ক্রাইমবার্তা স্পোর্টসডেক্স;
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠা মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন নির্বাচকরা। অন্যদিকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে মরিয়া আশরাফুল। সেই যাত্রায় একধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। ঠাঁই পেলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। বিসিবি হাইপারফরম্যান্স ইউনিট-এইচপির বিপক্ষে ‘এ’ দলের হয়ে খেলবেন টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। এখানে সক্ষমতা প্রমাণ দিতে পারলে জাতীয় দলের খেলার সুযোগও এসে যেতে পারে।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে হবে দুদলের লড়াই। বাংলাদেশ ‘এ’ দল ও বিসিবি হাইপারফরম্যান্স ইউনিট-এইচপির মধ্যকার ৪ দিনের ম্যাচটিকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
জাতীয় লিগের আগে এটিকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন আশরাফুল। ‘ ৫ বছর পর ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে যাচ্ছি। যেকোনো মূল্যে জাতীয় দলে ফিরতে চাই। তবে চাইলেই তো হবে না। এজন্য আগে আমাকে ফিটনেস প্রমাণ করতে হবে। পারফর্ম করেই জাতীয় দলে ফিরতে হবে।’ গণমাধ্যমকে এমনটাই বলছিলেন তিনি।
সেই লক্ষ্যে বার্তাও পেয়ে গেলেন আশরাফুল। বিসিবির বাতিলের খাতায় নয়, বরং নির্বাচকদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আছেন।
এদিকে ৩৪ বছর বয়সী আশরাফুল যে ফুরিয়ে যাননি তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। জাতীয় লিগের আগে বিপ টেস্ট দিয়েছেন তিনি। সেখানে ১১.৪ পয়েন্ট তুলে পেছনে ফেলেছেন বর্তমানে ক্রিকেটের মধ্যে থাকা অনেক তরুণকেও।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের দায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন আশরাফুল। গত আগস্ট মাসে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। এদিকে আশরাফুলকে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়ার জন্য তার ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন: খেলতে চান আশরাফুল, অন্যকথা বললেন প্রধান নির্বাচক
মোহাম্মদ আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে সোমবার। এ দিন থেকে খেলতে পারবেন সব ধরনের ক্রিকেটে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা নেই সহসাই। এখনই জাতীয় দলে সাবেক অধিনায়কের কোনো জায়গা দেখছেন না প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। আশরাফুলের বর্তমান বয়স ৩৪। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতীয় দলে ফেরার লড়াইয়ে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের হাতে সময়টাও সীমিত।
২০১৩ বিপিএলে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকায় ২০১৪ সালে তিন বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ মোট ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আশরাফুলকে। তার আপিলের পর সেই শাস্তি কমে হয় ২ বছরের স্থগিতসহ ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা।
তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৬ সালের অগাস্টে ঘরোয়া ফেরার সুযোগ পান এই ব্যাটসম্যান। তবে স্থগিত নিষেধাজ্ঞার সময়টুকুতেও নিষিদ্ধ ছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এবার মিলছে নিষেধাজ্ঞা থেকে পুরো মুক্তি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে পারবেন। বিবেচিত হতে পারবেন জাতীয় দলেও।
তবে এখনই বিবেচনার সময় দেখছেন না মিনহাজুল। প্রধান নির্বাচকের মতে, ফিটনেসের অবস্থা দেখে প্রক্রিয়াগুলো পার করলে অন্তত বছরখানেক পর আশরাফুলকে নিয়ে ভাবা যায়।
‘সে অনেক ধরেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেই। সুতরাং ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে তাকে খেলতে হবে। ওর ফিটনেস আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য ঠিক আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। সাসপেসশন যাওয়ার পর সব ফরম্যাটে খেলুক, তারপর এক বছর যাওয়ার পর বুঝতে পারব তার ফিটনেস কোন লেভেলে আছে।’
‘এই মুহূর্তে যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এই মুহূর্তে দলে কোনো জায়গা নেই। আমাদের যে ফিটনেস লেভেল আছে, এইচপি থেকে শুরু করে ‘এ’ দল ও জাতীয় দলের ফিটনেসের সাথে সে অ্যাটাচড না। এই জায়গায় আসতে হলে তাকে কিছু সময় দিতে হবে। এই লেভেলটা যদি থাকে, তাহলে চিন্তা করা যাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি না।’
নিষেধাজ্ঞা যখন কাটছে, আশরাফুল পেরিয়ে গেছেন ৩৪। তবে বয়সকে কোনো সমস্যা মনে করছেন না প্রধান নির্বাচক। তিনি চোখ রাখবেন ফর্ম ও ফিটনেসে। জাতীয় দলে এখন তুমুল প্রতিযোগিতা। মিনহাজুল তাই মনে করিয়ে দিলেন, আশরাফুলকে ফিরতে হলে করতে হবে বিশেষ কিছু।
‘বয়স কোন বিষয় না। যদি ফিটনেস আন্তর্জাতিক মানের হয়, তাহলে যে কোন ক্রিকেটারই আসতে পারে। ফিটনেস জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পর্যায়ে আনতে হবে। আর পারফরমেন্স অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো হতে হবে। কারণ সে যে জায়গায় ব্যাট করে, সে জায়গায় অনেক ক্রিকেটার স্থায়ী হয়ে গেছে। জাতীয় দলের জন্য কোনো ক্রিকেটারকে যদি দেখা হয়, তাকে বিশেষ পারফরম্যান্স করেই আসতে হবে।’
আরো পড়ুন : সাড়ে পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি এই দিনটির জন্য’
