচির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

১৯. অনুমোদিত সময়ের আগে কিংবা পরে অনুমোদিত স্থানের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া বা যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

২০. কোনা ধরনের লাঠি-সোঁটা বা ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি, রড বহন করা যাবে না।

২১. মিছিল করে সমাবেশস্থলে যাওয়া যাবে না।

২২. এসব শর্ত যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে।

২৩. কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতির আদেশ বাতিল করতে পারে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।