খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া জনগণ ভোট হতে দেবে না: ফখরুল# প্রধান মন্ত্রীকে গণতন্ত্রমনা হতে হবে :বি চৌধুরী # ‘জনভিত্তিহীন নেতা, দালাল ও বিতর্কিত সুশীলদের তৎপরতা বাড়ছে:অলি

ক্রাইমবার্তা ডেক্স রিপোর্টঃবিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেবে না। ফেসবুকে লিখলেও ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হচ্ছে। কাগজে লিখতে দিচ্ছে না। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের জানিয়ে দিয়েছে শেষ রক্ষা হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া জনগণ ভোট হতে দেবে না।

শনিবার বিকালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

২০ দলীয় জোটের প্রয়াত নেতা কাজী জাফর আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভার আয়োজন করে।

দলটির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস, মাওলানা রুহুল আমীন, সেলিম মাস্টার, প্রয়াত নেতা কাজী জাফর আহমদের মেয়ে কাজী জয়া, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া প্রমুখ।খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া জনগণ ভোট হতে দেবে না

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ যখন হবে তখন নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে যোগ্য ব্যক্তিকে দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে- এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকারের লোকেরা বহু কথা বলছেন। কিছুদিন আগে তারা ছবক দিতেন, নির্বাচনের কথা বলতেন। আসেন না নির্বাচনে, ভয় কেন?

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো কিছু পরিবর্তন না করে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে একা একা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়িয়ে ভোট নেয়া, এটি দেশের মানুষ হতে দেবে না। মানুষ গ্রহণ করবে না।

তিনি বলেন, সারা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এটি আসলে এখন নরক হয়ে গেছে। প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগাম মামলা দিয়ে রাখা হচ্ছে। ঢাকার সব থানায়, ওয়ার্ডে আগাম মামলা দিয়ে রাখা হচ্ছে। নির্বাচন আসলে এসব মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হবে। কী কাপুরুষ? সরকার কতটা কাপুরুষ হলে এই ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইদানীং ভারতের পত্রপত্রিকা ভিন্ন সুরে কথা বলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। এটাই বাস্তবতা।

সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন উদযাপনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ানো হচ্ছে। অন্ধকার আকাশে আতশবাজি করা হচ্ছে। এতে কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। সামনের নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে অন্যায়, অগণতান্ত্রিক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বাস্তবতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ যা খুশি তাই করছে। টিকে থাকতে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।

প্রয়াত কাজী জাফরের স্মৃতিচারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন বলেন, কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে বাতিস্তা সরকার সাজা দেয়ার পর তিনি বলেছিলেন- ‘ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে, তোমরা আমাকে সাজা দিতে পার।’ কাজী জাফর আহমেদকে ইতিহাস ধারণ করে আছে। খালেদা জিয়াকে ইতিহাস ধারণ করছে।

———০————

বি চৌধুরীর মুখে হাসিনা-খালেদার গুণগান

বি চৌধুরীর মুখে হাসিনা-খালেদার গুণগান
গুলশানে আলোচনা সভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ অন্যান্য অতিথিরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনা করলেও তার গুণগান করে এবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রাধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে বেশকিছু গুণগান করলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রাধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে পজেটিভ বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ জানালেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

বি চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দিন বিদেশে ছিলেন। তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশপ্রেম না থাকলে এটা হওয়ার কথা না। আওয়ামী লীগ প্রায় অসংগঠিত দলের পরিণত হয়েছিল সেই দলকে আবার সংগঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি খুব ভালো ছড়াও জানেন। এটা আমি জানতাম না। তিনি খুব ভালো রান্নাও করতে জানেন।

খালেদা জিয়া সম্পর্কে বি চৌধুরী বলেন, তিনি একজন গৃহিণী। সে থেকে তিনি রাজনীতি করছেন। নিশ্চয় অনেক স্বার্থ রক্ষা করেছেন। রাজপথে নেমেছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য শেষ পর্যন্ত তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। এটা তার রাজনৈতিক কৃতিত্বের ফল।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে প্ল্যান-বি এর ব্যতিক্রমধর্মী আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন প্রজন্ম বাংলাদেশ।

বি চৌধুরী বলেন, লিডারশিপ শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের মধ্যে নয়। লিডাশিপ সমাজের মধ্যে হতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সফলতা থাকতে হবে। সত্যনিষ্ঠতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব লোভের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। গণতন্ত্রমনা হতে হবে। মানুষের যে অনুভূতি তা বোঝার ক্ষমতা যে রাজনীতিবিদের নেই তিনি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক নন।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ছাত্র যুবক আন্দোলন করে সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে ঠকবাজি চলবে না। আমাদের মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই। আজকে বাংলা ভাষা যে পৃথিবীতে সম্মানজনক অবস্থায় আছে তা কে এনে দিয়েছিল। বুড়া বুড়া নেতারা নয়, বড় বড় নেতারা নয়। এনেছিল ছাত্র যুবক। রাজনীতি থেকে দূরে যুবকরা থাকতে পারে না। সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন তাদের দেখাতেই হবে। যেখানে সন্ত্রাস থাকবে না, সেখানে স্বপ্ন থাকবে। সন্ত্রাসের জায়গায় আসবে শান্তি শব্দটি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী।

——–০—————

রাজনৈতিক দালাল ও বিতর্কিত সুশীলদের তৎপরতা বাড়ছে: কর্নেল অলি

রাজনৈতিক দালাল ও বিতর্কিত সুশীলদের তৎপরতা বাড়ছে: কর্নেল অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ফাইল ছবি

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, ‘জনভিত্তিহীন আসনবঞ্চিত নেতা, রাজনৈতিক দালাল ও বিতর্কিত সুশীলদের তৎপরতা বাড়ছে। এর থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।’

তিনি বলেন, ‘দেশকে বিশৃঙ্খলার হাত থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের বিকল্প নেই।’

শনিবার এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্নেল অলি এসব কথা বলেন।

এলডিপির সভাপতি বলেন, ‘আজ আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। সবার মনে একটি প্রশ্ন নির্বাচনকে ঘিরে দেশে কী হতে যাচ্ছে। দেশের কি শান্তি ফিরে আসবে? মানুষ কি শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারবে? উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড কি অব্যাহত থাকবে? সুশাসন ও ন্যায়বিচার কি প্রতিষ্ঠিত হবে? জনগণ কি ভোট দিতে পারবে?’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারি দল ও বিরোধীদলগুলোর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণকে আশার আলো দেখাতে পারে।’

বিএনপিকেও অধিকতর কৌশলী এবং বাস্তববাদী হতে হবে জানিয়ে কর্নেল অলি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আগালে কোনো ফলাফল আসবে না। বিএনপি একটি শক্তিশালী দল। বিএনপিকে পুনর্গঠন করে এ দেশে যে কোনো কাজ করা সম্ভব। সেই বিশ্বাস নিয়ে নেতাদেরকে মাঠে নামতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব পেলে বিএনপির পক্ষে যে কোনো কিছু করা সম্ভব। জ্বালাও-পোড়াও দিয়ে দেশের মঙ্গল হবে না।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।