১৩ আগস্ট সোমবার দিনটি মোহাম্মাদ আশরাফুলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার শেষ দিন। এদিনই শেষ হচ্ছে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরের অপেক্ষার পালা। মঙ্গলবার সকালের সূর্যটা ওঠার সাথে সাথে এই সাবেক অধিনায়কের জন্য শুরু হবে নতুন একটি অধ্যায়। সব নিষেধাজ্ঞার শেষে তার জন্য উন্মুক্ত হবে সব ধরনের ক্রিকেটের দ্বার।
সোমবার বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠছে মোহাম্মদ আশরাফুলের। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক জানান অনেক দিন ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পরের বছর বিপিএল এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনাল আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। সঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি প্যানেল ওই সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করে।
মুক্তির এই দিন সম্পর্কে আশরাফুল বিবিসিকে বলছেন ‘প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি এই দিনটির জন্য, এবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছি।’
গত দুই বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন তিনি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে ক্রিকেট খেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে তার লক্ষ্য এবার জাতীয় দলে ফেরা। আশরাফুল বলেন, ‘যদিও আমি শেষ দুই বছর প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলেছি। পাঁচ বছর আগে থেকেই ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবো। শেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভাল খেলেছি। এবারও ঘরোয়া ক্রিকেটে বাড়তি মনোযোগ থাকবে।’
ফিটনেসের প্রতি বিশেষ নজর
ক্রিকেটে ফেরার পর থেকে মূলত ফিটনেসের দিকে নজর ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন আশরাফুল। সেখানে নিজেকে প্রস্তুত করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া আশরাফুল স্বপ্ন দেখছেন আবার জাতীয় দলে ফেরার। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেই ফিরতে চান জাতীয় দলে। তার লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে আগামী বিশ্বকাপ(২০১৯) খেলা। জানালেন, ‘আমি মূলত ফিটনেসের প্রতি নজর দিচ্ছি দুইটা বছর ধরে। গেল দু মাসে আট থেকে নয় কেজি ওজন কমেছে।’ আশরাফুল তার এই দুঃসময়েও সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য ভক্ত-সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। উল্লেখ বর্তমানে আশরাফুলের বয়স ৩৪ বছর।
জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ কতটা?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান আকরাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘শুধু আশরাফুল কেনো? এখানে সবার সমান সুযোগ রয়েছে।’
আকরাম খান বলেন, এখানে ঘরোয়া ক্রিকেট আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করলে অবশ্যই সুযোগ পাবে আশরাফুল। আশরাফুলের জাতীয় দলে খেলার সময়ের স্মৃতিচারণ করে আকরাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের জার্সিতে ওর এতো সুন্দর কিছু ইনিংস আছে যা আমাদের তার কথা মনে করিয়ে দেয়।’
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
গত দুই মৌসুমে আশরাফুলের সেরা পারফরম্যান্স, ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিস্ট-এ’ তে পাঁচটি সেঞ্চুরি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে করা তার পাঁচ সেঞ্চুরি একটি রেকর্ড। কোন লিস্ট-এ টুর্নামেন্টে পাঁচটি সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার তিনি, বাংলাদেশে প্রথম। ২০১৫-১৬ মৌসুমে মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার আলভারো পিটারসন পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
নিষেধাজ্ঞা উঠার পর ২৩টি লিস্ট-এ ম্যাচে আশরাফুলের গড় ৪৭.৬৩ হলেও তবে এ সময়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সময়ে ১৩ ম্যাচে তার গড় ২১.৮৫। বাংলাদেশের হয়ে ১৭৭টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ৬১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
জাতীয় লিগের আগে এটিকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন আশরাফুল। ‘ ৫ বছর পর ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে যাচ্ছি। যেকোনো মূল্যে জাতীয় দলে ফিরতে চাই। তবে চাইলেই তো হবে না। এজন্য আগে আমাকে ফিটনেস প্রমাণ করতে হবে। পারফর্ম করেই জাতীয় দলে ফিরতে হবে।’ গণমাধ্যমকে এমনটাই বলছিলেন তিনি।
সেই লক্ষ্যে বার্তাও পেয়ে গেলেন আশরাফুল। বিসিবির বাতিলের খাতায় নয়, বরং নির্বাচকদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আছেন।
এদিকে ৩৪ বছর বয়সী আশরাফুল যে ফুরিয়ে যাননি তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। জাতীয় লিগের আগে বিপ টেস্ট দিয়েছেন তিনি। সেখানে ১১.৪ পয়েন্ট তুলে পেছনে ফেলেছেন বর্তমানে ক্রিকেটের মধ্যে থাকা অনেক তরুণকেও।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের দায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন আশরাফুল। গত আগস্ট মাসে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। এদিকে আশরাফুলকে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়ার জন্য তার ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।