ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেলের কার্যালয়ের নিচ তলায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে দালালী অফিস বসিয়ে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছিলেন হাফিজুল আলম রিপন (৩১)। বিআরটিএ অফিসের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগিতায় এ অপকর্ম চালিয়ে আসলেও কেউ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে পারছিলেন না। এ চক্রটির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। কাচা টাকার লোভে পড়ে দেদারছে চালাচ্ছিলেন চাঁদাবাজি। দালাল চক্রটির ডালপালা বিস্তৃত ছিলো শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে কালেক্টরেট চত্তর পর্যন্ত। মটরসাইকেলসহ যানবাহনের কাগজপত্র তৈরি করে দেয়ার নামে এ চক্রটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলো বলে অভিযোগ ওঠে। একজন জনপ্রতিনিধির যাদুর বলে চক্রটি সক্রিয় ছিলো বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। সাধারণ মানুষ দালাল চক্রটির খপ্পরে পড়ে হয়রানি হয় এবং চাঁদাবাজদের কবলে পড়ে। সম্প্রতি বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নজরে আসলে শুরু হয় অভিযান। জেলা প্রশাসন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে মটরসাইকেলে নাম্বারপ্লেট বিতরণের স্থান সরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্তরে নেয়। সেখানেও দালালরা যেয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে হাতিয়ে নিতে থাকে নগদ টাকা। জেলা প্রশাসন দালাল নির্মূলে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার আটক হয় দালাল চক্রের সদস্য সেলিম। এরপর বুধবার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা সার্কেলের নামে ঘুষ বাণিজ্যের মূল হোতা হাফিজুল আলম রিপন (৩১) কে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের নিচ তলায় নিজ চেয়ার টেবিল বসিয়ে বিআরটিএ আফিসের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আসছিল রিপন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনেক বছর ধরে রিপনের টেবিল-চেয়ার পাতানো অবৈধ অফিস ছিল বলে সেখানকার অনেকেই জানান। দালালী, জালিয়াতি, ভূয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা ছিল তার পেশা। ৫৫০০ টাকা নিয়ে জালিয়াতি করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিআরটিএ অফিসের নামে ৫৫০০ টাকা করে নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া ও ঘুষ গ্রহণের মূল হোতা রিপনকে গ্রেপ্তার করার খবরে অনেকেই প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত রিপন সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের আফসার উদ্দীনের ছেলে।
শহরের মুনজিতপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহিমের ছেলে রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমি বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যাই। আমার কাগজপত্র সব ছিলনা বলে ঠিক করে আনতে বলেন, আমিনুর রহমান। আমি ফিরে যাওয়ার সময় রিপন নামে এক যুবক আমাকে বলে, ‘আপনার কি সমস্যা? তখন তাকে সব খুলে বললাম। রিপন বলেন, আমি সব করে দেব। ৫৫০০ টাকা দেন। তারপর আমি তাকে ৫৫০০ টাকা দিয়ে লাইসেন্স করি। (কল রেকর্ডিং সংরক্ষিত)।
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘কাগজপত্র ঠিক না থাকলে অফিস থেকে যে কাজ ফেরৎ দেয়া হতো সে কাজ রিপন করে দিতো জালিয়াতি করে। আমরা ঘুষ না নিলেও রিপন অফিসের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা ও হয়রাণী করে আসছিল।’
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাফিজুল আলম রিপন নামের এক দালালকে বিআরটিএ’র সহাকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিল, আবেদন ফরম, অনেক ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং বিআরটিএ অফিসের নকল কাগজপত্রসহ ধরে সদর থানায় অভিযোগসহ সোপর্দ করেন। ৮ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানার মামলা নং ২৪/২০১৮’।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে কয়েক বছর ধরে অফিস হিসেবে চেয়ার টেবিল বসিয়ে দালালি করছিল, এটা আমার জানা ছিল না। এখন জেনেছি, তবে আমার অফিসের কেও নিশ্চয় জড়িত আছে। তা না হলে কিভাবে এতোদিন সে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস বানিয়ে দালালী করলো। রিপনের সাথে আমার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এদিকে রিপনকে থানা থেকে ছাড়ানোর জন্য তদ্বির করছিলেন জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক ব্যক্তি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তদ্বিরের পাত্তাই দেয়নি প্রশাসন ও পুলিশ।দৈনিক পত্রদূত