ক্রাইমর্বাতা রিপোট:কোটা চাই আন্দোলন করলে পুনরায় কোটা বলবদ করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা চাই আন্দোলন করলে ভেবে দেখা হবে। আন্দোলন ছাড়া দিব না।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল চারটায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল বক্তব্য উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রথম প্রশ্ন করেন দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আজ (বুধবার)সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে পুরোপুরি বাতিল করাটা কি একটু বেশি হয়ে গেল কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে, তখন ছাত্রছাত্রীদের ডেকে আমরা কথা কলেছি। একজন আমাকে বলেছে, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধার নাতি, কোটা চাই না। আরেক মেয়ে বলেছে, আমরা নারী কোটা চাই না। আমরা যোগ্যতা দিয়ে লড়াই করে চাকুরী নিব, কোটা চাই না। তাদের এই আত্মবিশ্বাসকে আমি স্বাগত জানাই। এই কারণেই আমি সংস্কার বাদ দিয়ে কোটা বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছি। এখন যদি আবার কেউ মনে করে কোটা প্রয়োজন। তাহলে কোটা চাই আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করলে ভেবে দেখা হবে। আন্দোলন ছাড়া দিব না।’
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে ইভিএম ব্যাবহার করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলে বলা হয়, আমি ইভিএমের পক্ষে। এই পদ্ধতি চালু হলে মোবাইলের মাধ্যমেও অনেকে ভোট দিতে পারবেন। এটা ভোট দেয়ার একটি আধুনিক পদ্ধতি।
আওয়ামী লীগের বাইরে বড় জোট গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ভোট মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। এক হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোট, দ্বিতীয়ত হচ্ছে অ্যান্টি আওয়ামী লীগের ভোট। এখন আওয়ামী লীগের বাইরের ভোট গুলো নিয়ে যদি কেউ জোট করে তাহলে আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব। তিনি বলেন, আমার এই জোট নিয়ে কোন ভয় নেই। ভয় থাকে তার যার হারাবার কিছু থাকে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি জনগণের জন্য কাজ করি। আর ক্ষমতায় তো অনেকদিন ছিলাম। আমার কাছে ক্ষমতা থাকে লক্ষী যায় বালাই।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্কে তাঁর সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সফরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।
লিখিত বক্তব্যের পর তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মিথ্যা কথা লেখেন না তাদের এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে লেখা হয়, মানহানি করা হয় তাদের বিষয়টি ভাবা হয় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন মিথ্যে সংবাদ যার বিরুদ্ধে করা হয় তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখার পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা লেখে তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। তার কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু যার ক্ষতি হলো তার কী হবে। আমাদের উদ্বেগ কে দেখবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও যদি অপরাধী মন না থাকে তবে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এর আগে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি (নিরাপত্তা) প্রত্যেক দেশে বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেখানে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, পর্ণ এসব ছড়াচ্ছে। আমরা সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি।’
নিউইয়র্কে ছয় দিনের সফরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গেও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি এ সংকট সামাল দিয়ে দূরদর্শী ভূমিকার জন্য নিউইয়র্কে দুটো সম্মাননা পান শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে সফরের দ্বিতীয় দিন ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শরণার্থী সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শেখ হাসিনা এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
সাধারণ পরিষদে ভাষণের আগে ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ‘পূর্ণ সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতার’ প্রতিশ্রুতি দেন।
ঢাকা থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর রওনা হয়ে দুদিন লন্ডনে কাটিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। আর গত সোমবার তিনি দেশে ফেরেন।
২০ দলীয় জোটের সমাবেশে মানুষ চাইলে তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ করে দিতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যত খুশি বক্তব্য দিক। আরও দু-একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই।’
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণভবনে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০ দলীয় জোট সম্প্রসারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করবো। কারণ, আমরা জানি বাংলাদেশে ভোট আছে দুপক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এখন অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোটগুলোকে তো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়া তো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কিনা বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা বা সেই সাহস তাদের আছে কিনা, সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।’