ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে।
শনিবার বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেয়ার জন্য বের করা হয়। বেলা পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতালে পৌঁছান খালেদা জিয়া।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিএসএমএমইউতে দুটি কেবিন দুপুর থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
খালেদা জিয়া ৬১২ নম্বর কেবিনে থাকলেও তার জন্য পাশের ৬১১ নম্বর কেবিনটিও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওই কক্ষে তার সহকারী বা কারা নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতে পারবেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার আগে দুপুরে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাসপাতালে আনা হয়।
বিকাল ৩ টার পর খালেদাকে নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশের একটি গাড়ি। এর সামনে পেছনে ছিল পুলিশ, র্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি। একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল গাড়িবহরে।
খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করার সময় রাজধানীর কেন্দ্রীয় কারাগার, পুরান ঢাকা, আলিয়া মাদরাসা চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় কয়েকস্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
এর আগে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জানিয়েছিলেন, আজই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হবে।
বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারুন অর রশীদ একই কথা জানিয়েছিলেন। এর আগে গত এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একবার কারাগার থেকে তাকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়েছিল।
এরপর তার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের দাবি উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিএসএমএমইউতে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
কারাগার থেকে এ গাড়িতেই বের হন বেগম খালেদা জিয়া।
তবে বিএনপি যেমন এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না, তেমনি খালেদা জিয়াও সেখানে যেতে অসম্মতি দেখিয়েছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশও দেয়।
খালেদার চিকিৎসায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার যে মেডিকেল গঠন করে দিয়েছিল, তার তিন সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনকে সেখানে দায়িত্ব দিতে বলেছেন আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন।
আর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দেবে সরকার।
তবে এই তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা প্রাক্তন সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।
আদেশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তার পছন্দের ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনিকোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া এখন কারাগারে বন্দি। ৫ বছরের দণ্ড নিয়ে তিনি নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।