দারুণ জয়ে সাফ ফুটবলে লাল-সবুজ দলের শুভ সূচনা

ক্রাইমবার্তা র্রিপোট”  প্রায় দুই বছর আগে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ লড়াইটির কথা নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্লে-অফের ম্যাচে ৩-১ গোলে হেরেছিল লাল-সবুজের দল। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী দিনে সেই ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে সহজ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সর্বশেষ ম্যাচে হারের প্রতিশোধ নিয়েছে লাল-সবুজের দল।

ম্যাচের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় পেনাল্টি থেকে করা গোলে। ডিফেন্ডার তপু বর্মণ লক্ষ্যভেদ করেন।

ম্যাচের সপ্তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান। মাঝমাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়লেও তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ভুটান গোলরক্ষক।

ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। তরুণ ফরোয়ার্ড বিপলু আহমেদের শট ভুটান গোলরক্ষক কোনোমতে বিপদমুক্ত না করলে গোল হতেও পারত।

প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকলেও প্রধান্য বিস্তার করেই খেলেছে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়াও করে তারা।

তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তরুণ ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান। মাঝমাঠ থেকে পাওয়া একটি বল নিয়ে বক্সে ডুকেই আড়াআড়ি শটে জালে জড়ান বল।

ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ভুটান ব্যবধান কমানোর দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল।  দলটির রোনালদো খ্যাত চেনচো বল নিয়ে বিপৎসীমানায় ঢুকে পড়েও গোল করতে পারেননি।

সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অসাধারণ সাফল্যে দেশের ফুটবলে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। কদিন আগে ইন্দোনেশিয়ায় তারা হারিয়েছিল আগামী ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ কাতারকে। প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ গেমসের দ্বিতীয় পর্বে ওঠে। তাই চলমান সাফের শুরু থেকেই বেশ উজ্জীবিত বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন: আরো পড়ুন : নাটকীয় জয়ে শুভ সূচনা পাকিস্তানের

সাফ ফুটবলের উদ্বোধনী ম্যাচে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে পাকিস্তান। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে নেপাল দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। এ গ্রুপের দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান।

৩৫ মিনিটে পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। ডান দিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে বক্সে হেড নেয়ার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের মুহাম্মদ রিয়াজ। এ সময়ে তাকে ফেলে দেন নেপালের অধিনায়ক বিরাজ মাহারজন। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি হাসান নাভীদ বশির।

দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়। তবে সাফল্য পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক্ষণ। পাকিস্তানের রক্ষণভাগ এই সময় দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে। ৮২ মিনিটে নেপাল ম্যাচে ফেরে বিমল ঘারতি মাগারের দর্শণীয় গোলে। ডান প্রান্ত থেকে নেয়া কর্নার সতীর্থ খেলোয়াড়ের মাথা হয়ে বিমলের সামনে আসতেই বা পায়ের প্লেসিংয়ে কাঁপিয়ে দেন পাকিস্তানের জাল।

ইনজুরি সময়ে শেষ বাঁশি বাজার মিনিট খানেক আগে পাকিস্তান জয় সূচক গোল করে। মোহাম্মদ আদিলের ক্রস সাদউল্লাহর মাথা হয়ে মোহাম্মদ আলীর সামনে গেলে তিনি কোনো ভুল করেননি। হেডে বল জড়ান নেপালের জালে।

আরো পড়ুন: আজ শুরু হচ্ছে সাফ ফুটবল

আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। মূলত এশিয়ার বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত এ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। স্পন্সরশিপের কারণে ২০১৫ সাল থেকে টুর্নামেন্টটি ‘সাফ সুজুকি কাপ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য টুর্নামেন্টে অংশ অংশ নিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও স্বাগতিক বাংলাদেশ।

শ্রীলংকা ও স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, সাফ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিতে গতকাল উন্মোচিত হয়েছে টুর্নামেন্টের ট্রফি।

সাত দল দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নেবে টুর্নামেন্টে। ‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান, নেপাল ও পাকিস্থান।

‘বি’ গ্রুপে লড়বে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। মঙ্গলবার উদ্বোধনী ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় মুখোমুখি হবে নেপাল ও পাকিস্তান। সন্ধ্যা ৭টায় দিনে দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি সাতবার শিরোপা জিতেছে ভারত। বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা।

