ক্রাইমবার্তা রিপোট:সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘কাল্পনিক’ মামলার বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
শুনানিতে এসব মামলায় মৃত ব্যক্তি কিংবা সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের আসামি করায় পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, ‘এ ধরনের মামলায় (কাল্পনিক) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের (সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী) বিরুদ্ধে এমন (কাল্পনিক) মামলা হলে জনগণের কাছে কী মেসেজ যাবে?
সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন তোলেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুব্রত চৌধুরী ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এ কে খান।
রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়।
সোমবার শুনানির শুরুতে কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলেন, এ ধরনের মামলায় (কাল্পনিক) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো লোকদের বিরুদ্ধে এমন মামলা হলে জনগণের কাছে কী মেসেজ যাবে?
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল আদালতকে বলেন, উনি (খন্দকার মাহবুব হোসেন) তো শুধু আইনজীবীই নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদধারী।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এটা কি বললেন? তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এটা তো আইনে নেই। আগে আইনজীবীরাই বেশি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।’
এরপর এ মামলায় ড. কামাল হোসেন শুনানি করেন। ড. কামাল হোসেন আদালতকে প্রশ্ন রেখে বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা কি ঢিল বা ককটেল ছুড়তে পারেন? এসব করে জনগণের কাছে পুলিশের কী ধরনের মেসেজ যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যেসব গায়েবি মামলা হয়েছে সেগুলোর অভিযোগ একই, গৎবাঁধা।
তিনি বলেন, মামলাগুলো আমি দেখিছি। মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন কাল্পনিক। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি যদি নির্দেশনা দিতেন তাহলে এ ধরনের মামলা হতো না। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
শুনানির শেষপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাইলে আদালত মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি করেন এবং ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শেষে আদেশ দেবেন বলে জানিয়ে দেন আদালত। পরে ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়।
১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে একই জায়গায় পরপর তিন থেকে চার দিনে ৪-৫টি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে।
বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ককটেল বিস্ফোরণের আসামি। তার মতো ব্যক্তি সন্ধ্যার পরে গিয়ে ককটেল ছুড়তে পারেন এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? ২০০৭ সালে মারা গেছেন, কিংবা চলতি বছর হজে ছিলেন, বিদেশে থাকেন- এমন লোকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।