ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু আর কিছুক্ষণ পরে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটরা আসতে শুরু করেছে। প্রার্থীদের নিজস্ব লোকেরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী কর্মকর্তা, ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম। নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা তল্লাশি। তার পরেও শঙ্কা কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে।
ভোট-সংশ্লিষ্টরা বলছে, এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই খুলনা ও গাজীপুরে নির্বিঘেœ ব্যালট ছিনতাই করে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এই দুই সিটি নির্বাচনে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ দুই সিটির নির্বাচনে ‘শান্তিপূর্ণ কারচুপি’ হয়েছিল বলে বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। কেন্দ্র দখল, জালভোট ও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া এবং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
আর এসব অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের সত্যতা মেলে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও। গাজীপুরের নির্বাচনের পর নানা প্রশ্নের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল অতীতের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি তিন সিটির নির্বাচনে আর হবে না। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমনকি খুলনার ভোটে অনিয়মের কারণে পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তলব করার উদ্যোগ নিলেও সরকারের চাপে সেখান থেকে সরে আসে ইসি। এ ছাড়া তিন সিটিতে তফসিল ঘোষণার পর বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির উদ্যোগ নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসে সাংবিধানিক সংস্থাটি। এমন ইসির অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক।
আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন ৮ লাখ ৮২ হাজার ভোটার। রাতেই ফলাফল ঘোষণা করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই ফলাফলে নির্ধারিত হবে তিন সিটির মেয়র পদে কারা বসছেন।
তিন সিটিতে মেয়র পদে ১৯ জন প্রার্থীর নাম থাকলেও নির্বাচনী মাঠে আছেন ১৭ জন। বরিশাল ও সিলেট সিটিতে দু’জন মেয়রপ্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া তিন সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বরিশালে তিনজন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন নারী কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি ও জামায়াতকর্মীদের বাড়িতে হানা দেয়। নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের তালিকা ধরে টার্গেট গ্রেফতার অব্যাহত রাখে। লাগাতার পুলিশি হয়রানিতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের জেলাগুলোতে আশ্রয় নেন তারা।
এর আগে একই কায়দায় সরকারবিরোধী ভোটার ও পোলিং এজেন্টশূন্য করে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন। এই তিন সিটিতেও সরাসরি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ক্ষমতাসীনেরা এমন কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধী দলগুলোর কর্মীরা।
বিএনপি বলছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে তিন সিটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ১৮টি মামলায় ১১ শ’র বেশি আসামি করা হয়েছে। মামলায় তিন সিটির স্থানীয়পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের আসামি করা হয়েছে। তবে সব মামলার এজাহারে বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। দলটির প্রায় দেড় শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে রাজশাহীতে। এ সিটিতে দলটির নেতাকর্মীদের নামে ৯টি মামলায় ৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ছাড়া বরিশালে এ পর্যন্ত ৩৬ জন ও সিলেটে ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। তিন সিটিতে এসব মামলা ও আটকের ঘটনায় দলটির মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
তাদের মতে, গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই এলাকা ছেড়ে সরে গেছেন। এ অবস্থায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।