২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এ পর্যন্ত একবারই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর কেটে গেছে প্রায় দেড় দশক, কখনো আর ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি লাল-সবুজের জার্সিধারীদের। শুধু দেড় দশকের ট্রফি শূন্যতাই নয়, সাফে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থাও খুব বেশি ভাল নয়। সর্বশেষ তিন আসরের কোনোবারই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি বাংলাদেশ।

তিন আসরে মোট ৯ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র একটিতে, ড্র দুটি, বাকি ছয়টিই হার। অথৈ সাগরে তলিয়ে যেতে থাকা বাংলাদেশের ফুটবলে অবশ্য হঠাৎ আলোর ঝলকানি হয়ে এসেছে এশিয়ান গেমসের পারফরম্যান্স। যেখানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রায় একশ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতারকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো খেলেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেই সাফল্য সাফে বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে। আশা ২০০৩ আসরের পুনরাবৃত্তি।

আরো পড়ুন: সাফ ফুটবলের অনুপ্রেরণা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজ থেকে ১৫ বছর আগের ঘটনা। ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একবার চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজরা। লম্বা সময় পর আবার ঢাকায় বসছে সাফ ফুটবলের আসর। অবশ্য এই সময়ের গ্যাপে বাংলাদেশ এখন আর ফেবারিটের তালিকায় নেই। গত পাঁচটি সাফের চার টিতেই তাদের বিদায় গ্রুপপর্ব থেকে।

এরপরও এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের পারফরম্যান্স নতুন করে এবারের সাফে আশাবাদী হতে উৎসাহ জোগাচ্ছিল। কিন্তু ২৯ আগস্ট নীলফামারীতে দুর্বল শ্রীলঙ্কা কাছে হারে ফের উৎসাহে ভাটা। তবুও সে ম্যাচে সন্তুষ্টি খোঁজার রাস্তা আছে। লঙ্কানদের বিপক্ষে মূল জাতীয় দল খেলেনি। কিছু ফুটবলারকে পরীক্ষা করা হয়েছে। আসল জাতীয় দল হবে সাফের সময়। শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ তো স্রেফই প্রস্তুতি ম্যাচ। তাই এখনো আশায় গুঁড়েবালি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। বরং এখনো সম্ভাবনা জিইয়ে আছে।

এই বাস্তবতায় গতকাল বর্তমান সাফ ফুটবল দলকে শুভকামনা জনালেন ২০০৩ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের ফুটবলারেরা। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি আয়োজিত বসুন্ধরা কিংস ফুটবল স্টারস ২০০৩ ও ২০১৮ এই ব্যানারে এবারের দলের কাছেও ট্রফি চাইলেন সেই দলের অধিনায়ক রজনী কান্ত বর্মন, আলফাজ, আরমান, সেই দলের ফুটবলার বর্তমান ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আমিনুলরা।

২০০৩ সালের স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে আবগেতাড়িত হলেন কয়েকজন। দলনেতা শওকত আলীজাহাঙ্গীরেরতো চোখে পানি এসে গেল। দুই হলুদ কার্ডের জন্য ফাইনাল মিস করা রজনী যখন তার আর্মব্যান্ড তুলে দিচ্ছিলেন হাসান আল মামুনের হাতে তখন রজনীর দেশপ্রেমের কথাই কাঁদিয়েছিল সবাইকে, বললেন জাহাঙ্গীর। রজনী বললেন, ‘আমি চাই এবার যেন ১৫ বছর আগের সাফল্য ফিরে আসে।’

মিডফিল্ডার আরমান মিয়ার মতে, ‘তখন সমগ্র জাতি আমাদের সাথে ছিল। সাথে যোগ হয়েছিল আমাদের কঠোর পরিশ্রম। এবারো সাফে আমরা সবাইকে পাশে চাই। একই সাথে ফুটবলাদের প্রতি তার উপদেশ আপনাদের নার্ভাস হওয়া চলবে না। এবারো আপনাদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চাই।’ এছাড়াও আমিনুল, আবু ইউসুফ বক্তব্য রাখেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।