অভ্যন্তরীন কোন্দলে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিহত, চেয়ারম্যান আটক

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: মোড়েলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ১০ জন।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিমাবাদ ডিগ্রী কলেজের করণিক মো. আনছার আলী দিহিদার(৫৫) ও আওয়ামী লীগ কর্মী শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মো. শুকুর আলী শেখ(৩৫)। আহতদের মধ্যে বাবুল শেখ(৩২) ও মঞ্জু বেগমকে (৪৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরকে আটক করা হয়েছে এবং তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটিও জব্দ করা হয়েছে বলে বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় জানিয়েছেন।স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের লোকজন প্রথমে বাবুল ও শুকুরকে বাজার থেকে ধরে কলেজ মাঠে নিয়ে মারপিট করে। পরে পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে তাদেরকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।মোড়েলগঞ্জ থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম পূর্বাঞ্চলকে বলেন, পুলিশ দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আনছার আলী, শুকুর ও বাবুলকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজুজ্জামান শুকুরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার।তার স্ত্রী মঞ্জু বেগম এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আনছার আলী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন, বেলা ৩টার দিকে চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারিরা আনছার আলীকে ধরে পরিষদে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। মঞ্জু বেগমকেও পিটিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে।
হামলায় আহত দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ সাংবাদিকদের বলেন, দৈবজ্ঞহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলের সাথে স্থানীয়ভাবে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান ফকির শহীদুল ইসলামের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা বাজার থেকে আমাদের জোর করে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদের সবাইকে বোরকা পরায়। পরে আমাদের সবাইকে পরিষদ থেকে বাইরে নিয়ে এসে চেয়ারম্যান শহীদুল চিৎকার করে বলতে থাকে আমরা তাকে হত্যা করতে এসেছি। এসময় তার ক্যাডার বাহিনী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।
জানা গেছে, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষ মারমুখি অবস্থানে থাকে। এ বিরোধের জের ধরে চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে গতকাল আনছার আলী দিহিদারসহ তার প্রতিপক্ষের ৩ জনকে মারপিট করা হয়।ঘটনার পর থেকে দৈবজ্ঞহাটি বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে হামলায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন। এছাড়াও তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।