দেশকে বাঁচাতে হবে, ঐকবদ্ধ হতে হবে#পেছনে দেখুন ক্ষমতা কারো কি কখনো চিরস্থায়ী ছিল, প্রশ্ন ড. কামাল হোসেনের

ক্রাইমবার্তা রিপোট:    জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে পাগল হয়ে যাবার কোন কারণ নেই। তিনি সকলকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, যে যেখানে আছেন ঠান্ডা মাথায় দায়িত্ব পালন করুন। সত্তর বছরের ইতিহাসে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখুন-ক্ষমতা কারো কি কখনও চিরস্থায়ী ছিল?

মঙ্গলবার তীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন একথা বলেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় তিনি আরো বলেন, সবার বোঝা উচিত ক্ষমতা আসলেই কি চিরস্থায়ী কি-না? ক্ষমতা থাকলেই কি যা ইচ্ছা তাই করবে? মুখে যা ইচ্ছে তা-ই বলা হবে। এটা হয় না।

তিনি বলেন,‘আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু করতে চাই না। আবেদন করবো সুস্থ হোন। দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। কারণ দেশের সামনে উজ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এটাকে ধবংস করতে দিবেন না। আমি এখন আবেদনের সুরে বলছি। কিন্তু জনগণ জেগে উঠলে তারা আবেদনের সুরে কথা বলবে না।’

অনুষ্ঠানে ‘কয়লা চুরি, ব্যাংক ডাকাতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বন্ধ করে ভোটাধিকার গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনায় ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশকে বাঁচাতে হবে, ঐকবদ্ধ হতে হবে। আমরা চাই বৃহত্তর ঐক্য। যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধী করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বাদ দিয়ে সকল জনগণকে নিয়ে ঐক্য হবে। আমি জীবনের শেষ পর্যন্ত এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকব।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হচ্ছে। ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে, কয়লা চুরি হচ্ছে। মাটি চুরিও হবে। কিন্তু এসব চুরির অপরাধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, তিনি প্রশ্ন রাখেন।

ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য নয়, দেশকে রক্ষার জন্য ঐক্য করবো। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যারা রাজাকারের সন্তান বলে গালি দেয়, তাদের ক্ষুদ্ধ ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে আছে, তারা রাজাকারের বাচ্চা নয়, বাংলাদেশের সন্তান।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা ন্যায্য প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া তাদের মৌলিক অধিকার। লাখ লাখ জীবন দিয়ে এই অধিকার অর্জন করা হয়েছে। তরুণ সমাজের ওপর আক্রমণ এটা লজ্জার বিষয়। এই ছাত্ররা কোনো পকেট ভারী বা লুটপাট চাচ্ছে না। তারা বলছে সংস্কার করো।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়, বিকৃতভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। যারা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নিয়ে ব্যবসা করে, তারা এ কথা ভুলে গেছে যে মুক্তিযোদ্ধারা কী মানসিকতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবসা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি।

তিনি বলেন, ছাত্র সমাজের ওপর লাঠি তোলা কত বড় অন্যায় তা তারা চিন্তাও কেেত পারছে না। তিনি জানতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে করা হাতুড়ী দিয়ে আহত করা হয়েছে। কিন্তু ঐ ছাত্র কি অন্যায় করেছে যে তাকে হাতুড়ী দিয়ে পা ভেঙ্গে দিতে হবে? সে তো সংস্কার চেয়েছে,আর তো কিছু করেনি। তিনি ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন কে তার পা ভাঙ্গলো কোথায় ঐ হাতুড়ী? তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন ঐ হাতুড়ি কি সিজ বা জব্দ করা হয়েছে কি-না?।

তিনি বলেন, কারা এ হাতুড়ি তুলে দিয়েছে তাদের হাতে। কারা এদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আসুন সবাই মিলে ওদের জন্য দোয়া করি। আমি তাদের ক্ষতি হোক চাই না। আমি চাই তারা মানসিকভাবে সুস্থ হোক। তাদের লাঠি হাতে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করা দখল করাচ্ছে? যারা করাচ্ছে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

আলোচনা সভায় তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের সবার উচিত দেশপ্রেম, ত্যাগ, পরিশ্রম, মানুষকে ভালোবাসা-এসব মূল্যবোধে অবিচল থাকা। এসব কাজে থাকলেই দেশের কল্যাণ সাধিত হবে, উন্নতি হবে।

ডা: জাফরউল্লাহ বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন থেকে বিএনপি’র শিক্ষা নিতে হবে। এর পাশাপাশি ড.কামাল হোসেনকে জাতির জন্য আরো সময় দিতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহাম্মদ মনসুর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সারা দেশে লুটের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে। আলোচনা সভায় উদ্ধোধনী বক্তব্য রাখেন ঐক প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ.ব.ম মোস্তফা আমীন। আরো বক্তব্য রাখেন গণ ফেরাম নেতা মোশতাক আহমেদ, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এতে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিমুল ইসলাম প্রমুখ।

Please follow and like us:

Check Also

আউয়াল কমিশনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি

ঘোষণার পর আউয়াল কমিশনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।