ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃসহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার শপথ নিলেন বাংলাদেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের শপথ করানো হয়। কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান নয়, একদল শিশুর কাছে শপথ নেন নেতারা।
৪০টি জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৪০০ নেতা এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। ইউএসএইড ও ইউকেএইডের অর্থায়নে এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ‘স্ট্রেংথেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও সহনশীল রাজনীতির চর্চা বৃদ্ধিতে ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করছে। কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ। আর বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম হীরা, সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনি প্রমুখ।
অংশগ্রহণকারী রাজনীতিবিদরা নির্বাচনে সহিংসতা না করতে শিশুদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। আয়োজকদের বিশ্বাস এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শান্তি আসবে। সহিংসতা কমবে। সুবিচার আসবে। এভাবেই গণতন্ত্রের উন্নয়ন ঘটবে।
শপথ অনুষ্ঠানে ছোটদের গলায় গলা মিলিয়ে রাজনৈতিক নেতারা বলে ওঠেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতিই দেশের মানুষের কল্যাণ আনতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, যারা শান্তিপূর্ণ রাজনীতি চর্চা করবে দেশের মানুষ তাদেরই সমর্থন করবে। তাই আমি অঙ্গীকার করছি, আমি সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির চর্চা করব। ভবিষ্যতের যে কোনো নির্বাচনে আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালাব এবং দলের কর্মীদেরও নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বজায় রাখতে উৎসাহিত করব। আমি অঙ্গীকার করছি, আমি সব সময় শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে সচেষ্ট থাকব। শান্তিতে বিজয় বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের বিজয়। শান্তি জিতলে জিতবে দেশ।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, আমরা উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই। সেইসঙ্গে চাই গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ যে দেশ সারা বিশ্বের আদর্শ হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু, অবাধ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। আমাদের দল এবং আমাদের সরকার এ ব্যাপারে পিছপা হবে না।’
এইচটি ইমাম আরও বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রসহ নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতিগুলো ধীরে ধীরে হয়েছে। এগুলো আমরা খুব সচেতনভাবে লক্ষ করি না। কিন্তু আমি যেহেতু এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাই লক্ষ করি এবং দেখি আমরা কতদূর এগিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, এটি তো বিনা কারণে হয়নি। এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করেছে বলেই এটি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা, বাংলাদেশ যেমন উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই তেমনি সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ চাই, যেটি সারা বিশ্বের আদর্শ হবে। এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত ঘটনাগুলো বলতে চাই না। কিন্তু আমরা কখনও কাউকে পাল্টা আক্রমণ করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি একজন বর্ষীয়ান মানুষ। কাজেই এদিক থেকে সবার কাছে অনুরোধ করতে পারি, আমরা ভুল মিথ্যা, প্রচারণা থেকে বিরত থাকব। বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা থেকে বিরত থাকব। আমরা সত্য কথা বলব। সত্যকে সত্য বলব। সাদাকে সাদা বলব। কালোকে কালো বলব। যিনি অন্যায় করছেন সেটি তুলে ধরব।’
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে এইচটি ইমাম বলেন, ‘যেহেতু নিজে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। সেই জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। এই জনযুদ্ধে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু জনযুদ্ধের প্রস্তুতিটি দীর্ঘকালের। এই প্রস্তুতিকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং যুদ্ধের আহ্বানটি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের গণতন্ত্রের কথা প্রথম শিখিয়েছেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের শান্তির কথা। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের প্রগতির কথা।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. মঈন খান বলেছেন, ‘আমরা রাজনীতিতে শান্তির কথা বলছি। শান্তি খুব প্রয়োজন। কিন্তু সুবিচার ছাড়া শান্তি সম্ভব না। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। শুধু তাই নয়, আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ চাই। এটাই তো আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আনন্দিত এ জন্য নয় যে, আমি বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি আনন্দিত যে, আমরা এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব না। আমরা এ কথাই বলতে এসেছি। আমরা সামাজিক সুবিচার, রাজনৈতিক সুবিচার দাবি করি, এগুলো ছাড়া মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভাবা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের হাতে হাত ধরে এগোতে চাই। কারণ একসঙ্গে কাজ করলে আমরা গণতন্ত্র ও উন্নয়ন আনতে পারব।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া দরকার। বিশেষ করে যে দেশটি (বাংলাদেশ) মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। এ দেশেরও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ঐতিহ্য রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইস্যু বা নীতির বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈধ অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে মেনে নিতে হবে।’ নির্বাচন চলাকালে এবং আগে ও পরে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, ‘ভোটে সহিংসতাকারীরা বাংলাদেশের ভালো চায় না। সহিংসতা শুধু তাদেরই কাজে আসে যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের স্বার্থহানি করতে চায়।’
রাষ্ট্রদূত জানান, অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার, যুক্তরাজ্য সরকার এবং সবার অর্থাৎ বাংলাদেশি সহযোগীদের অনন্য সহযোগিতার ফসল। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছে উন্নয়ন আর প্রগতির আকাক্সক্ষা ও উচ্চাভিলাষ। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত এলিসন ব্লেক বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে বলা হয়েছে জনগণ ক্ষমতার উৎস। এ কারণে নির্বাচনে সব নাগরিকের অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায়। কেননা, রাজনৈতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহিংসতা হলে শুধু রাজনীতিবিদরা নন, সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না
———0————-
ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে থাকা বাংলাদেশের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আচরণের আহ্বানও জানাতে হবে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কর্মসূচি ‘শান্তিতে বিজয়’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
ইউএসএইড ও ইউকেএইডের যৌথ অর্থায়ন এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় প্রচার কার্যক্রমটি হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ৪০টি জেলার চার শতাধিক রাজনৈতিক নেতা শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনের শপথ নেন।
অনুষ্ঠানে মার্শা বার্নিকাট আরও বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া উচিত। একই সঙ্গে ভয়ভীতি ও নিপীড়নমূলক বিধিনিষেধ ছাড়াই নির্বাচনী প্রচার ও সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকা জরুরি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।
অ্যালিসন ব্লেক বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবারই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে বুঝতে হবে— শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য।
এইচটি ইমাম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি কেউ অপপ্রচার কিংবা মিথ্যা প্রচারণা না চালায়, অনর্থক গালি না দেয় এবং প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ না করে, তাহলেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ন্যায়বিচার জরুরি। বিএনপি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশও চায়, যেখানে নির্বাচনী প্রচারে কোনো বাধা থাকবে না।