আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা : মুসলমানদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ৭৮ হাজার ৬৮৬ টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলাতে আট লক্ষ ৪৬ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণ করতে এখনব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা।

কুরবানির ঈদের বাজার ধরতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় নিজেদের গচ্ছিত স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগ করে কুরবানির বাজার ধরার জন্য গবাদিপ্রাণী পালন করছেন। আর প্রানীম্পদ অধিদপ্তর সুস্থ সবল গরু পালনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা কার্যালয় এবং খামারিদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। খামারিদের দাবী ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করলে তারা ন্যার্য মূল্য পাবে।

কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের মন আকর্ষণ করতে এবং বেশি লাভের আশায় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ক্ষতিকারক স্টেরয়েট ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে বাজারজাত করণের মিশন হাতে নিয়েছে মওসুমী ব্যবসায়ী ও খামারী বলে জানা গেছে। তবে প্রালিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খামারীরা ক্ষতিকর পদার্থ কুরবাণির পশুকে খাওয়াচ্ছেন না। প্রশিক্ষণ লব্ধজ্ঞান দিয়েই তাঁরা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে স্বাভাবিক নিয়মে গরু মোটাতাজা করছেন। তবে প্রাণিজ¤পদ অধিদপ্তর সূত্র স্বীকার করছে এক শ্রেণীর মওসুমী ব্যবসায়ীরা গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েট জাতীয় ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, কুরবানীর পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এবছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ৭৮ হাজার ৬৮৬টি গরু, ছাগল ও মহিশ কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কুরবানিতে দেশী জাতের ও শংকর জাতের গরু চাহিদা বেশি থাকায় খামারীরা এ ধরনের গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করে প্রায় এক বছর ধরে। এসব গরুর বাজার মূল্য প্রায় দুইশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়,চলতি মৌসুমে কুনবানিকৃত পশুর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩৬৯২টি, কলারোয়াতে ৯৬০৭টি, তালাতে ১৩ হাজার ৪৩৯টি,আশাশুনিতে ১৯৭৫টি, দেবহাটায় ১৪৬৭টি, কালিগঞ্জে ৪৩১০টি এবং শ্যামনগরে ৪৯৭৫টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কুনবানিকৃত পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যা ৩৯ হাজার ১৯৮টি, ছাগল ২৫২২৭টি এবং ভেড়া ৫৫০১টি।

গত কয়েক বছর ধরে মাংশের দাম বেশি হওয়াতে জেলার গ্রাম গঞ্জে পশু পালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গ্রামের বেশির ভাগ চাষীদের বাড়িতে সারা বছরই গরু,ছাগল,ও ভেড়া পালন করা হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে জেলাতে ১০ হাজারের মত খামারি রয়েছে। সরকারী হিসাব মতে জেলাতে ১০ হাজার ৫৫২জন খামারি রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১৯৩৮ জন, কলারোয়াতে ১৫৬১ জন, তালাতে ৩৪২৪ জন,আশাশুনিতে ১৩৬৭ জন, দেবহাটায় ৪৫৫ জন, কালিগঞ্জে ১০৮৭ জন এবং শ্যামনগরে ৭২০ জন খামারি রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি।

এসব খামারিরা বর্তমানে ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ১১৪টি গবাধি পশু, ৫৮৪৩ টি মহিষ, ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১৯টি ছাগল এবং ৩৮ হাজার ৪১২টি ভেড়া পালন করছে।
তালা সদর উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের খামারী রবিউল জানান, গত বছর তিনি ১২টি গরু পালন করেছিলেন। সে সময় তার বেশ লাভ হয়েছিল। এ বছর তিনি ১৫টি গরু পালন করছেন। এ বছরও লাভ হবে বলে আশাবাদ তাঁর। খামারী আব্দুস সামাদ বলেন, রোজার ঈদের পর থেকেই তিনি ৬টি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেছেন। নিয়মিত খইল, কুঁড়া ও ভূষি খাওয়াচ্ছেন কুরবানির বাজার ধরার জন্য।

ইতোমধ্যে স্থানীয় বেপারীরা বাড়িবাড়ি যেয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। তবে পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর পালন করতে এবার খরচও হয়েছে অনেক বেশি। ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ আর পশু খাদ্যের দাম কমানোর দাবী খামার মালিক ও বেপারিদের।

গরু খামার করে আবার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। সচ্ছলতা এনেছে অনেক সংসারে। এ জেলার উন্নত মানের পশু একদিকে যেমন দারিদ্র্যবিমোচনে বেকার সমস্যায় ভূমিকা পালন করছে। অপরদিকে গোশতের চাহিদাপূরণে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।

কালিগঞ্জ কৃষিকর্মকর্তা ডা.মনজিত কুমার মন্ডল জানান, মোট আমিশের ৭৬ ভাগ আসে প্রাণীজ সম্পদ থেকে।
জেলার পশু পলন থেকে সেই চাহিদা পুরণ করে। তিনি আরো জানান,জেলাতে উৎপাদিত পশু কুরবাণির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করলে জেলার খামারিরা লাহবান হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সাতক্ষীরায় চাষীরা দিন দিন গোপালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে জেলার চাষীরা পশু বিক্রয় করে ভাল মুনাফা পাবে আশা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার। —আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা ২২/০৭/১৮