নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানছে না পুলিশ#রাজশাহীতে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার–১৩ দিনে ৭১ জন  বিএনপির নেতাকর্মী গ্রেফতার, জামায়াতের দাবী শতাধীক

ক্রাইমবার্তা রিপোট:   রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচনে যারা ভূমিকা রাখছেন, টার্গেট করে সেইসব নেতাকর্মীকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় চালান করা হচ্ছে।

কোথাও অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) নিজেদের দেয়া কথা যেমন নিজেরাই রাখছে না, তেমনি আবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশও তারা মানছে না। এমন অভিযোগ করেছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।

এর আগে তিন সিটিতে (রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল) ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এছাড়া আরএমপি থেকেও একাধিকবার বলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করবে না।

যদিও গত ১৩ দিনে ৭১ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে পুলিশ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করছে। যারা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়, তাদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হচ্ছে।

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রাজপাড়া থানা এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের। বুলবুলের আরও অভিযোগ, পুলিশি হয়রানি বেড়েই চলেছে দিন দিন। অভিযোগ নেই, মামলা নেই, তবুও নেতাকর্মীরা রাতে বাসাবাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছেন না।

 

সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক সরকার তা চায় না -রফিকুল ইসলাম খান

এদিকে গত ১৭ দিনে জামায়াত শিবিরের শতাধীক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। শীর্ষ স্থাণীয় বেশির ভাগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। যদিও বেশির ভাগ নেতার নামে কোন ওয়ারেন্ট ছিল না। শুধু মাত্র বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার কারনেই জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার বলে দলটি অভিযো করেছেন।
সর্বশেষ ২২ জুলাই  রাজশাহী মহানগরী শাখা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাইনুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এঘটনায়  তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পুলিশের জুলুম-নির্যাতন বাড়ছে।

গতকাল সোমবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরীতে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাকেই অন্যায়ভাবে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শুধু রাজশাহী নয়, সিলেট ও বরিশালেও অন্যায়ভাবে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান চলছে। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তিনটি সিটি কর্পোরেশনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সরকার তা চায় না। গত রোববার বরিশালেও জামায়াতের ৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি সিটি কর্পোরেশনের সবগুলোতেই সরকারী প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য আদা-পানি খেয়ে নেমেছে। তিনটি সিটি কর্পোরেশনেই এক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। জামায়াতসহ বিরোধীদলের কারো পক্ষেই অবাধে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অপর পক্ষে সরকারী দলের মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় একতরফাভাবে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তাই অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করা বন্ধ এবং রাজশাহী ও বরিশালে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াতের  রাজশাহী মহানগর আমির ও মতিহার থানা আমির গ্রেফতার: নিন্দা ডা. শফিকুর রহমানের

 ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে  রাজশাহী জামায়াতে ইসলামীর আমীর অ্যাডভোকেট আবু মো. সেলিম (৫০) ও মতিহার থানা জামায়াতের আমির ওয়ালিউল ইসলাম টিপুকে (৪৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।সিটি করপোরেশনের বোয়ালিয়া থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল খালেক ও  সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার এবং ২নং ওয়ার্ডের রাজপাড়া এলাকায় গত ১৭ জুলাই ।

এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন উক্ত ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক। তিনি উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন যে এ ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন  বলেন, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৩ দিনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুসহ ৭১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো ঘটনা দেখিয়ে নতুন করে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নেতাকর্মীদের রাতের বেলা ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পরে পুরনো কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুলাই রাতে ২৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা বাচ্চু ও একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা রানা, ১৩নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা দুমন হোসেনসহ মোট ৫ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

২১ জুলাই রাতে পুলিশ ১৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু ও ১৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদকে গ্রেফতার করেছে। একই রাতে কোনো প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ নির্যাতনের মাধ্যমে ও জোরপূর্বক ১৭ জুলাই সাগরপাড়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পথসভায় বোমা হামলা পরিকল্পনার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে তার কাছ থেকে।

