বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোর-বেনাপোল এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দখল করে আছে ভারত থেকে আমদানি করা ট্রাকের চ্যাসিজ। যানবাহন চলাচল বন্ধ ও পথচারীদের দুর্ভোগে ফেলছেন অশোক লিলেন মটরস কোম্পানির প্রতিনিধি ও পাহারাদারা। শুধু অশোক লিলেন নয়, টাটা ও আইসার নামের কোম্পানির চ্যাসিজ পার্কিংয়েও এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গত এক মাস ধরে মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে এ অবস্থা থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। রাজস্ব আয়ের অজুহাত দেখিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আমলে নিচ্ছেন না বন্দর ও কাস্টমস।
মোটরযান আমদানি কোম্পানির দাবি, বন্দরে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে মহাসড়কের ওপর চ্যাসিজ পার্কিং করতে হয়েছে বলে তাদের দাবি।
রোববার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের বন্দরের রফতানি টার্মিনালের পাশ দিয়ে ব্যস্ততম সড়কটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টু লেনের সড়কের দুই ধারেই ৪টি লাইন করে রাস্তার ওপর পার্কিং করে রাখা রয়েছে অশোক লিলেন,টাটা ও আইসার কোম্পানির ট্রাক চ্যাসিজ। এতে রাস্তার এক অংশ সম্পূর্ণভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া মানুষ চলাচলের ফুটপাত দখল করেও চ্যাসিজ পার্কিং থাকতে দেখা যায়। এতে বিভিন্ন ভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, অশোক লিলেনসহ কয়েকটা কোম্পানি সম্প্রতি ট্রাক চ্যাসিজ আমদানি বাড়িয়েছেন। তবে রহস্যজনক কারণে বন্দর থেকে দ্রুত এসব ছাড় করান না তারা। মাসের পর মাস বন্দরের বাইরে মহাসড়কের ওপর,বাইপাস সড়কের পাশে,ভারত-বাংলাদেশ ইন্টিগেটেডে রাস্তার পাশে এবং ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে অনিয়ম করে রেখে দেওয়া হয়। এত বড় অনিয়ম হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা আরো ও জানান, এসব আমদানিকারকদের যদি দ্রুত পণ্য খালাস নেওয়ার প্রয়োজন না থাকে তাহলে এত ব্যাপক হারে আমদানি করে পণ্যজট সৃষ্টি করে লাভ কি? এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে? বিষয়টি ভালোভাবে ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। এসব পণ্যের কারণে বন্দরে সবসময় যানজট লেগে থাকে।
অশোক লিলেন কোম্পানির সি অ্যান্ড এফ প্রতিনিধি ফয়সাল এন্টার প্রাইজের চ্যাসিজ তত্ত্বাবধানকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্দরের মধ্যে কোনো যায়গা নেই। তাহলে রাখবো কোথায়? এতে তাদের পণ্যেরও ঝুঁকি রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় আমদানিকারকদের জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনোভাবে শুনছেন না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে।
বেনাপোল কাস্টমসের কার্গো সুপার হারুন অর রশিদ জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছেন। বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা চ্যাসিজগুলো দ্রুত খালাস নেওয়ার ব্যাপারে তারা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের চাপও দিয়ে থাকেন।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যায় ব্যবসায়ীরা দিন দিন এ পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে রাজস্ব আয়েও ঘাটতি পড়ছে। এত টাকা বন্দর আয় করছে কিন্তু বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।
বেনাপোল বন্দরের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে মহাসড়কের ওপর থেকে যাতে পার্কিং উঠে যায় সেই বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।