ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: অষ্টম দিনের মতো গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে ছাত্রবিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা ও এলিফ্যান্ট রোডসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাথে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সরকারি সব ক’টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থানরত পুলিশের সাথে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান লক্ষ করা গেছে। সাধারণ ছাত্ররা এসব জায়গায় মিছিল ও রাজপথে চলাচলকারী যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করতে চাইলে ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাধা দেয়ার পাশাপাশি হামলা করেছে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালীতে তিতুমীর কলেজ ও ঢাকা কলেজের সামনে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগকে সক্রিয় দেখা গেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরাও রাজপথের কর্মসূচিতে যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিলে স্কুলের ইউনিফরম পরা কিছু শিার্থী দেখা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই ছিল বেশি। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
সায়েন্স ল্যাবে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলা : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল ও ধানমন্ডি এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ ও পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছোড়ে। এসব এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাধারণ লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি করেন। বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট। শাহবাগ মোড় থেকে জিগাতলার দিকে যাওয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলে ধাওয়া করে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই দুই পরে এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধানমন্ডিতে শিার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে হামলা চালায় কিছু যুবক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিার্থী ও সাংবাদিক আহত হন। বার্তা সংস্থা এপির ফটোসাংবাদিক এম এন আহাদ আহত হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হয়। এ দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমালমতি শিার্থীদের চলমান আন্দোলনে গতকাল ঢাবিসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরাও যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিলে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিছু শিার্থী দেখা গেলেও বিশ্ববিদালয়ের শিার্থীর সংখ্যাই ছিল বেশি। যাদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় শাহবাগ মোড় থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর একটি মিছিল সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর লাঠি, লোহার পাইপ ও রাম দা-চাপাতি নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া দেন। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হেলমেট ছিনতাই : সরেজমিন সায়েন্সল্যাব এলাকায় দেখা যায়, মোটরসাইকেলে করে কেউ সামনে পড়লেই তাদের হেলমেট কেড়ে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাটা সিগন্যাল মোড়েও এ ঘটনা ঘটে। বেলা সোয়া ২টায় বাটা সিগন্যাল মোড়ে ঢাকা কলেজের বেশ কিছু ছাত্রলীগ কর্মী এক মোটরসাইকেল আরোহীর হেলমেট কেড়ে নেয়। ওই আরোহী তা ফেরত চান। ইকবাল নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে গুলশানের একটি কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, অফিসের ডিউটি শেষে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। এরপর বাটা সিগন্যাল মোড়ে বাইক থামিয়ে একজন আমার হেলমেট কেড়ে নিয়ে যায়।
পুলিশের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের নামে ছাত্রদল-শিবির মাঠে নেমেছে। তাদের প্রতিহত করতেই আমাদের অবস্থান।
ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলা : বেলা আড়াইটায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শিহাবের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর একটি দল বাটা সিগন্যাল এলাকায় রড, লোহার পাইপ, গাছের ডাল, ইটের টুকরো নিয়ে মহড়া দেয়। কয়েকজনের কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। বেলা পৌনে ৩টায় ছাত্রলীগের কয়েক শ’ কর্মী ও পুলিশ এক সাথে আশপাশের মার্কেটগুলোতে ছাত্রদের উপস্থিতি আছে এমন সন্দেহে ধাওয়া দেয়। এরপর কাঁটাবন এলাকা থেকে শিার্থীদের ছোট একটি দল সেøাগান দিলে ফের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়।
কয়েকজন দোকানদার ও কর্মচারী জানান, বেলা ১১টা থেকে দোকান বন্ধ আছে। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলিফ্যান্ট রোড ও বাটা সিগন্যাল এলাকায় বড় বড় শপিংমলের দোকান মালিক ও কর্মকর্তারা শাটার নামিয়ে ভেতরে অবস্থান নেন। তাদেরও সন্দেহ করে ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি মসজিদের গেটেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা এভাবে হাতিরপুল কাঁচাবাজার হয়ে ইস্টার্ন প্লাজা পর্যন্ত ধাওয়া দেয়। হাতিরপুল এলাকায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ছাত্রলীগ ও পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে আহত হন আলমগীর হাসান সোহান। তার মাথায় আঘাত লাগলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন বলে তিনি জানান। বিকেল ৪টা পর্যন্ত সায়েন্সল্যাব এলাকা, বাটা সিগন্যাল থেকে হাতিরপুল বাজারের দিকে আসা সড়কের দু’পাশের দোকানগুলোও বন্ধ দেখা গেছে।
ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ নিষেধ : সাধারণ শিার্থীদের ধাওয়া দেয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোবাইল ফোনও নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্রলীগ নেতারা বলতে থাকেন কেউ ছবি তুললে বা ভিডিও করলেই খবর আছে। বিশেষ করে যেকোনো মানুষকেই মোবাইল হাতে দেখলে তেড়ে যেতে দেখা যায় অনেককে। রিকশায় বসে কেউ মোবাইল হাতে নিলেও লাঠি বা রডের টুকরো নিয়ে ধাওয়া দিতে দেখা যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা বাটা সিগন্যাল মোড়ে অন্তত ১৫-২০ জন সাংবাদিক দায়িত্বরত থাকলেও তাদের কেউ-ই মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা খোলেননি। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির জানালা থেকে কেউ ছবি তোলা বা ভিডিও করার চেষ্টা করলে তাদেরও ইটপাটকেল ছুড়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের সার্বণিক নজরদারি ছিল। হামলাকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই হেলমেট পরা বা মুখে রুমাল বাঁধা অবস্থায় ছিল।
ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের ওপর তাণ্ডব : বেলা ১টায় হাজারো শিার্থী ‘ভুয়া ভুয়া’ সেøাগান তুলে জিগাতলার দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন। সে সময় আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ের দিকে অবস্থান নেয়া পুলিশ শিার্থীদের ওপর টিয়ারশেল ছুড়ে। কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে অনেক শিার্থী লেকের পানিতে ঝাঁপ দেন। পাড়ে দাঁড়িয়ে পুলিশ শিার্থীদের লাঠিপেটা করে ও ঢিল ছোড়ে। বেশ কয়েকজনকে পানি থেকে টেনেও তোলে তারা। সেখান থেকে তিন শিার্থীকে ধরে নিয়ে যায়। জিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের দিকে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে শিার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা আশপাশে দৌড়ে চলে যান।
জানা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীদের মিছিলটি বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে জিগাতলায় যায়। ‘নিরাপদ সড়ক, গত শনিবার শিার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ’ এ তিন দাবিতে পূর্বঘোষণা মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন নিপীড়নবিরোধী শিার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলায় মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক হাজার শিার্থীর ওই মিছিল শাহবাগে এসে জড়ো হয়। পরে মিছিলটি সায়েন্সল্যাব হয়ে জিগাতলার দিকে যায়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীর কয়েকজন জানান, জিগাতলায় যাওয়া বা অবস্থানের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। জিগাতলা থেকে ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু জিগাতলায় মিছিল থেকে একটি অংশ পুলিশের বিরুদ্ধে সেøাগান দিচ্ছিল। একপর্যায়ে মিছিলটি ইউটার্ন নেয়ার সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। জিগাতলা ও ধানমন্ডির বিভিন্ন গলিতে গলিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও লাঠি হাতে ধাওয়া করতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জিগাতলায় গেটের সামনে শতাধিক বিজিবি সদস্য অবস্থান নেন।
জানা যায়, এর আগে ধানমন্ডি ২ নম্বরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে জমায়েত হওয়ার কথা ছিল শিার্থীদের। তারা সেখানে জড়ো হতে শুরু করলে ছাত্রদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হেলমেট পড়ে লাঠি ও রড নিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগও শিার্থীদের ধাওয়া দেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সীমান্ত স্কয়ারের দিকে চলে যান। বেলা সোয়া ২টায় ধানমন্ডি ১ নম্বরে শিার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে নিয়ে অপরিচিত যুবকেরা দল বেঁধে হামলা চালায়। এতে ছাত্রীসহ তিন শিার্থী আহত হয়েছেন। তাদের পপুলার হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আহত শিার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে জানিয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিার্থী নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিােভ করছেন শিার্থীরা।
ঢাবিতে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের নেতৃত্বে হামলা : আমাদের বিশ^বিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, নিজেদের শিক্ষার্থীবান্ধব ঘোষণা দেয়ার দুই দিনের মাথায় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ফের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে দু’জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তবে আহতদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত শিার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
শিার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিার্থীরা বিকেলে ক্যাম্পাসে বিােভ মিছিল করেন। এ সময় তাদের সাথে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
