ক্রাইমবার্তা ররিপোটঃ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ ‘হাই প্রোফাইল’ ১৮ আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের মধ্যে নয়জন যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। ভারতে কারাবন্দি রয়েছে দুইজন। অন্য সাত আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আর অন্যদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী ওই জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি নিহত হন। তবে ওই হামলার প্রধান টার্গেট ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন তিনি।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি হয়েছে অন্য মামলায়। বাকি আসামিদের মধ্যে ৩১ জন কারাবন্দি।
পলাতক আসামিদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে, বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদ ও হরকাতুল জিহাদ নেতা জাহাঙ্গীর বদর সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তৎকালীন ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে, আরেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায় রয়েছে। এছাড়া মাওলানা তাজউদ্দিন ও তার ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু দক্ষিণ আফ্রিকায়, পরিবহন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। আর ভারতের কারাগারে বন্দি আছে দুই জঙ্গি— আনিসুল ইসলাম মোরসালিন ও মুহিবুল ইসলাম মুত্তাকিন।
অন্য আসামিদের মধ্যে হরকাতুল জিহাদ নেতা শফিকুর রহমান, আব্দুল হাই, দেলোয়ার হোসেন জোবায়ের ওরফে লিটন, খলিলুর রহমান ও ইকবাল এবং পুলিশ কর্মকর্তা খান সাঈদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান কোথায় আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ৩১ আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো ঢাকার বকশী বাজারের অস্থায়ী আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়েছে। তবে এ মামলার বিচার কাজ চলছে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এ। রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হলে তাদের আদালতে নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে তাদের ঢাকায় আনা হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বকশীবাজার আদালতের হাজতে আনা হয়। আসামিদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুও রয়েছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২ থেকে আনা হয়েছে ১৪ আসামিকে। আর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে আনা হয়েছে ১৭ জন আসামিকে।
কারাবন্দি ৩১ আসামিরা হলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, পুলিশের সাবেক আইজি শহিদুল হক, খোদা বক্স ও আশরাফুল হুদা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশেনের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফ, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তার মুন্সী আতিকুর রহমান, আব্দুর রশীদ ও রুহুল আমিন, পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুল মজিদ ওরফে ইউসুফ ভাট ওরফে আব্দুল মাজেদ ভাট, হরকাতুল জিহাদ ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতা মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার আবু জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার।