ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: আসামের প্রকাশিত নাগরিকত্ব তালিকা থেকে ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয়ার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এর মাধ্যমে মানুষ নিজ দেশেই উদ্বাস্তুতে পরিণত হলেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সোমবার আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ নাগরিকত্বের হালনাগাদ খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে রাজ্যের প্রায় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৮ জনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেছেন, এটি ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতিমালা। মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে… এটি মানবতা ধ্বংস করবে। এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তিনি আলোচনা করবেন বলে সংম্মেলনে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, মানুষ বাঁচান, তাদের বিচ্ছিন্ন করবেন না।’ তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জী হালনাগাদ করা হলো। তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি শুধু খসড়া তালিকা হওয়ায় এখনই কাউকে গ্রেফতার অথবা প্রত্যাবাসন করা হবে না। তবে সমালোচকরা বলেছেন, নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বেশির ভাগই প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসিলম জনগোষ্ঠীর সদস্য এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। এনআরসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই উতড়ে নাগরিকত্বের উপযুক্ত হিসেবে ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তবে যথাযথ নথি ও তথ্য-উপাত্ত দিতে না পারায় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৮ জন ভারতীয় নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, এতবড় একটি পদক্ষেপ নেয়া হলো। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের সাথে কি সরকারের আলোচনা করা উচিত ছিল না।
সঙ্কট নিরসনে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দলের পক্ষ থেকে আসাম পরিদর্শনে যাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সরকারি ভবন নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সাথে আসামে প্রণীত চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আধার কার্ড থাকলেও জাতীয় পঞ্জীকরণের তালিকায় নাম নেই। পাসপোর্ট থাকলেও তালিকায় নেই নাম। বৈধ তথ্য থাকা সত্ত্বেও নাম তোলা হয়নি। চার-পাঁচ পুরুষ ধরে আসামে থাকলেও আজ তাদের কেন উদ্বাস্তুর তকমা দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল বা আইএমডিটি নামের আইন হয়েছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যাতে নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় বর্তানো হয়েছে অধিবাসীদের নিজেদের ওপর। মমতা অভিযোগ করেছেন, সর্বোচ্চ আদালতে যখন এ নিয়ে শুনানি হয়েছে, তখন যাবতীয় তথ্য দেয়নি কেন্দ্র। তালিকায় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের নাম নেই দাবি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটব্যাংক চিনে নিয়ে বিরোধীদের বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঙালিদের জোর করে তাড়ানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে না তো, প্রশ্ন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে আলাদা করে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গেও আসাম, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারের মানুষ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, মুর্শিদাবাদ কিংবা উত্তরবঙ্গের লোকদেরও আসামে বহিরাগত তকমা দেয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তৃণমূলের প্রতিনিধিদল আসাম যাবে, তিনি নিজেও সেখানে যেতে পারেন।
হাজী মুহসিনের হুগলি মাদরাসা ফের চালুর উদ্যোগ
ভারতের হুগলিতে ১৮১৭ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজী মুহাম্মদ মুহসিন। সেই মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন সৈয়দ আমির আলী, ফুরফুরার পীর আবু বক্কর সিদ্দিকীসহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি। মাদরাসাটিতে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হতো। পশ্চিমবঙ্গের ৪৪টি মাদরাসা রয়েছে সেখানকার মাদরাসা শিক্ষা দফতরের অধীনে। আর ৬১৪টি মাদরাসা রয়েছে মাদরাসা পর্ষদের আওতায়।
হাজী মুহসিনের হুগলি মাদরাসাটি দীর্ঘ দিন শিক্ষা দফতরের অধীনেই ছিল। ২০০৮ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে মাদরাসাটি মাদরাসা শিক্ষা দফতরের অধীনে আনা হয়। এরপর সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ২০০ বছরের পুরনো এই মাদরাসাটি নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য গত ২৫ জুলাই সংখ্যালঘুবিষয়ক দফতর ও মাদরাসা শিক্ষা দফতরের সচিব পিবি সেলিমকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পাঠান তিনি। কিভাবে এই পুরনো মাদরাসাকে স্বমহিমায় ফেরানো যায় সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তাকে পাঠানো হয়।
সচিব পিবি সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হুগলি মাদরাসা চালু করতে চাইছেন। সব কিছু ঘুরে দেখেছি। ২০০ বছরের পুরনো এই মাদরাসাকে চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।
মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন ফুরফুরার সাথেও যুক্ত। তিনি জানান, ক্রমশ শিক্ষার্থী কমতে থাকে। এখন প্রায় বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী ৬১৪টি মাদরাসার উন্নয়ন করেছেন। এটার জন্য কিছু করবেন নিশ্চয়ই।