একই রাতে ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবীর বাসায় আদালতের আদেশ ছাড়াই তল্লাশির নামে জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। ওই রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আরও তিনজন যুবদল নেতাকে গ্রেফতারের জন্য বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। একই দিন ২৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জামিল উদ্দিনকে কোনো পরোয়ানা বা আদালতের আদেশ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমরা পুলিশের হয়রানিমূলক তৎপরতা বন্ধে রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাত বার অভিযোগ করেছি। কিন্তু তাতে কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পুলিশি হয়রানি ততই বাড়ছে। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে ক্ষমতাসীনরা খুলনা ও গাজীপুর স্টাইলে রাজশাহীতেও ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা থেকেই এসব করছে।

মিনু আরও বলেন, কারা ধানের শীষের এজেন্ট হবে সেই তথ্য গোপনে সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে অবিলম্বে পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।

১৭ জুলাই রাজশাহীতে এক সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী তিন সিটিতে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তবে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, কাউকে অভিযোগ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

——–০————

ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার

হাইকোর্টের রায়ে সরকারকে যে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে— ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে এর কারণ জানাতে হবে। ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার  টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। ঙ. গ্রেফতার ব্যক্তিকে তার পছন্দমতো আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। চ. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবে। ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

————-০—————–

৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও প্রাসঙ্গিক কথা

  বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। এটি একটি মৌলিক অধিকারও বটে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। এটি একটি মৌলিক অধিকারও বটে।

কিন্তু এ দায়বদ্ধতা আমাদের সংবিধান আদৌ রক্ষা করতে পারছে না। যুগের পর যুগ শুধু ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে।

এ অন্যায় গ্রেপ্তার ও আটকাদেশ সংবিধানের উল্লিখিত বিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের যে ক্ষমতা পুলিশের উপর অর্পণ করা হয়েছে, তা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী, এর প্রয়োগও ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত হানার শামিল।

আইনের ছাত্র হিসেবে যতদূর জানি, ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন থামাতেই ১৮৯৮ সালে ইংরেজরা সর্বপ্রথম এই আইন তৈরি করে। তারা ওই আইনের ৫৪ ধারা তৈরি করে লাখ লাখ মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে।
ইংরেজ উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে এ ধারা ব্যবহার করা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলেও এ ধারা ব্যবহার করে বাঙালিদের গ্রেপ্তার করা হতো। বলা বাহুল্য, শতবর্ষ আগে এই আইনের জন্ম হয়েছিল জনকল্যাণে নয়, বরং নির্দয় একটি আইন হিসেবে ঔপনিবেশিকতার স্বার্থসিদ্ধির প্রেক্ষাপটে। শতবর্ষের বেশী হলেও হলেও এই নির্দয় একটি আইনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু এখনো এটি চলছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, `যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।`

৯টি কারণে এ ধারায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তবে এ ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার জন্য উপমহাদেশের বিভিন্ন আদালতের মতো বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছেন, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অধস্থন আদালতগুলোর জন্য মেনে চলা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

উল্লিখিত রায়ে ৫৪ ধারার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাকে অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত রায়ে বলেন, ‘৫৪ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগে চরমভাবে স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধারার ভাষাতেও অস্পষ্টতা আছে। তবে কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যে কোনো নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে আটক বা প্রহরায় নেয়া অন্যায়, বেআইনি ও অসাংবিধানিক।

কারণ ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়া আটক এর যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলোর পরিপন্থী।

৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার যদি করতে হয় তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট, বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। কোনো ক্রমেই নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা অন্যায়ভাবে হরণ করা যাবে না।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ক্ষমতাবলে যখন তখন রিমান্ড চাওয়া ও মঞ্জুর করা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।’ এ অবিচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।

আইনের শাসন ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এ জাতি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল।

কিন্তু আমরা আজও আইনের মাধ্যমে নির্যাতন বন্ধ করতে পারিনি। এটি খুবই হতাশ ও দুঃখজনক বটে।

উল্লিখিত রায়ে আরো বলা হয় ‘পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমলযোগ্য কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেই কেবল কোনো অভিযুক্ত বা সাক্ষীকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।
তাও গ্রেপ্তারের কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।