মিছিল শেষে বিােভকারীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করেন। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে সংগঠনটির কর্মীরা মোটরসাইকেলের শোডাউন দিয়ে নিপীড়নবিরোধী শিার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। ওই সময় কয়েকজন সাধারণ ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করে। এ সময় টিএসসিজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করতে থাকেন শিক্ষার্থী এবং বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা আগতরা।
এ সময় এক পথচারী ঘটনার ভিডিও করতে গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
এ বিষয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়া উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, আমরা শিার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান সমাবেশ করছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদের কয়েকজনকে বেদম মারধর করেছে।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মুঠোফোনে কল দিয়ে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। জানতে চাইলে প্রথমে বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী কোথায় কিভাবে কী হয়েছে বিস্তারিত বলতে বলেন। পরে তিনি বলেন, ছাত্র পরিচয়ে এবং কিছু ছাত্র মিলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যে পক্ষই যা করুক না কেন আমরা এটার বিহিত করার চেষ্টা করব। ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, আমি জানি না। প্রক্টরকে খোঁজ নিতে বলব।
এর আগেও বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও কর্মসূচিতে একাধিকবার হামলা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনের বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কয়েক দফায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে নাগরিকসমাজ উদ্বেগ জানিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল দুপুরেও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আক্রোশের শিকার হন সাংবাদিকেরা।
নিপীড়নবিরোধী শিকদের সংবাদ সম্মেলন : নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি করেছে নিপীড়নবিরোধী শিকরা। গতকাল ঢাবির টিএসসির শিক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
শিকদের দাবিগুলো হলোÑ গ্রেফতার ও আটক সব শিার্থী অবিলম্বে মুক্তি দেয়া ও মামলা প্রত্যাহার করা, চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা এবং সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদপে গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। সংবাদ সম্মেলন থেকে সারা দেশের মানুষের কাছে কোনো গুজব ও সহিংসতার ফাঁদে পা না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ড. সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের উপর্যুপরি হামলার প্রতিবাদে অহিংস মৌন মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকেরা। রোববার বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সামনে থেকে মৌন মিছিলটি শুরু হয়ে সিরাজী ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
মৌন মিছিলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সভাপতি আ আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অর্বাক আদিত্য, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলিল, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাশরু মোস্তাফিজ এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়কারী সুমন মোড়ল প্রমুখ।
আগামীকালের (আজকের) কাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সরকার নামাতে আসি নাই, আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে এসেছি। আগামীকাল (আজ) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাস-পরীক্ষা আমরা বর্জন করলাম।
শাবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই সাথে সর্বাত্মক ছাত্রধর্মঘটে গতকাল রোববার অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে শনিবার রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রছাত্রীরা।
গতকাল সকাল ৭টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রবল বর্ষণের মধ্যেও ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত শিক্ষার্থী। সকাল ৯টায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান গিয়ে ছাত্রদের সাথে ‘একাত্মতা’ জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। আমরা তাদের পাশে আছি। তবে কেউ যাতে বাইরে থেকে এসে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছয়জন বহিরাগতকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ব্যাপারে প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের বিক্ষোভের সময় কিছু বহিরাগতকে দেখা যায়। বিষয়টি যাচাই করতে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে মিছিল নিয়ে গোল চত্বরে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। প্রক্টর তাদের উঠিয়ে দিতে চাইলে আন্দোলনকারীদের সাথে বাদানুবাদ হয়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের সমর্থকরা ক্যাম্পাসে জড়ো হতে শুরু করেন।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ডাকা ছাত্রধর্মঘটের ফলে দুয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো বিভাগেই কাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলও ছিল সীমিত।
