যশোরে কলেজছাত্রকে আটকে মুক্তিপণ দাবি, ছাত্রলীগ সভাপতিসহ আটক ৭

যশোর ব্যুরো:  যশোর সরকারি এমএম কলেজের পুরনো ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে আটক ছাত্রলীগের সভাপতিসহ সাতজন জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়েছে।

শনিবার ওই সাতজনকে ৩৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। অভিযুক্তরা যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীনের মাধ্যমে আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তির আবেদন করেন।

শুনানি শেষে বিচারক মুহাম্মদ আকরাম হোসেন অভিযুক্ত সাতজনকে জরিমানা করে মুক্তির আদেশ দেন।

আটককৃতরা হলেন-এমএম কলেজ পুরাতন হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও মাগুরার শালিখা উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মোক্তার আলী মোল্লার ছেলে রাশেদ পারভেজ (২৪), যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আন্তরামপুর গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে আলম মামুন (২৪), খাজুরা এলাকার ওহাব বিশ্বাসের ছেলে সজীব আহমেদ (২২), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফারাশপুর গ্রামের আজম আলীর ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (২২), একই উপজেলার বারোবাজার এলকার আছির উদ্দিনের ছেলে মুজাহিদ আলী (২৫), মহেশপুর উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের রায়হান আলীর ছেলে জসিম উদ্দীন (২৮) এবং একই উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন (২২)। তারা সবাই ওই ছাত্রাবাসের বাসিন্দা এবং এমএম কলেজের শিক্ষার্থী।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শানবান্ধা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহিমকে আটকে রেখে মুক্তিপণের দাবির অভিযোগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাদের আটক করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ‘ম্যানেজ’ হয়ে ওই সাতজনকে ৩৪ ধারায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে তারা আদালতে দোষ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কোতোয়ালি থানার অফিসার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, পুরনোটা নিয়ে কি লাভ আছে? প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আপডেট কী আছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ওরা তো অপহরণ করেনি। ওদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাননি। একপর্যায়ে ফোন কেটে দেন।

আব্দুর রহিমের অভিযোগ, ১২ দিন আগে সে তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকায় এমএম কলেজের পুরনো ছাত্রাবাসে ওঠে।

সেখানে থেকে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় সরকারি একটি বিশেষ বাহিনীতে চাকরির আশায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই ছাত্রাবাসের রাশেদ, রুম্মনসহ সাতজন তাকে রুম থেকে ডেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়।

সেখানে গিয়ে বলে, ‘তোর সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেম আছে। তাকে বিয়ে করতে হবে। ওই মেয়ে আমাদের এক লাখ টাকা দেবে। তুই যদি ২ লাখ টাকা দিস তাহলে তোকে ছেড়ে দেয়া হবে।’ এরপর থেকে তার বাড়িতে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে দেনদরবার।

বিষয়টি তার (রহিমের) বাবা আব্দুল মান্নানকে জানানো হলে তিনি যশোরে আসেন এবং পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে কোতোয়ালি থানার এসআই এইচএম মাহমুদ বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ওই ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং সাতজনকে আটক করেন।

শনিবার রাতে এসআই এইচএম মাহমুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।

তবে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,‘বিষয়টি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কথিত মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত আব্দুর রহিমের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ছেলেটি এখন ওই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইছে না। সে কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের মেয়েপক্ষ বিষয়টি জানালে তারা ছেলেটিকে আটকে রাখে এবং মেয়েপক্ষকে বিষয়টি জানায়। এক হিসেবে একে অপহরণ বা জিম্মি করে রাখা বলা যায়।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।