ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে নগরীতে। বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছে পুলিশ। এতে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে সাদা পোশাকধারীরা। এ সময় কিছু কিছু কর্মীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এরপর তাদের খোঁজ মিলছে রাজশাহীর পাশের জেলাগুলোতে। বাড়িতে যাদের পাওয়া যাচ্ছে না তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরও আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
শুক্রবার গভীর রাতে ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক হুমায়ুন আহমদের ধর্মপুরের বাড়িতে অভিযান চালায় মতিহার থানা পুলিশ। এ সময় তাকে না পেয়ে স্ত্রী ডেইজি বেগম ও দশম শ্রেণীতে পড়া সন্তান ওসামাকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
পরের দিন শনিবার গভীর রাতে নগরীর ডাশমারীতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে। পরে স্থানীয় জামায়াত কর্মী মুক্তির বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে তাকে না পেলে তার স্ত্রী জুলেখা বেগম মায়া ও সন্তান জুলফিকার আলী মারুফকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
নগরীর ধরমপুরের একজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত শনিবার রাতে র্যাব ও পুলিশের পোশাক পরে তার বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের শাসিয়ে যায় যেন সকালের মধ্যেই এলাকা ছাড়েন। অন্যথায় তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
একই অভিযোগ করেছেন বিনোদপুরের একজন নির্বাচনী এজেন্ট। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে রাতে পুলিশ গিয়ে না পেয়ে আমার মাকে গালি গালাজ করেছে। আমি যেন পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন না করি সে জন্য শাসিয়ে গেছে।
একই অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গতকাল দুপুর ১২টার পর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। বুলবুল বলেন, ২৭ ও ২৮ জুলাই ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টসহ ৩০-৩২ নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে পোলিং এজেন্ট না পেয়ে তাদের বাবা ও ভাইদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত সাদা পোশাকে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে এলাকায় না থাকার হুমকি দিচ্ছে। রাজশাহীতেও না থাকার হুমকি দিচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যেতেও নিষেধ করছে। ধানের শীষের প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে নেতাকর্মীরা অবস্থান করলেই গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন প্রত্যক্ষভাবে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। সরকারদলীয় মেয়রপ্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাজশাহীতে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি বহিরাগত সন্ত্রাসী অবস্থান করছে। সেই সাথে ১০টির বেশি কালো গ্লাসওয়ালা মাইক্রোবাস ঘোরাফেরা করলেও এই বিষয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গ্রেফতার থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টরাও রেহাই পাচ্ছেন না। ২৩ পোলিং এজেন্টেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সব গ্রেফতার নেতাকর্মী কোথায় আছে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন (নির্বাচনী আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ধারা ৩, ৭ (গ) এবং নির্বাচন কমিশনের আদেশ বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। এ আদেশ মানছে না পুলিশ।
বুলবুল বলেন, আমরা সব নির্যাতন-জুলুম সহ্য করে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। কিন্তু সব কিছুরই সীমা থাকা উচিত। প্রশাসন-পুলিশ যেভাবে আওয়ামী লীগের মতো কাজ করছে, তাতে নির্বাচন পরিস্থিতি সুষ্ঠু নয়। প্রয়োজনে ভোটের দিন মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মাঠে নামবো আমরা।
এ সময় মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী শান্তির শহর। আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে। কিন্তু শান্তির এ শহর সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উচ্চাভিলাষী সদস্যদের প্রশ্রয়ে সরকারি দলের ক্যাডাররা তৎপরতা চালাচ্ছে। অনির্বাচিত সরকার নির্বাচিত মেয়র বুলবুলকে পদপদে হেনস্থা করেছে। ভোট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভোটার, পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও গ্রেফতার বন্ধের আবেদন জানান তিনি।
———-0————-
খুলনা-গাজীপুরের চেয়েও ভয়াবহ ভোট ডাকাতির শঙ্কা
তিন সিটি থেকে সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিন সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছাড়া অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। তাদের মতে, ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ভোটারদের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা প্রতিদিনই আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের আশ্বাসে সাধারণ ভোটারদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দা গৃহকর্মী তানিয়া বেগম বলেন, এইবার পরথম ভোড দিমু। কিন্তু মোর জামাই কয় যে ভোড দেতে যাওন লাগবে না। হেহানে বোলে আগেই মোগো ভোড দিয়া দেবে।’ রাজশাহীতে বিএনপির পক্ষে কেউ প্রচারে নামলে তাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আর সিলেটে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিবাদপূর্ণ অবস্থান, বিএনপির প্রার্থীর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি, বাসাবাড়িতে পুলিশের হানা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানিসহ নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কার।
তিন সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগের স্তূপ জমলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এমন অবস্থায় সর্বশেষ তিন সিটিতেই বিএনপির প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন ও আদালতের নির্দেশ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মী-সমর্থক এমনকি পোলিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিন সিটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য এই অভিযোগের কৌশলী জবাব দিচ্ছে। তারা বলছে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর আগে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ দুই সিটির নির্বাচনে ‘শান্তিপূর্ণ কারচুপি’ হয়েছিল বলে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। কেন্দ্র দখল, জালভোট ও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া এবং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে এই দুই সিটির নির্বাচনে। আর এসব অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের সত্যতা মিলে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও। গাজীপুরের নির্বাচনের পর নানা প্রশ্নের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল অতীতের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি তিন সিটির নির্বাচনে আর হবে না। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আদতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির আদেশ মানছে কি না- এ প্রশ্ন তুলছেন তিন সিটির ভোটার এবং প্রার্থীরা। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা গুজব আর গুঞ্জন। এতে বাড়ছে সাধারণ ভোটাদের ভয় আর আতঙ্ক। এমন অবস্থায় তিন সিটিতে সুষ্ঠু ভোট করে ইসি নতুন নজির গড়বে নাকি খুলনা গাজীপুরের ভোটের মতো নয়া কিছিমের কোন ভোটের মহড়া প্রত্যক্ষ করবে- এটাই আজ দেখার বিষয়।
