সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য ছাড় দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি; মহানগর নাট্যমঞ্চে কাল প্রথম সমাবেশ

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃঅবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই ঐক্য এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়েই যাচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে উঠবেন ডান-বামসহ বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। সংবিধান প্রণেতা, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এই জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম সূত্রে জানা গেছে, এ সমাবেশ থেকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের ঘোষণা আসতে পারে। একই সাথে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন সিনিয়র রাজনীতিকেরা। বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরু হবে।
দীর্ঘ দিন ধরে গণফোরাম সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। শুরু থেকে নানা কারণে বিভিন্ন মহলে এটা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় থাকলেও এখন তা নেই। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের প থেকে যৌথভাবে ৯ ল্য অর্জনে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে বিএনপিসহ আরো কিছু রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক জাতীয় ঐক্যমঞ্চ তৈরিতে সমঝোতা হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। অভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল। ফলে দেশব্যাপী এখন আলোচনার প্রধান বিষয় ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য।
মাসখানেক আগে যুক্তফ্রন্ট (বিকল্পধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য) এবং গণফোরাম জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে একমত হওয়ার পর থেকেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। পর্দার আড়ালে বিএনপির সাথেও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে এক ধরনের সমঝোতায় পৌঁছান ড. কামাল হোসেন। বাম ঘরানার আরো বেশ কিছু দল জাতীয় ঐক্যে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৃহত্তর ঐক্য গঠনে জড়িত অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সব দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে অভিন্ন দাবি নিয়ে এখন রাজপথে নামতে চায় দলটি।
যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া যৌথভাবে তাদের যে দাবি ঘোষণা করেছে, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা চাননি। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। ঘোষণার আগে এ নিয়ে তাদের সাথে বিএনপির কথা হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শেখ হাসিনার সরকার মতায় থাকলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব নয়। যেহেতু সবার সুর একই, তাই বিএনপির প থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা না চাইলেও জাতীয় ঐক্য গড়তে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে যুক্তফ্রন্ট বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কোনো বাধাও থাকবে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা কয়েকদিনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে। জানা গেছে, এই ঐক্যের নেতা কে হবেন তা নিয়েও দলটি আলোচনা করেছে। যুক্তফ্রন্টে থাকা তিনটি দল এবং গণফোরামসহ অন্যান্য দল সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনীত করলে বিএনপির তাতে আপত্তি থাকবে না।
ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। আর যেখানে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে, সেখানে দলীয় নেতৃত্ব থাকবে। কোন দল থেকে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দল ঠিক করবে। এটি একজন বা দু’জন করে হতে পারে।
আগামীকালের জাতীয় সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার বৈঠক থেকে একটি রূপরেখা তৈরি হতে পারে। ঐক্যপ্রক্রিয়ার একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির চার সদস্য হলেনÑ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও নাগরিক ঐক্যের নেতা জাহিদুর রহমান।
ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে বিরাজমান অবস্থার পরিবর্তনের পে জনগণের মধ্যে একটি ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। এই ঐকমত্যকে একটি কার্যকর ল্েযর দিকে নিয়ে যাওয়াই সমাবেশের মূল ফোকাস। সমাবেশ থেকে কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা আছে।
এ দিকে সমাবেশের আগে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সমাবেশ থেকে একটি যৌথ বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাবেশে আসতে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সমাবেশ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সমাবেশে চমক থাকবে। তবে নতুন কোনো দফা দেয়া হবে না।’
বিএনপির ৭ দফা : নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সাত দফা দাবি চূড়ান্ত করেছে।
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই- ক) জাতীয় সংসদ বাতিল, খ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ). নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।
৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাসাপেে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা।
৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।