জাবি সংবাদদাতা জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। গতকাল এ ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ কাস-পরীা বর্জন করে এবং বেলা ১১টায় শহীদ মিনার থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালীন জাবি ছাত্রলীগ শোডাউন করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও কাস-পরীক্ষা বর্জন করে অংশগ্রহণ করেন। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে এক সাথে জাতীয়সঙ্গীত গেয়ে বিক্ষোভ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এর আগে শনিবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক মনে করে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন ও সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তস্থাপনকারী কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।’
আট দফা দাবিতে মশাল মিছিল : ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদসহ আট দফা দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু হল, বটতলা, ট্রান্সপোর্ট হয়ে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। মিছিলে প্রায় দুই হাজারের অধিক শিার্থী অংশ নেন। আজ সোমবার সকাল ৮টায় ‘রোড টু ঢাকা মার্চ’ কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগের উদ্দেশ পথযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছেন জাবি শিক্ষার্থীরা।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউস্ট) শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে সৈয়দপুর-পার্বতীপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে বাউস্টের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশগ্রহণ করে ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছয় দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বেলা ১২টা থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ শিববাড়ির মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সাথে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (কুয়েট) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকে শিববাড়ি মোড়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলেও শিক্ষার্থীদের বিশাল মিছিল দেখে প্রতিরোধ না করেই তারা গোপনে পালিয়ে যায়।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার পর শহরের কোর্ট চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে চাঁদমারী অভিমুখে রওনা হয়।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় এক ঘণ্টা মহাসড়কের আশেকপুর-নগরজলফৈ বাইপাসে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, সৃষ্টি অ্যাকাডেমিক স্কুল, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজ ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আন্দোলনরত শিার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের মারমুখি আচরণে গতকাল চট্টগ্রামে কোথাও শিার্থীরা রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি। শনিবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়িতে গিয়ে শিার্থীদের আন্দোলনে না যেতে হুমকি দেয়া হয়েছে। গতকাল বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিার্থীকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ‘ছাত্রশিবির’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে পুলিশে দেয়। এতে আন্দোলনরত শিার্থীদের অভিভাবকেরা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশকে সাথে নিয়ে অবস্থান করে। নগরের ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, ষোলশহর, আগ্রাবাদ, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিার্থীদের জড়ো হতে দেখলে ধাওয়া করে এমন অভিযোগ করেছে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা। অনেকের মোবাইল নিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ গ্র“পে যুক্ত দেখেই মারধর করতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন ঠেকাতে এবার নারায়ণগঞ্জ শহর দখল নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার সুযোগ না দিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন।
ময়মনসিংহ অফিস জানান, ময়মনসিংহে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রোববার শহরের বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থীরা কাস বর্জন করে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। দুপুরে শহরের টাউনহল এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। সকাল থেকেই পরিবহন শ্রমিকরা শহরের বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে রিকসা ও ইজিবাইকসহ সব ধরনের যান চলাচলে বাঁধা প্রদান করে। বেলা এগারটার দিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টাউনহল মোড়ে জড়ো হয়ে সড়কে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে টাউনহল চত্বরে অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিকরা যানবাহন চলাচলে বাঁধা দিতে গেলে শ্রমিকদের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগরে ভূইয়া মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। সকাল ১০টায় ঢাকা-দোহার মহাসড়কের দামলা ভূয়া মেডিক্যাল কলেজের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ন ভাবে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় শিক্ষার্থীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় ডিএমপির একটি পুলিশের ভ্যানে স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন যুবক হামলা চালিয়ে ভ্যানটি ভাঙচুর করে। এ ছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা- হোমনা সড়কের বিআরটিসির একটি বাস (নং-ঢাকা মেট্টো ব-১১-৫১৭৯) ভাঙচুর করে বিুব্ধ ছাত্ররা।নয়াদিগন্ত।
Check Also
ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান
সব ধর্ম, ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। …