গ্রেপ্তারের পরপরই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে সংবাদ দিতে হবে। গ্রেপ্তারের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেও কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।’

উল্লিখিত রায় এ দেশে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। হাইকোর্ট প্রত্যাশা করেছিলেন, মাসদার হোসাইন মামলার রায়ের সুপারিশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ায় ২০০৩ সালের উল্লিখিত রিট মামলার রিমান্ড ও ৫৪ ধারা সংক্রান্ত সুপারিশের আলোকেও এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে।
কিন্তু অদ্যাবধি তা হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। যার কারণে জনগণের অধিকার প্রতিনিয়ত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তি অধিকার ও সম্মান ক্ষুণœ হচ্ছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদেও গ্রেপ্তার ও আটকের ব্যাপারে পদ্ধতিগত সুরক্ষা দিয়েছে যেমন‘ গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া পুনরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাবে না।

কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এর কারণ জানাতে হবে।

বাসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। ওই ব্যক্তিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাচনির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।’ জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন।

রিমান্ডের প্রশ্নে হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করেছেন তারা। নির্বিচারে মানুষ আমাদের পবিত্র সংবিধানের বিধান প্রতিনিয়ত লংঘন হচ্ছে অথচ আমার সুশাসনের কথা বলছি। হাইকোর্ট বিভাগের গাইডলাইন সম্পর্কে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী এখনও অজ্ঞ।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে বা ৫৪ ধারায় যে কাউকে আটক, ১৬৭ ধারায় তথাকথিত স্বীকারোক্তি আদায়; অতঃপর অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া, কল্পিত ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এবং কর্তব্যরত অবস্থায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালানো এটা বাংলাদেশের প্রশাসনের নিত্ত-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে, আইনই হবে তার হেফাজতকারী। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পূর্ণই আইনের।

এটাই মানবাধিকারের কথা। কিন্তু আইন রক্ষাকারী বাহিনী তা করছে না। ৫৪ ধারায় ধৃত ব্যক্তিকে আইন বা আইন রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দেয়নি বা দিচ্ছে না।

১৮৫৭ সালে সিপাহী যুদ্ধের পর খোদ ব্রিটিশরাজ ভারত উপমহাদেশের ক্ষমতাভার গ্রহণ করেন। অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১৮৬২ সালে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করে পুলিশের বিধি ও কার্যপ্রণালী ধারা প্রণয়ন করা হয়।

ফলে জমিদারদের ক্ষমতায় কিছুটা ভাটা পড়লেও পুলিশের সহায়তায় তাদের আধিপত্য পূর্ণ মাত্রায়ই বজায় রাখতে সক্ষম হন। প্রজাদের স্বার্থ কিছুটা সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশরাজ ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল টেন্যান্সী অ্যাক্ট পাস করেন।

ফলে জমিদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ও ব্রিটিশরাজের কাছে তাদের অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। খাজনা আদায়ের এবং প্রদেয় তদাংশ ব্রিটিশরাজকে পরিশোধ করার দায়িত্ব জমিদারদের থাকলেও খাজনা অনাদায়ের কারণে কাউকে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা জমিদারদের নেই।

এ ধরনের নানা অসুবিধার কথা ভেবে এবং ঔপনিবেশিক শাসন পাকাপোক্ত ও চিরস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরাজ ১৮৯৮ সালে ফৌজদারি আইন (অ্যাক্ট নং ৫, যা সিআরপিসি নামে পরিচিত), যা মূলত একটি কালো আইন পাস করেন।

উক্ত আইনের ৫৪ সেকশনে পুলিশকে ঢালাওভাবে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া বা কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত সন্দেহবশে কাউকে আদালতগ্রাহ্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার করতে পারে সে ক্ষমতা দেয়া হয়।

১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এ দেশে সুশৃংখল পুলিশ বাহিনীর গোড়াপত্তন করে। এর আগে এ ধরনের কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, পুলিশের বড়কর্তাদের এ আইনের ব্যাপারে বড়ই গাত্রদাহ।

