ক্রাইমবার্তা ডেক্স রিপোর্টঃ
ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে কলিং ভিসার স্ট্যাম্পিং কার্যক্রম ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়ার পর থেকেই বেকায়দায় পড়েছেন মালয়েশিয়াগামী হাজার হাজার শ্রমিক। শ্রমবাজার বন্ধ না হওয়ার পরও কী কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ব্যাপারে গুলশানের বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা এড়িয়ে গিয়ে হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
বুধবার মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার কার্যালয়ের টেলিফোন নম্বরে (হটলাইন) যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বশীল একজন নিজের পরিচয় না দিয়ে এ প্রতিবেদককে শুধু বলেন, আমাদের এখান থেকে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের সব কাজ সম্পন্ন হলেও এক সপ্তাহ ধরে (১ সেপ্টেম্বর) ওপরের নির্দেশে স্থগিত আছে। ‘উপরের কার নির্দেশে স্থগিত- জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ঢাকার মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে কার্যক্রম স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এর পর থেকে স্থগিত।’ এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে হলে হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দায়িত্বশীল কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলাম এর আগে নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া সম্পূর্ণ বন্ধের আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি দেয়নি। তবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকার ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যে পদ্ধতিতে (এসপিপিএ) শ্রমিক আসত, সে পদ্ধতিতে আর তারা কর্মী নেবে না। এর জন্য তারা সিনারফ্ল্যাক্স কোম্পানির শুধু এসপিপিএ সিস্টেমটি স্থগিত করেছে। শিগগিরই সবার জন্য ভালো এমন নতুন এসপিপিএ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী আনার কথা বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
এ দিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে এবার সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করতে পারে, সে জন্য চলতি মাসের যেকোনো সময় হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্টারের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করতে পারেন বলে জানা গেছে।
গতকাল জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক সভাপতি ও প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মো: গোলাম মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, যখনই আমি শুনছি এসপিপিএ সিস্টেম অফ হয়ে গেছে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, তখন আমি শুধু একটা শব্দই বলেছি, আল হামদুলিল্লাহ। তিনি বলেন, ১০ জনের নাম বলা হলেও আমাদের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি এবং এর বাইরে ও দুই দেশের লোকজন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসা করেছে। তবে সেই করার ভেতরে শুধু টাকা অর্জন আছে কোনো প্রফেশনাল সেটিসফেকশন নেই; যার কারণে আমি এটিকে ওয়েলকাম করি মালয়েশিয়া সরকার সবার জন্য এ সেক্টরটাকে উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওনারা বলেছেন, ইন্ট্রিগ্রেটেড সিস্টেম করে যখন ফরমালি চালু করবে তখন সবাই ব্যবসা করবে; যার যতটুকু ক্যাপাসিটি আছে। তার আগে আমার একটাই প্রত্যাশা, যেগুলো এপ্রুভাল হয়েছে, এলোকেশন হয়েছে বা কলিং ভিসা হয়েছে সেগুলোর যেন কলিং ভিসা স্ট্যাম্পিং হয়।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন কী কারণে (এমইএফসি) ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে, তা আমি জানি না। আমরা মূলত এমইএফসির মাধ্যমেই ভিসা ফরম পূরণ, পে-অর্ডার, ভিসা ফি ও পাসপোর্ট জমা করতাম। পরে তারাই মালয়েশিয়া হাইকমিশনে জমা দিত। পরে মালয়েশিয়া হাইকমিশন ভিসা স্ট্যাম্পিং করে ফি রেখে ভিসা সেন্টারে পাঠিয়ে দিত। তারা আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করত। এটিই ওদের কাজ ছিল। ওদের এ কার্যক্রমটা তারা স্থগিত করায় আমাদের হাতে যেসব ভিসা আছে আমরা সেটি স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য আর জমা দিতে পারছি না। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের আবেদন হচ্ছে, নতুন এপ্রুভাল উনারা নেই বা দিলেন, সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো এটিও ঠিক আছে, কিন্তু যেগুলোর জন্য উনারা (মালয়েশিয়া সরকার) লেভি নিয়েছেন কিংবা এপ্রুভাল দিয়েছেন সেটি যেন কলিং হয়, কলিং যেটা হয়েছে সেটা যেন স্ট্যাম্পিং হয়, আর স্ট্যাম্পিং যেটা হবে সেটার যেন ফ্লাইটটি হয়। এটি হলে আমাদের অনেক কর্মী সাফারিংয়ের হাত থেকে বাঁচবে। আমরাও বাঁচব, আমাদের কমিটমেন্টও বাঁচবে। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমাদের সরকার, মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনার খুব পজিটিভলি কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তারা তো স্টপ করেনি। ফ্রিজ করেনি। এটি হচ্ছে নতুন সিস্টেম আসার আগ পর্যন্ত আপাতত স্ট্যাম্পিংটা স্টপ রেখেছে। কলিং ভিসা কিন্তু হচ্ছে। তিনি আপেক্ষ করে বলেন, এ ১০ জনে যে ব্যবসা করেছে, যারা এই প্রক্রিয়াটি মালয়েশিয়ার গভর্মেন্টের কাছ থেকে আদায় করেছে, তার আগেই কিন্তু একটা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তখনকার বায়রা থেকে। এরা কারাÑ নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা এখন বিরোধিতা করছে, তারা তো একেবারে বায়রার প্যাডেই তখন দরখাস্ত করেছিল। এর ডকুমন্টেও আছে। আসলে এগুলো খুবই দুঃখজনক।
এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি তার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজার বন্ধের ব্যাপারে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি দেয়নি। এসপিপিএ সিস্টেম শুধু বাদ দিয়েছে। তারা নতুন পদ্ধতিতে লোক নেবে। একই সাথে যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পাইপলাইনে আছে তারা সবাই যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন। এর পরও ঢাকার বারিধারা বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা প্রসেসিং-সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকায় অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে শ্রমিক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের কাছ থেকে জানা গেছে।