ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হয়ে গেছে, এখন আলোচনার কী আছে : মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী: আসছে নতুন কমিশন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ আইনতো জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গেছে। সংসদে পাস হওয়ার পর এখন আর কিছু করার নেই। এখনই এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনারই বা কী আছে? এ আইন প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তো এ আইন আরো কড়া। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

বৈঠকের নিয়মিত এজেন্ডা সম্প্রচার আইন-২০১৮ নিয়ে আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রসঙ্গটি তোলেন। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের আপত্তির কথা উল্লেখ করে আলোচনা শুরু করলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস করেছি। কিন্তু এ আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন চেয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এরই অংশ সম্পাদক পরিষদ হিসেবে আজকে (সোমবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গটি তোলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো পাস হয়ে গেছে, এখন আর কী করার আছে?

এ সময় আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বলেন, এডিটর কাউন্সিলসহ সাংবাদিক নেতারা এসেছিলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আলোচনার কথা বলেছিলাম। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে পাস হয়ে যাওয়ার পর এখন আর কী কথা বলবেন, কী আলোচনা করবেন? তিনি বলেন, এসব সম্পাদক তো বিভিন্ন সময় ভুল নিউজ ছেপে সেটি তাদের নয়- একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নিউজ বলে দুঃখ প্রকাশও করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন? ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো বাধা হবে না। যুক্তরাজ্যের এ সংশ্লিষ্ট যে আইন রয়েছে সেটা আরো কড়া। এ আইন কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হয়নি। যারা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া অবস্থানে থাকবে। যারা সত্য অনুসন্ধানী তাদের তো কোনো সমস্যা না। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার, দেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাদের জন্য এই আইন।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এডিটর কাউন্সিলের মানবন্ধনের বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সম্পাদক তো সবসময় আমার বিরুদ্ধে লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে। পদ্মাসেতুর অর্থায়ন যাতে না হয় সে জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গেও তিনি বিশ্বব্যাংকে গিয়ে কথা বলেছিলেন।

 

বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে ‘সম্প্রচার আইন, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এটি একটি নতুন আইন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই আইনটি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে সাত সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।

এ কমিশন সম্প্রচার যন্ত্রপাতির লাইসেন্স দেবে। অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খসড়া আইনে সম্প্রচার কমিশন গঠনের পাশাপাশি কমিশনারদের নিয়োগ, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ, অপসারণ, পদপর্যাদা, পারিশ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া আছে বলে জানান তিনি।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।