কারণ হিসেবে তারা দেখিয়ে থাকেন এটি ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত। সন্দেহ নেই, এটি ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি।

কিন্তু শুধু এ অজুহাতই কি ওটা বাতিলের জন্য যথেষ্ট? যদি তাই হয়, তাহলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অদ্যাবধি বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌলিক আইন।

পুলিশের বড় কর্তাদের দাবি অনুযায়ী ওই আইনগুলোও বাতিল হওয়া দরকার, যেহেতু সেগুলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত।

তাদের ওই পুলিশ আইনের ব্যাপারে গায়ে জ্বালা পোড়ার প্রধান কারণ মূলত ওই আইনের ৪ ধারা, যেখানে উল্লেখ রয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাধারণ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে থেকে জেলা পর্যায়ে পুলিশ সুপার ও অধীনস্থ অন্য অফিসাররা দায়িত্ব পালন করবেন।১৯৭৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন সামরিক শাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সার্কুলারের মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জেলা পর্যায়ে পুলিশের এসপি ও অন্যান্য অফিসারের এসিআর অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লেখার বিধান স্থগিত করেন।

পুলিশ রেগুলেশন (পিআরবি) ১৯৪৩-এর ৭৫ক নং রেগুলেশন বলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওই এসিআর লিখতেন। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪ ধারার বিধানকে বাস্তবে কার্যকর করার জন্য পিআরবিতে এরকম বিধান করা হয়েছিল।

পিআরবি একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত আইনগত রূপ, যার দ্বারা পুলিশ বাহিনী তার সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এটি ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ভিত্তিতে সৃষ্ট।

সত্যিকার অর্থে পিআরবির সামান্য দু-একটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশ বিষয় বাস্তবসম্মত এবং তা দেশ ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পিআরবি’র ৭৫ক নং রেগুলেশনের মাধ্যমে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪ ধারার যে বাস্তবায়ন করা হতো, তা ১৯৭৫ সালের ১০ ডিসেম্বরে তৎকালীন সামরিক শাসকের হটকারী সিদ্ধান্তে অকার্যকর হয়ে যায়।
ফলে আইন থাকলেও এখন তার বাস্তবায়ন নেই। যারা সমাজে আইনের প্রয়োগ ঘটাবে, তারা নিজেরাই যদি আইন না মানে তবে সমাজে আইনের শাসন নয় বরং বেআইনি শাসন প্রতিষ্ঠা হতে বাধ্য।
এ পর্যায়ে খোদ যুক্তরাজ্যে সাংবিধানিক আইনের বর্তমান হাল-হকিকত সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে।

উক্ত আইনের সেকশন ৫৬ অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে আটক করার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই তার আত্মীয়দের কাউকে আটকের কথা জানাবে।
শুধু গুরুতর অপরাধের জন্যই এই ৩৬ ঘণ্টার সময়সীমা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

একজন আটক ব্যক্তিকে যে কোনো সময়ে তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার অধিকার দিয়েছে। তাকে আইনজীবী দেয়া সম্ভব না হলে নিজ খরচায় রাষ্ট্র একজন কর্তব্যরত আইনজীবীর ব্যবস্থা করবে।
উক্ত আইনের সেকশন ৭৬-এ কোনো স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যকে মামলার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের বিধান থাকলেও শর্ত রয়েছে যে, উক্ত বিবৃতি বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে এবং কোনো জুলুম করে নেয়া হয়নি, তা প্রমাণ করতে হবে।
অনুরূপভাবে সেকশন ৭৮ ফৌজদারি আদালতকে এই আইনের বিধান বহির্ভূত গৃহীত কোনো প্রমাণ নাকচ করে দেয়ার ক্ষমতা অর্পণ করেছে।

পুলিশ কোনো আটক ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবে যে, তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ বা সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে এবং প্রয়োজনে বিনা ব্যয়ে সরকারি আইনজীবীর সাক্ষাত ও পরামর্শ নিতে পারেন।

লেখকঃ সাংবাদিক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, এম.ফিল গবেষক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।