এদিকে গতকাল রোববার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা। এ ছাড়া শনিবার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হয়েছে। তিন সিটিতে আজ সরকারি ছুটি পালিত হবে। নির্বাচন কমিশনের স্টিকার ছাড়া কোন যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছে। সেই সাথে থাকবে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট।
রাজশাহী : এ সিটিতে ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোট কেন্দ্র ১৩৮ ও ভোটকক্ষ ১০২৬টি। তবে ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন অফিস এই কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে। এ জন্য কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহলসহ নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। এ সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২১৭ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী আছেন পাঁচজন। আর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আছেন ১৬০ জন প্রার্থী। এ ছাড়া ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ৫২ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খাযরুজ্জামান লিটন, বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ।
বরিশাল : এ সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোট কেন্দ্র ১২৩ ও ভোটকক্ষ ৭৫০টি। বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, কমিউনিস্ট পার্টির এ কে আজাদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের মনীষা চক্রবর্ত্তী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবাইদুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বশীর আহমেদ ঝুনু। এ সিটির ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে। সিটি করপোরেশনের ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টির অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ১১টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা। অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, এপিবিএন এবং আনসার মিলিয়ে ১৪ জন সশস্ত্রসহ মোট ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১২ জন সশস্ত্র পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারসহ মোট ২২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। থাকছেন ১০ জন নির্বাহী এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া ১৯ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও র্যাবের ৩৫টি টহল দল ও সাদা পোশাকধারীসহ প্রায় সাড়ে ৩০০ সদস্য কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
সিলেট : এ সিটিতে ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ২৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। ভোট কেন্দ্র ১৩৪ ও ভোটকক্ষ ৯২৬টি। এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৭ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মোয়াজ্জেম হোসেন খান, সিপিবি-বাসদ প্রার্থী মো. আবু জাফর, ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম। যদিও সেলিম নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ সিটির ৮০টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ‘সাধারণ’ তালিকায় থাকা কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ জন সদস্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি। নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মাঠে রয়েছে ১৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে থাকছে ২৭টি মোবাইল ফোর্স। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে এর প্রতিটিতে সদস্য থাকবে ৩০ জন। ২৭টি ওয়ার্ডে স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা থাকবে ৯টি। এর বাইরে নগরীর প্রতি দুই ওয়ার্ড মিলিয়ে এক প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে। নগরীর প্রতি ওয়ার্ডে টহল দেবে র্যাবের একটি করে টিম। সেই সঙ্গে মাঠে থাকবেন ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট।
আরো পড়ুন : মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মাঠে নামার ঘোষণা বুলবুলের
রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, সোমবার ভোট। তার পরও পুলিশ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। বাড়িতে পুরুষ মানুষকে না পেলে স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাসহ অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী সমর্থিত পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে অর্ধ শতাধিক অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা সকল নির্যাতন-জুলুম সহ্য করে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। কিন্তু সব কিছুরই সীমা থাকা উচিত। প্রশাসন-পুলিশ যেভাবে আওয়ামী লীগের মতো কাজ করছে, তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবার কোনো লক্ষণ দেখছি না। তাই ভোট কারচুপি করা হলে প্রয়োজনে আমরা ভোটের দিন মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মাঠে নামবো। রোববার দুপুরে রাজশাহী রিটার্নিং অফিসার বরাবরে অভিযোগ প্রদান শেষে নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব অভিযোগ করেন।
বুলবুল বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রত্যক্ষভাবে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের গেজেট বিএনপিকে দেয়া হয়নি। এছাড়া সরকার দলীয় প্রার্থী ও তাঁর নেতাকর্মীদের আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি নির্বাচন অফিসার। তিনি বলেন, নির্বাচনকে বানচাল ও সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাজশাহীতে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি বহিরাগত সন্ত্রাসী অবস্থান করছে। সেইসাথে ১০টির অধিক কালো গ্লাসওয়ালা মাইক্রোবাস ঘোরাফেরা করলেও এ বিষয়ে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, গ্রেফতার থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টরাও রেহাই পাচ্ছেনা। ২৩জন পোলিং এজেন্টেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীরা কোথায় আছেন তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী শান্তির শহর। আমরা আশা করেছিলান নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে। কিন্তু শান্তির এ শহর সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করার চেষ্টা চলাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী পুলিশের উচ্চাভিলাসী সদস্যদের প্রশ্রয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। অনিবার্চিত সরকার বুলবুলকে পদে পদে হেনস্থা করছে। রাজশাহীবাসী ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে।
মিনু বলেন, এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। এ পর্যন্ত কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতি করে বিজয়ী হয়ে রাজশাহী সিটিকে সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত করার পাঁয়তারা করছে। নিজের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় দেখে পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে যাবে। তিনি বলেন, নগরবাসী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে সরকারের এই নীল নক্সার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে বলে তিনি আশা করেন।